ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা করায় বিপাকে বাদী

প্রকাশিত: ০০:৪৬, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

রাজাকারের বিরুদ্ধে মামলা করায় বিপাকে বাদী

স্টাফ রিপোর্টার,যশোর ॥ যশোরের বাঘারপাড়ার চিহ্নিত ‘রাজাকার’ আমজেদ মোল্লাসহ চারজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাদি ও সাক্ষীরা। মামলা তুলে নিতে ‘রাজাকারের’ পক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একটি অংশ। প্রভাবশালী এই পক্ষ প্রতিনিয়ত বাদী ও তার পরিবারকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী খোকন বিশ্বাস। আদালত সূত্র জানায়, গত ৬ এপ্রিল মাগুরা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাগুরার শালিখা উপজেলার সীমাখালি গ্রামের (যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রাম) রজব আলী বিশ্বাসের ছেলে খোকন বিশ্বাস বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামিরা হলো- যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার প্রেমচারা গ্রামের মৃত. সোবহান মোল্লার ছেলে ‘চিহ্নিত রাজাকার’ আমজেদ মোল্লা ও কেরামত মোল্লা, একই গ্রামের মৃত বুধোই মোল্লার ছেলে ওহাব এবং একই উপজেলার খুদড়া গ্রামের মৃত মনসুর আলী মোল্লার ছেলে ফসিয়ার মোল্লা। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে মাগুরার সীমাখালি বাজারের পাশে আমবাগানের দাঁড়িয়ে ছিলেন আসামি আমজেদ রাজাকারের নেতৃত্বে ১০/১২জন। তারা মামলার বাদীর পিতা রজব আলী বিশ্বাসকে অপহরণ করে যশোরের বাঘারপাড়া থানার চাঁদপুর গ্রামে ইফাজ মোল্লার আম বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে বাদীর পিতাকে গামছা দিয়ে চোখ ও দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে বাগানের দক্ষিণ পাশে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে হত্যা করে। বাদী ও সাক্ষীগণ বিকেল ৫টার দিকে বাদীর পিতার লাশ গরুর গাড়িতে করে নিজ বাড়িতে এনে কবর দেন। ৬ এপ্রিল মাগুরা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা বসু অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে’ প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশের পর আসামিরা বাদীকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাঘারপাড়া আওয়ামী লীগের একটি প্রভাবশালী অংশ আমজেদ রাজাকারের সাথে রয়েছে। তারা মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদিকে হত্যার হুমকিও দিচ্ছে। হামলার ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মামলার বাদী খোকন বিশ্বাস। ভাই আবুল বিশ্বাসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে মামলার বাদি খোকন বিশ্বাসকে খবর দেয়া হলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। মামলার বাদী খোকন বিশ্বাস জানান, ‘কুখ্যাত আমজেদ রাজাকারের নেতৃত্বে আমার বাবাকে তুলে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়। পিতা হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছি। মামলা করার পর থেকে আসামিরা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। এজন্য ভয়ে বাড়িঘর রেখে এক সপ্তাহ পালিয়ে রয়েছি।’ খোকন বিশ্বাস এবং আবুল বিশ্বাস দুইজনই তাদের পিতা হত্যাকারী আমজেদ রাজাকারের বিচার চান। বাঘারপাড়ার প্রেমচারা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধ আবু বক্কর বলেন, আমজেদ মোল্লা ছিল এই এলাকার রাজাকার ক্যাম্পের কমান্ডার। তার নেতৃত্বে এই অঞ্চলে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট করেছে। তার সহযোগী ছিল আয়নাল, ফসিয়ার, আনার, সোবহান, নওশের। আমজেদ রাজাকারের নেতৃত্বে সুরো ও মুক্তারকে তুলে এনে বিজয় দাসের আমবাগানে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই নির্জন আমবাগানে একটি বড় কুয়ো ছিল। এ অঞ্চলের অনেককে এনে হত্যা করে ওই কুয়োয় ফেলা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর আরও বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম বলে আমাদের বাড়িতে লুটপাট করে আমজেদ মোল্লার নেতৃত্বে রাজাকাররা। আমার পিতাকে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। প্রেমচারা গ্রামের আরেক মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান মোল্লা বলেন, আমজেদ মোল্লা এলাকার চিহ্নিত রাজাকার। ১৯৭১ সালে তার নেতৃত্বে ৩৩জন রাজাকার এলাকায় নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। চানপুরের দু’জন, গাইদঘাটের দুই জনকে তুলে নিয়ে প্রেমচারা গ্রামের বিজয় দাসের আম বাগানে হত্যা করে করেছিল আমজেদ মোল্লার নেতৃত্বে রাজাকাররা। মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান মোল্লার বাড়িতেও লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে আমজেদ রাজাকার ও তার সহযোগীরা। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আমজেদ রাজাকার বাঘারপাড়া আওয়ামী লীগের একটি অংশের সাথে মিশে গেছে। এই পক্ষটি আমজেদ রাজাকারকে রক্ষার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা আমজেদ রাজাকারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
×