ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্র্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে কেন গেলেন

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ৭ জুন ২০১৭

ট্র্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফরে কেন গেলেন

প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রথম বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে অস্থিতিশীল ও বিপজ্জনক স্থান মধ্যপ্রাচ্যে। সেখানে ৯ দিনের সফরে ট্রাম্প সৌদি আরব ও সূন্নিদের প্রতি আরও বেশি করে ঝুঁকেছেন এবং ইরান ও শিয়াদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। ফলে এই অঞ্চলে বিরাজমান উত্তেজনা হ্রাস পাওয়া তো দূরের কথা বরং আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০ মে রিয়াদ পৌঁছে ট্রাম্প মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নতুন করে নির্ধারণের প্রয়াস পান যদিও তার ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব কারোর অজানা নয়। ২১ মে এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই হলো শুভ ও অশুভের লড়াই- বিভিন্ন ধর্ম মতের মধ্যে লড়াই নয়। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ সমস্যার জন্য সন্ত্রাসবাদকে দায়ী করে তিনি তার শ্রোতৃম-লী সূন্নি মুসলিম নেতাদের চরমপন্থী নেতাদের বিতাড়িত করার আহ্বান জানান। পাঁচ বার তিনি একই বক্তব্য উচ্চারণ করেন-‘ড্রাইভ দেম আউট।’ ট্রাম্পের বক্তব্য ও অবস্থানটি ছিল পরিষ্কার। তার শ্রোতৃম-লীর অধিকাংশই ছিল স্বৈরাচারী, একনায়ক ও তোষামুদে লোকজন। তাদের মধ্যে একজন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাতাহ আল সিসি বলেন, ‘আপনি এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব যিনি অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা রাখেন।’ জবাবে ট্রাম্প বলেন ‘আপনার মন্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। তিনি আরব নেতাদের পরিষ্কার জানিয়ে দেন যে নিরাপত্তা ও বাণিজ্য প্রশ্নে তার কথামতো চললে তিনি মানবাধিকারের মতো বিষয়ে তাদের ওপর চাপ দেবেন না। ট্রাম্প সৌদি আরবের কাছে ১১ হাজার কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির ঘোষণা দেন। অথচ এই সৌদি আরবকেই এক সময় তিনি সন্ত্রাসবাদের বৃহত্তম অর্থ যোগানদার আখ্যা দিয়েছিলেন। এটা সত্য যে উগ্র রক্ষণশীল মার্কা ইসলাম প্রসারে সৌদি আরব শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেছে। অন্যদিকে আরব স্বৈরাচারীরা নিষ্ঠুরভাবে বিরুদ্ধমত দমন করে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে তবে তা থেকে আরও বেশি করে সন্ত্রাসীর জন্ম হয়। অস্ত্র বিক্রি ও অন্যান্য সিদ্ধান্তের দ্বারা ট্রাম্প সৌদি আরব এবং অন্যান্য আরব নেতাকে খুশি রাখলেও মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ সমস্যার জন্য তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানকে দায়ী করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় ঘি ঢেলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, লেবানন থেকে ইরাক, ইয়েমেন পর্যন্ত ইরান সন্ত্রাসী ও মিলিশিয়াদের অর্থ, অস্ত্র ও ট্রেনিং যোগাবে। কথাটার মধ্যে সত্যতা থাকলেও এটাও বাস্তব সত্য যে জিহাদীদের সিংহভাগ শিয়া নয়-সূন্নি। ট্রাম্প রিয়াদে সে সময় ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় এবং তাতে মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত হাসান রুহানি নির্বাচিত হন। অথচ ট্রাম্প সে প্রসঙ্গের ধারেকাছে না গিয়ে ইরান সমালোচনা অব্যাহত রাখেন। অবশ্য ইরান চুক্তিকে ট্রাম্প এর আগে ইতিহাসের জঘন্যতম চুক্তি আখ্যায়িত করলেও এই সফরে সেই চুক্তি বাতিলের ব্যাপারে কোন কিছু বলেননি, ওবামার মতো তিনিও বলেছেন যে এই অঞ্চলে তিনি সহসা হস্তক্ষেপ পরিহার করবেন। তবে সৌদিকে বিপুল অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে তিনি এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে তুলবেন। ২২ মে ট্রাম্প ইসরাইলে যান। ইসরাইল-ফিলিস্তিনী সমস্যা সমাধানের কথা আগে বললেও এবার তিনি দ্বিরাষ্ট্রিক সমাধানের কথা প্রকাশ্যে এক বারও বলেননি। অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদী বসতি নির্মাণ এবং সেখানকার ও গাজা ভূখ-ের ফিলিস্তিনী জীবনের ওপর বজ্রকঠিন নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে টু শব্দটি করেননি। স্পষ্টতই ট্রাম্পের এই ভূমিকায় ইসরাইলী নেতৃবৃন্দের মধ্যকার যুদ্ধবাজ উগ্র অংশটি খুশি হয়েছে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×