ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবি ছাত্রীর মৃত্যু

চিকিৎসক নয়, অবহেলার বিচার চান সহপাঠীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৪ মে ২০১৭

চিকিৎসক নয়, অবহেলার বিচার চান সহপাঠীরা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফিয়া জাহিন চৈতীর মৃত্যু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিকিৎসা ব্যবস্থার অবহেলার কারণে হয়েছে বলে উল্লেখ করে তার সহপাঠীরা বলেছেন, চিকিৎসক নয়, বরং চিকিৎসা ব্যবস্থায় অবহেলার বিচার চান তারা। মঙ্গলবার প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগে আফিয়ার অকাল মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা এই দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা বলেন, ঘটনার দিন আফিয়া যে অবস্থায় ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই অনুযায়ী তার যতœ নেয়নি। যদি আফিয়ার অবস্থা খুব গুরুতর ছিল তবে কেন তার চিকিৎসা ব্যবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হলো না? আবার ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগীর জন্য হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট না থাকায় রোগীর স্বজনেরা রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করাতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয় নাই। তারা বলেন, একসময় রোগীর স্বজনেরা কিসের চিকিৎসা হচ্ছে জানতে চাইলেও কোন চিকিৎসকের কাছে কোন সদুত্তর পান নাই। শিক্ষার্থীরা আফিয়ার চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেয়া বিভিন্ন রিপোর্টের কপি দেখিয়ে বলেন, আমরা হাসপাতালে চিকিৎসকদের কাছে খোঁজ নিয়ে প্রথমে জানলাম নিউমোনিয়ার কথা, পরে জানলাম ক্যান্সার, শেষে জানলাম ডেঙ্গু। আবার আফিয়ার আইসিইউ-এর ডক্টর জানিয়েছেন রোগীর ডেঙ্গু হয়েছে। অথচ রিপোর্টে দেখাচ্ছে ডেঙ্গু নেগেটিভ। আফিয়ার ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা আছে ডেঙ্গু এবং ক্যান্সার (সুনিশ্চিত নয়)। অর্থাৎ এখানে সুস্পষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসংলগ্নতা ও সমন্বয়হীনতার অভাব ছিল। যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। তাই যারা প্রকৃতপক্ষেই দোষী তাদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যাতে তাদের দায়িত্ব অবহেলার দায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেয় এই দাবিও তুলেন। প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আফিয়ার অবস্থা এতটা গুরুতর এটা প্রথমদিকে আমরা না জানলেও পরে রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার কিছুক্ষণ আগে জানতে পারি। হাসপাতালে গিয়ে যখন আমরা জানতে পারলাম যে আফিয়া আর নেই তারপরে আমি বার বার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি যে আমাদের শিক্ষার্থীদের সম্মেলন কক্ষে নিয়ে গিয়ে বুঝিয়ে বলুন তারা বুঝতেই পারছে না যে আসলে রোগীর কি হয়েছে। তারা একবার শুনছে নিউমোনিয়া, একবার শুনছে ব্লাড ক্যান্সার আবার একবার শুনছে ডেঙ্গু। কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের হুইসেল শোনা যায় এবং পুলিশ শিক্ষার্থীদের সরে যেতে বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এ এম আমজাদ বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে যাদের অবহেলার কারণে এই ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে তাদের বিচার চাওয়ার জন্যই আমরা একটি মামলা করি। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের জায়গা থেকে যদি কোন বক্তব্য দিয়ে থাকেন এবং আফিয়ার পরিবারের পাশে দাঁডান তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলাটি প্রত্যাহার করা বা চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন। কিন্তু এটি পরের ব্যাপার। কিন্তু তাদের জায়গা থেকে অবশ্যই প্রথমে বক্তব্যটি আসতে হবে এবং আলোচনায় বসতে হবে। আমাদের জায়গা থেকে আমরা ইতোমধ্যেই চেষ্টা করেছি। এদিকে আফিয়া জাহিনের চিকিৎসায় অবহেলার প্রতিবাদ জানাতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ বুধবার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি সংলগ্ন রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে। গত ১৭ মে আফিয়াকে ধানম-ির সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ১৮ মে দুপুর ১২টায় আফিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন।
×