ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সায়েন্স ডেইলি

রোবট নিয়ে মানুষের সীমাহীন কল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৮ এপ্রিল ২০১৭

রোবট নিয়ে মানুষের সীমাহীন কল্পনা

রোবট আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রবেশ করেছে। ফারবিসের মতো খেলনা থেকে শুরু করে রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার পর্যন্ত অনেককিছুই আজ রোবট ও মানুষকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। কিন্তু চেতনাসম্পন্ন নয় অথচ মানুষের মতো কাজ করে এমন বস্তুসমূহের ব্যাপারে আমাদের অনুভূতি কেমন? সম্প্রতি জার্মানিতে এক গবেষণায় দেখা গেছে যে রোবট ও মানুষের প্রতি ভালবাসা ও স্নেহমমতা দেখানো হচ্ছে অথবা তাদের প্রহার করা হচ্ছে এমন ছবি মানুষকে দেখানো হলে তাদের মস্তিষ্ক একই রকমের কাজ করে। অর্থাৎ মানুষের ছবি দেখে মস্তিষ্কের যে প্রতিক্রিয়া হয় রোবোর্টের ছবি দেখেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়। সম্প্রতি লন্ডনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জার্মানির ডুইসবার্গ ইসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন গবেষক এসট্রিড বোসেন আল-ভন ডার পুটেন, নিকোল ক্রেমার ও ম্যাথিয়াস ব্র্যান্ড তাদের গবেষণার ফলাফল পেশ করেন। তারা দুটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন। প্রথম সমীক্ষায় ৪০ জন নারী পুরুষকে ডাইনোসর আকৃতির ছোট একটা রোবট ভিডিওতে দেখানো হয় যাকে স্নেহভালবাসাও দেখা হচ্ছিল এবং দুর্ব্যবহারও করা হয়েছিল। ঐ দৃশ্যাবলী দেখানোর পরপরই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মানসিক প্রতিক্রিয়ার মাত্রা নিরূপণ করা হয় এবং তাদের আবেগগত অবস্থা কেমন সরাসরি জিজ্ঞাসাও করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা জানায়, রোবোটের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে দেখে তাদের অনুভূতি হয়েছে নেতিবাচক। দ্বিতীয় সমীক্ষায় মানুষ-মানুষে মিথষ্ক্রিয়ার বিপরীতে মানুষ রোবট মিথষ্ক্রিয়া মানব মস্তিষ্ক সম্ভাব্য কি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা পরীক্ষার জন্য ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এফএমআরআই) ব্যবহার করা হয়। ১৪ জন অংশগ্রহণকারীকে একজন মানুষ, একটি রোবট ও একটি জড়বস্তু দেখানো হয়। সেখানেও এদের প্রতি সন্দেহ আচরণ অথবা দুর্ব্যবহার করা হয়। রোবট ও মানুষ উভয়ের প্রতি সশ্নেহ আচরণ সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের ক্লাসিক লিম্বিক কাঠামোয় একই ধরনের ক্রিয়াশীলতার ধারা সৃষ্টি করে। তা থেকে বুঝা যায় যে এতে একই রকমের আবেগগত প্রতিক্রিয়া সংস্কার হয়। তবে যেসব ভিডিওতে মানুষ, রোবট ও অচেতন বস্তুর প্রতি দুর্ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো দেখানোর পর মানব মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের পার্থক্য থেকে বুঝা যায় যে অংশগ্রহণকারীরা দুর্ব্যবহারের সময় মানুষের প্রতি অধিকতর সহমর্মিতাসূচক অনুভূতির পরিচয় দিয়েছিল। মানব-রোবট মিথষ্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণা হয়েছে এবং এসব গবেষণায় রোবোটিক ব্যবস্থায় আবেগগত মডেল বাস্তবায়নের ওপর দৃষ্টি নিবন্ধ করা হয়েছে। এসব সমীক্ষায় মডেলগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বাভাবিকতা, অংশগ্রহণকারীদের ওপর সেগুলোর ইতিবাচক প্রভাব এবং মিথষ্ক্রিয়ার উপভোগ্যতা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তবে লোকে ‘রোবেটিক’ আবেগকে কিভাবে দেখে এবং রোবোটের প্রতি তাদের কোন আবেগগত প্রতিক্রিয়া হয় কিনা সে ব্যাপারে তেমন কিছু জানা যায়নি। মানুষ-রোবট মিথষ্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের আবেগগত অবস্থা ব্যক্ত করতে লোকের অনেক সময় সমস্যা হয় কিংবা নিজেদের আবেগগত অবস্থাটা জানানোটা অদ্ভুত বলে মনে করে। রোজেনদাল ভন দার পুতেন ও ক্রিমারের গবেষণায় আবেগগত প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ এবং শারীরিক উত্তেজনার মতো আবেগের সঙ্গে যুক্ত আরও বস্তুনিষ্ঠ পদক্ষেপকে কাজে লাগানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রোজেনদাল বলেন, রোবট নিয়ে আমাদের বর্তমান গবেষণার একটি লক্ষ্য হচ্ছে এমন রোবেনটিক সঙ্গী তৈরি করা যা কিনা মানব ব্যবহারকারীর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে। কারণ রোবট সঙ্গী প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর সরঞ্জাম হতে পারে। এগুলো বয়স্কদের দৈনন্দিন কাজে সাহায্য করতে পারে। তাদের নিজ নিজ বাড়িতে স্বাধীনভাবে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে সক্ষম করে তুলতে পারে। শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারে এবং রোগীদের পুনর্বাসনে সহায়ক হতে পারে। একটাই অভিন্ন সমস্যা, নতুন কোন প্রযুক্তি বেরুলে প্রথম দিকে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। যতই দিন যায় ততই তার প্রভাব ফিকে হয়ে আসতে থাকে। বিশেষ করে পুনর্বাসনের মতো কাদের ক্ষেত্রে একঘেয়ে ও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। রোবোটের মধ্যে মানবসুলভ সক্ষমতা উদ্ভাবন ও বাস্তবায়ন এই সমস্যা সমাধানে সহায়ক হতে পারে। আর সেই সক্ষমতাগুলো হলো মন, আবেগ ও সহমর্মিতাবোধ। অনুবাদ ॥ এনামুল হক
×