ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

সকালের ৫ ভুল অভ্যাস, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর

প্রকাশিত: ২০:৫০, ১০ জুলাই ২০২৫

সকালের ৫ ভুল অভ্যাস, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর

ছবি: সংগৃহীত

সকাল হলো দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। একটি ভালো সকাল যেমন সারাদিনের জন্য ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে, তেমনি কিছু ভুল অভ্যাস সারা দিনের মনোভাব ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালে মোবাইল ফোনে চোখ খোলা, নাস্তা বাদ দেওয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করার মতো ছোট ছোট অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে দুশ্চিন্তা, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি এবং মানসিক ক্লান্তির কারণ হতে পারে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, কিছু সাধারণ অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমেই সকালের সময়টা হতে পারে আরো স্বাস্থ্যকর ও মানসিকভাবে প্রশান্তিময়। নিচে তুলে ধরা হলো এমনই ৫টি অভ্যাস যা এড়িয়ে চলা উচিত:

১. ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল ফোনে চোখ

আজকাল অনেকেই ঘুম ভাঙার পর প্রথমেই মোবাইল ফোন হাতে নেন। এই অভ্যাসটি চোখ ও মস্তিষ্ককে সরাসরি বিশ্রাম অবস্থান থেকে চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। সকালের আলো না পেয়ে মোবাইলের তীব্র আলো এবং নেতিবাচক খবর মনকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে।

কেন ক্ষতিকর?

আপনি নিজের ভাবনার বদলে বাইরের জগতে মনোযোগ দেন। এতে মন বিচলিত, বিভ্রান্ত বা হতাশ হতে পারে।

সমাধান:

দিনের প্রথম ৩০ থেকে ৬০ মিনিট ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ মোডে রাখুন ফোন। এ সময় ধ্যান, স্ট্রেচিং, লেখালেখি বা নীরবভাবে কফি পান করতে পারেন।

২. নাস্তা বাদ দেওয়া বা অস্বাস্থ্যকর নাস্তা

অনেকে ব্যস্ততার কারণে নাস্তা না করেই বের হয়ে যান, আবার কেউ কেউ চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে দিন শুরু করেন। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায় এবং মনোসংযোগ ও মেজাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

কেন ক্ষতিকর?

প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বির মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পেলে মস্তিষ্ক চাপ সামলাতে পারে না।

সমাধান:

উচ্চ প্রোটিন, ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত নাস্তা করুন। উদাহরণস্বরূপ: ডিম ও হোলগ্রেইন টোস্ট, ওটমিল, ফলমূল ও বাদাম, অথবা প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার।

৩. নির্দিষ্ট রুটিনের অভাব

রাতে দেরিতে ঘুমানো এবং সকালে দেরিতে ওঠা সারা দিনের সময় ব্যবস্থাকে এলোমেলো করে দিতে পারে। এর ফলে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বাড়ে এবং মস্তিষ্ক সাড়া দেওয়ার অবস্থায় থাকে।

কেন ক্ষতিকর?

দিনের শুরুতেই আপনি চাপে পড়ে যান, ফলে বিরক্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

সমাধান:

২০-৩০ মিনিট আগে অ্যালার্ম সেট করুন। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে প্রস্তুত হোন। সকালে ছোট হাঁটা বা ধীর নিঃশ্বাসের সময় রাখুন।

৪. নেতিবাচক আত্ম-ভাবনা

সকালে উঠে ‘আজ খুব খারাপ যাবে’, ‘আমি পারব না’, ‘কাজটা ভালো লাগে না’— এমন চিন্তা করলে সারাদিনের মনোভাব নষ্ট হয়ে যায়।

কেন ক্ষতিকর?

নেতিবাচক চিন্তা উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং হতাশার জন্ম দেয়।

সমাধান:

নিজের অর্জনের কথা মনে করুন। প্রতিদিন সকালে তিনটি বিষয় লিখে ফেলুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ।

৫. শরীরচর্চা ও সূর্যের আলো এড়িয়ে যাওয়া

সকালবেলা শরীর না চালানো বা সূর্যের আলো না পাওয়া সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যার প্রভাব পড়ে মেজাজ, ঘুম এবং মানসিক স্বাস্থ্যে।

কেন ক্ষতিকর?

ফিটনেস ও রোদ ছাড়া দিন শুরু করলে বিষণ্ণতা ও অলসতা বাড়ে, বিশেষত শীতকালে।

সমাধান:

৫-১০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন ও রোদে কিছুক্ষণ হাঁটুন। এতে মানসিক চাপ কমবে ও মনোযোগ বাড়বে।

সকালের কিছু ছোট অভ্যাসই আপনার মানসিক সুস্থতা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। মোবাইল স্ক্রলিং, নেতিবাচক চিন্তা বা নাস্তা না খাওয়ার মতো বিষয়গুলো ধীরে ধীরে মানসিক শক্তি নষ্ট করে দেয়। তবে এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন সম্ভব এবং এতে মানসিক প্রশান্তি ও সৃজনশীলতা বহুগুণে বাড়ে।

 

সূত্র: https://www.onlymyhealth.com/5-morning-habits-to-avoid-for-better-mental-health-12977834703

রাকিব

×