
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় বৃক্ষমেলায় বৃক্ষপ্রেমীদের পদচারণা
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে চলছে এখন বর্ষাকাল। সেই সুবাদে প্রায়শই কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে নীলাকাশ। অন্তরীক্ষে ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘের ভেলা। ভর দুপুরেও বিরাজ করছে সন্ধ্যার আবহ। কখনো আকাশ গড়িয়ে অঝোরে ঝরছে বারিধারা। আবার কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে কেটে যাচ্ছে সকাল থেকে বিকেল পেরুনো দিনরাত্রি। ঝরে পড়া সেই বৃষ্টির পানিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে মাটির ঊর্বরতা। সে কারণেই জলের গল্পময় এই বর্ষাকাল বৃক্ষ রোপণের জন্য উৎকৃষ্ট মৌসুম।
এই সময়টাকে ফুল ও ফুল থেকে ঔষধি চারা রোপণের জন্য বেছে নেন অনেকেই। পরিবেশ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসা এসব বৃক্ষপ্রেমীদের জন্য রাজধানীতে চলছে চমৎকার এক আয়োজন। রীতিমতো গাছের মেলা বসেছে বায়ান্ন বাজার তিপান্ন গলির এই শহরে।
গাছে গাছে ঝুলে আছে রঙ্গন, মাধবীলতা, জারুলসহ লাল-নীল-হলুদ রকমারি রংয়ের বাহারি গড়নের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল। শুধু কি তাই! ফলের গাছগুলোর ছড়ানো ডালে উঁকি দিচ্ছে আম, জাম, কাঁঠাল, লটকন, ডালিম, পেয়ারাসহ দেশ-বিদেশের নানা রসালো ফল। হাতছানি দিচ্ছে ক্যাকটাস থেকে পাতায় পাতায় নকশার খেলা করা বিচিত্র প্রজাতির পাতা বাহার। এভাবেই শহর ঢাকায় সবুজের উৎসবে পরিণত হয়েছে আগারওগাঁওয়ের পুরানো বাণিজ্যমেলা মাঠে চলমান জাতীয় বৃক্ষমেলা।
বিচিত্র প্রজাতির গাছের সমারোহে বৃক্ষমেলার বিস্তৃত প্রান্তরটি রূপ নিয়েছে প্রকৃতির ক্যানভাসে। বনায়নে উৎসাহী মানুষেরা নিত্যদিন ভিড় জমাচ্ছেন লতা-পাতা এবং ফুল-ফলে শোভিত নিসর্গনির্ভর এই চিত্রপটে। এই মেলায় অংশ নিচ্ছে ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্তের ১৩৩টি নার্সারি। সেসব স্টলে পরিচিত গাছের সমান্তরালে মিলছে দুষ্প্রাপ্য অনেক বৃক্ষ। পাঁচ টাকা মূল্যের চারাগাছ থেকে মিলছে হাজার ছাপিয়ে লাখ টাকা মূল্যের পরিণত বয়সী বৃক্ষ। প্রতিদিন বাগান বিলাসীরা সংগ্রহ করছেন এসব গাছ। মেলার তথ্য কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, ২৫ জুন শুরু হওয়া মেলায় ৮ জুলাই পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার গাছ।
এই মেলায় ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে বরিশাল নার্সারিতে। স্টলটিতে প্রচলিত নানা বৃক্ষে সঙ্গে রয়েছে দুষ্প্রাপ্য ও দুর্লভ কিছু গাছ। এখানে রয়েছে তেমনই এক ফুল গাছ কাইজেলিয়া। মেলায় অংশ নিয়ে ২৮ বার পুরস্কারপ্রাপ্ত স্টলটির ব্যবস্থাপক সেলিম হোসেন জানান, রংপুরের কারমাইকেল কলেজ ছাড়া দেশের আর কোথায় এই গাছের সন্ধান মেলে না। শুধু তাই নয়, গোটা পৃথিবীতেই বিপন্ন প্রায় এই বৃক্ষ।
এই নার্সারিতে এমন দুষ্প্রাপ্য গাছের মধ্যে রয়েছে তালি পাম। এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রজাতির একটি গাছ থাকলেও সেটি মারা গেছে। অপ্রচলিত গাছের মধ্যে এখানে আরো আছে কালো ও সাদা নিমগাছ। কালো নিমগাছের পাতা থেকে কাণ্ড পুরোটা হয় কালো রঙের। একইভাবে সাদা নিম গাছের পাতাসহ সবটাই হয় সাদা বর্ণের। এছাড়া এখানে দেখা মেলে রাজ অশোক, কনকসুধা, ধুপ, রিঠা, নীলাঞ্জন মনডোরা গ্র্যান্ডি ফ্লোরাসহ বিভিন্ন অপ্রচলিত ও বিরল প্রজাতির বৃক্ষ।
এখানে লতাপাতায় ও পরিপক্ব ডালে সুবিন্যস্ত একটি পরিণত বয়সী বনসাঁই গাছের দাম হাকা হচ্ছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। এর মাঝে দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় বিশাল আকৃতির লাল রঙের অনেকগুলো আম ঝুলে থাকা গাছটিতে। চ্যাংমাই নামের থাইল্যান্ডের এই আম গাছটির মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টাকা।
মেলায় দামি বৃক্ষের মধ্যে সর্বোচ্চ দাম হাঁকানো হয়েছে নাগাচূড়া গাছের। উইনার নার্সারিতে থাকা উগান্ডা থেকে আমদানি আমব্রেলা ট্রিখ্যাত গাছটির মূল্য ধরা হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা। এদিকে মেলা দর্শনার্থীদের সবচেয়ে কাছে আম গাছগুলো। দুই থেকে তিনশ’ টাকায় চারা মিললেও ফলসহ গাছের দাম বেশ চড়া।
থাই ব্যানানা, ব্রুনাই কিং, আমেরিকার রেড পালমার, জাপানের মিয়াজাকিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ড্রামে বসানো এসব আমের মূল ধরা হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। পরিণত বয়সী জাম গাছের দাম হাঁকছে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ফলসহ খেজুর গাছের দাম চাওয়া হচ্ছে লাখ টাকার বেশি।
আগামী ২৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই বৃক্ষমেলা। সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
প্যানেল মজি