ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাত খুনের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৪ জুলাই ২০১৭

সাত খুনের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুন মামলায় আপীল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আজ আসামি পক্ষের আইনজীবী শুনানি করবেন। শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আর্জি জানিয়েছেন। রবিবার বিচারপতি ভবানী প্রসাদসিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। শুনানিতে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, এই হত্যাকা- ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। তাই মামলার রায়ের মধ্য দিয়ে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে আসে। এ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, এই হত্যাকা-ের নাটের গুরু নূর হোসেন। তাই তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হতে হবে। একই সঙ্গে অন্যদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। তিনি এই হত্যাকা-ের রায়ে দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রত্যাশা করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন। সঙ্গে ছিলেন সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ। এর আগে গত ১৭ মে আলোচিত এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপীল শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ২২ মে সাত খুন মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপীলের শুনানি শুরু হয়। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত নূর হোসেনসহ আসামিদের নিয়মিত ও জেল আপীল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। গত ৩০ ও ৩১ জানুয়ারি মৃত্যুদ-প্রাপ্ত নূর হোসেন, তারেক সাঈদসহ আসামিরা খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপীল দায়ের করেন। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সাত খুন মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদ-াদেশ দেন আদালত। বাকি ৯ আসামির সবাইকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন। সাজাপ্রাপ্ত ২৫ জন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনী থেকে প্রেষণে র‌্যাবে কর্মরত ছিলেন। অপরাধের সময় তারা সবাই র‌্যাব-১১ তে কর্মরত ছিলেন। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন সেনাবাহিনীর, ২ জন নৌবাহিনীর, ৩ জন বিজিবির, ৭ জন পুলিশ ও ২ জন আনসার সদস্য। সাত খুনের মামলার পর তাদের নিজ নিজ বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন, র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক দুই কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেন, লে. কমান্ডার এম মাসুদ রানা, হাবিলদার মোঃ এমদাদুল হক, এ বি মোঃ আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, ল্যান্স নায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহি আবু তৈয়ব আলী, কনস্টেবল মোঃ শিহাব উদ্দিন, এসআই পুর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আসাদুজ্জামান নুর, সৈনিক আবদুল আলিম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন, সৈনিক তাজুল ইসলাম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, নূর হোসেনের সহযোগী আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, রহম আলী, আবুল বাশার, মোর্তুজা জামান চার্চিল, সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান ও জামাল সর্দার। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্যরা হলেন- নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মোঃ ইব্রাহীম। ঘটনার একদিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।
×