ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়

সহায়ক সরকারের সঙ্গে সঙ্গে সেনা মোতায়েনও চান খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৯ জুন ২০১৭

সহায়ক সরকারের সঙ্গে সঙ্গে সেনা মোতায়েনও চান খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সহায়ক সরকারের অধীনে করার পাশাপাশি সেনা মোতায়ন করতে হবে। ঈদের দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিদেশী কূটনীতিক ও দেশের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন। খালেদা জিয়া বলেন, ১০ বছরে আওয়ামী লীগ প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকারে কাছ থেকে জনগণ আর ভাল কিছু আশা করে না। দেশের মানুষও পরিবর্তন চায়। দেশে আয় বৈষম্য বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক শ্রেণীর মানুষ চুরি-চামারি এবং লুটপাট করে বড়লোক হচ্ছে। আর আরেক শ্রেণীর মানুষ গরিব হচ্ছে। খালেদা জিয়া বলেন, মুসলমানদের জন্য ঈদ অত্যন্ত আনন্দের। দেশের মানুষ এবার আনন্দ নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। কারণ, এবার ঈদে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল না। কারণ সারাদেশে দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর শোক, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, আকাশচুম্বি চালের দাম মানুষের ঈদের আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে। তিনি বলেন, রমজান মাসে চালের দাম ছিল সর্বকালের রেকর্ড পরিমাণ। নিম্নমানের চালের দামও এত বেশি যে সাধারণ গরিব মানুষ দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারেনি। এমনিভাবে প্রতিটি জিনিসের দাম অতিরিক্ত বেশি। তারপর আবার বিদ্যুত-গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় ঈদ কতটুকু আনন্দ দিতে পারে? খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে ধংস করে দিয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, দুর্নীতি করে শেষ করে দিয়েছে। মানুষের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। মানুষ সেজন্য এই আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চায়, মানুষ পরিবর্তন চায়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনীর অত্যাচারের নমুনা আমরা অতীতে দেখেছি। পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দেখতে আমরা আমাদের মহাসচিবকে পাঠিয়েছিলাম, সেখানে তার উপরে আক্রমণ করেছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে আওয়ামী লীগের গু-াবাহিনী। তারপরও কীভাবে আমরা আশা করতে পারি যে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার অধীনে ভাল নির্বাচন হতে পারে? সেটা সম্ভব নয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, ভাল নির্বাচন করতে একটি দল নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেই শুধু নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকতে পারবে। সেখানে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করতে হবে। আমরা মনে করি, সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলে জনগণ ভোট কেন্দ্রে আসতে পারবেন, নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবেন এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ১০ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, লুটপাট করেছেন, অনেক মানুষ হত্যা করেছেন, অনেক অপরাধ করেছেন। এই অপরাধের শাস্তি হয়ত আল্লার কাছ থেকে আপনারা একদিন পাবেন। এখন বলি, আল্লার নামে দেশটা ও মানুষদের বাঁচানোর জন্য ক্ষমতা থেকে বিদায় নিন। নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন। নিরপেক্ষ নির্বাচনে আপনারা ক্ষমতায় আবার আসলে বলার কিছু নেই। খালেদা জিয়া বলেন, একটা শ্রেণী আছে, যারা অনেক টাকার মালিক, তারা এবার ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর, কলকাতা ও দিল্লীসহ বিভিন্ন জায়গায় শপিং করেছেন। আর সাধারণ মানুষ হয়ত ঈদের কাপড়-চোপড়ও কিনতে পারেনি। দেশের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। এক শ্রেণীর মানুষ অতিরিক্ত বড়লোক হচ্ছে নানারকম চুরি-চামারি ও লুটপাট করে। আরেক শ্রেণীর মানুষ গরিব হচ্ছে। দেশে গরিবের সংখ্যা ইতোমধ্যে বেড়ে গেছে, কর্মসংস্থানের সুযোগও কম। সামগ্রিকভাবে মানুষের হাতে এখন অর্থ নেই। সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে অভিযোগ করে বিএনপি খালেদা জিয়া বলেন, এবার অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে, বেশ ক’জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেদিকে সরকারের কোন দৃষ্টি নেই। অথচ নানাভাবে বলা হয় যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, দেশের এই হয়েছে, সেই হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতও দলীয়করণ হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, এবারের বাজেট হলো সবচেয়ে খারাপ বাজেট। সরকারী দলের নেতাকর্মীরাই তাদের অর্থমন্ত্রীকে কীভাবে গালাগালি করেছে তা সবাই দেখেছেন। অর্থমন্ত্রী বয়স্ক মানুষ, এই বাজেটের জন্য কী শুধু অর্থমন্ত্রী দায়ী? তাকে যেভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেভাবে হয়েছে। আদেশ-নির্দেশ সবকিছুই তো একজায়গা থেকে হয়। বাজেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ এবং ব্যাংকের আমানতের ওপর অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার এ্যালিসন ব্লেক, ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদনসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, দলের বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক সদরুল আমিন প্রমুখ। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়া শেরেবাংলানগরে জিয়াউর রহমানের মাজার এবং বনানীতে ছোট ছেলে কোকোর কবর জিয়ারত করেন।
×