ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও আনন্দ নগরী ঢাকা

পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৯ জুন ২০১৭

পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রে উৎসবের আমেজ

মোরসালিন মিজান ॥ শহর ঢাকার সর্বত্রই হাসি রাশি আনন্দ। ঈদের তিন দিন গত হয়েছে। এর পরও ফুরোয়নি উৎসব। পরিবার-পরিজন বন্ধুবান্ধব মিলে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন নগরবাসী। প্রথমদিনটি ঘরোয়া পরিবেশে নিজেদের মতো করে উদযাপন করেছেন। এখন ফাঁকা ঢাকায় ঘুরে বেড়ানোর পালা। পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। শিশুপার্ক চিড়িয়াখানা জাতীয় জাদুঘরের মতো প্রতিষ্ঠান খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। সবক’টিতেই দর্শনার্থীদের আনন্দঘন উপস্থিতি। অনেকে আবার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছেন ঢাকার আশপাশে অবস্থিত থিমপার্কগুলোতে। আকর্ষণীয় রাইডে চড়া, সাঁতার কাটা, নাচ গানÑ সব মিলিয়ে উপভোগ করার মতো বৈকি! ঈদে ছোট ছোট বাচ্চাদের আনন্দটাই বেশি চোখে পড়ে। এখন বাবা মায়ের হাত ধরে গোটা শহর ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। কত যে ঘোরাঘুরি! তবে হাসিরাশি আনন্দটা বিশেষ দৃশ্যমান হচ্ছে শিশুপার্কে। পুরনো জায়গা। তবে আবেদন ফুরোয়নি। শহরের প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে হওয়ায় চারপাশ থেকেই আসছে শিশুরা। ঈদের প্রথম চার দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকছে শিশুপার্ক। পুরোটা সময় বাচ্চাদের সরব উপস্থিতি। বিকেল বেলায় ভিড় বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে যাচ্ছে। ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার বিকেলে শিশুপার্কে গিয়ে দেখা যায়, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য দ্বার খুলে দেয়া হয়েছে। কোন টিকেট সংগ্রহ ছাড়াই পার্কে প্রবেশ করছিল জন্মের পর থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করা ছেলে মেয়েরা। শুকনো মুখগুলো মুহূর্তেই রঙিন হয়ে উঠেছিল। আসাদুল নামের এক শিশু বলল, ‘আমি বেলুন বিক্রি করি। ভেতরে ঢুকতে দেয় না। টেকা চায়। আজক্যা টেকা লাগবো না, ঈদ তো। এই জন্য ঢুকতাছি।’ মিরপুর ও আশপাশের এলাকার সাধারণ মানুষ চিড়িয়াখানামুখী। ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে খোলা ছিল চিড়িয়াখানা। এখনও একই সময়ে খুলে দেয়া হচ্ছে পশুপাখিদের রাজ্য। বাঘ, হাতি, কুমির, জিরাফ, জেব্রা, বানর, হরিণদের সঙ্গে কাটানো যাচ্ছে সূর্য ডোবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার দুপুরের পর পর সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিপুল দর্শনার্থী। টিকেট কাটার জন্য যে দীর্ঘ লাইন সেটি আর ছোট হচ্ছিল না। পরিবারের কেউ একজন টিকেট সংগ্রহের যুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছিলেন। অন্যরা অপেক্ষা করছিলেন দূরে দাঁড়িয়ে। তার পর দুরু দুরু বুকে ভেতরে প্রবেশ। বর্তমানে চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রজাতির ২ হাজার ৬৮০টি প্রাণী আছে। এদের কাছ থেকে দেখতে বিভিন্ন খাঁচার সামনে ভিড় করেছিলেন দর্শনার্থীরা। বানর এত দেখা, তবু বানরের সঙ্গে চলছিল দুষ্টুমি। পাখিদের ওড়াউড়ি উপভোগ করছিলেন অনেকে। কোনটা কোন পাখি, চেনার চেষ্টা করছিলেন। আর যথারীতি খুঁজছিলেন বাঘ মামাকে! রয়েল-বেঙ্গল টাইগারের খাঁচার সামনে ছিল উপচেপড়া ভিড়। জিরাফ জেব্রা এবং হরিণও দারুণ আকর্ষণ করছিল। জানা অজানা আরও কত প্রাণী! যে যার মতো ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। দুই ছেলে মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে এসেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। মিরপুরেই থাকেন। বললেন, কাছেই তো বাসা। কিন্তু আসা হয়নি এতদিন। ঈদের ছুটিতে ভাবলাম দেখে আসি। তিনি বলেন, ছেলেমেয়েরা ডিসকভারি চ্যানেলে পশু পাখি দেখে প্রতিদিন। আজ চিড়িয়াখানায় সরাসরি দেখে খুব খুশি তারা। চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডাঃ এস এম নজরুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন ১ থেকে দেড় লাখ দর্শনার্থী আশা করছেন তারা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এক লাখের বেশি দর্শনার্থী আসছে প্রতিদিনই। ঈদের দিন বন্ধ ছিল জাতীয় জাদুঘর। দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার খোলা ছিল বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। বুধবার প্রবেশদ্বার খুলে দেয়া হয় সকাল সাড়ে ১০টায়। খোলা ছিল রাত ৮টা পর্যন্ত। এদিন জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, উৎসবের আমেজ। দূর-দূরান্ত থেকে দল বেঁধে দর্শনার্থীরা আসছিলেন। জাদুঘর ঘুরে দেখছিলেন। প্রতিটি গ্যালারিতেই ছিল ভরপুর উপস্থিতি। ঈদে শিশু ও প্রতিবন্ধীদের বিনা টিকেটে জাদুঘর পরিদর্শনের সুযোগ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি এখানে দেখা যাচ্ছে প্রিয় সিনেমা। প্রতিদিনই বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করছে কর্তৃপক্ষ। একইভাবে খোলা রয়েছে সোহওরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা জাদুঘর। শিশুমেলা বলা হলেও, এর নতুন নাম ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড। শ্যামলীতে অবস্থিত। শ্যামলী ছাড়াও মিরপুর মোহাম্মদপুর আগারগাঁও এলাকার শিশু কিশোররা এখানে ঈদ উৎসবে মেতেছে। ৪০টির মতো রাইড এখানে। শুধু শিশুদের জন্য নয়, পরিবারের সকলের চড়ার মতো রাইড আছে ১২টি। বাচ্চাদের সঙ্গে চড়ছিলেন বাবা মায়েরাও। শিশুমেলা কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিবারের মতো এবারও অসংখ্য মানুষ সপরিবারে এখানে আসছেন। ঈদের প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড। ঈদের ছুটিতে চাহিদা বেড়ে গেছে থিমপার্কগুলোর। ঢাকার আশুলিয়ায় অবস্থিত আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র ফ্যান্টাসি কিংডমে ঢল নেমেছে দর্শনার্থীর। কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্টের হেড অব মিডিয়া এ্যান্ড পিআর মাহফুজুর রহমান টুটুল জানান, ঈদে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ আসছেন এখানে। প্রথম সাত দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে ফ্যান্টাসি কিংডম। পাশেই ওয়াটার কিংডম। দুটোই এখন খোলা। বড়রা প্রবেশ করতে পারছেন ৪০০ টাকার টিকেট কেটে। ৩৫০ টাকার টিকেট ছোটদের জন্য। ফ্যান্টাসি কিংডমে প্রবেশসহ ৮০০ টাকার টিকেট কেটে সাঁতার কাটা যাচ্ছে ওয়াটার কিংডমে। একইসঙ্গে চড়া যাচ্ছে ওয়েভপুল, লেজি রিভার, ওয়াটারপুলসহ বিভিন্ন রাইডে। ফ্যান্টাসি কিংডমের ভেতরেই রয়েছে হেরিটেজ পার্ক। উপভোগ করার মতো অনেক কিছুই আছে এখানে। পাশাপাশি চড়া যাচ্ছে জায়ান্ট ফেরিস হুইল, পাইরেট শিপ, ব্যাটারি কার, ফ্যামিলি ট্রেনসহ বিভিন্ন রাইডে। সাভারে অবস্থিত নন্দন পার্কেও উৎসবমুখর পরিবেশ। রাজধানী থেকে বহু মানুষ সেখানে যাচ্ছেন। পার্কের হেড অব মার্কেটিং মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন প্রিন্স জানান, ঈদের দিন সকাল থেকেই খোলা ছিল পার্ক। ২৯৫ টাকা মূল্যের টিকেটে প্রবেশ করা যাচ্ছে। সব রাইড উপভোগ করা যাচ্ছে (খাবারসহ) ৮৯৫ টাকায়। খাবার ছাড়া জনপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৬৯৫ টাকা। ৬১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ঈদের বিশেষ প্যাকেজ। ওয়াটার ওয়ার্ল্ড ও ড্রাই পার্কের সব রাইডও উপভোগ করা যাচ্ছে এই প্যাকেজের আওতায়। এসবের বাইরে পার্কে লাইভ মিউজিক, ডিজে, ড্যান্স শো ইত্যাদির আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
×