ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি টেকনাফে বিপুল সেনা ইউনিফর্ম উদ্ধার, আটক ১

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৩১ মার্চ ২০১৭

মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি টেকনাফে বিপুল সেনা ইউনিফর্ম উদ্ধার, আটক ১

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পোশাক, ব্যাজসহ অন্যান্য পরিধেয় উপকরণ জব্দ করেছে টেকনাফের শুল্ক বিভাগ। সীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় টেকনাফ স্থলবন্দরে আসা তেতুল বিচি, আচারসহ কয়েকটি পণ্যের সঙ্গে গোপনে এসব সেনা পোশাক আনা হয়েছিল। খবর পেয়ে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে নিয়ে আসা পণ্যাদি তল্লাশি চালিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় এক হাজার ৭০১ পিস বর্মী সেনাবাহিনীর পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ব্রু অংছাই মারমা নামে এক উপজাতি যুবককে আটক করা হয়েছে। তার বাড়ি পার্বত্য বান্দরবান সদরে বলে জানা গেছে। উল্লিখিত পণ্যাদি আমদানিকারক মেসার্স এআর ট্রেডিং টেকনাফ স্থলবন্দরে কর্মরত সিএন্ডএফ মেসার্স রহমান ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে (আইজিএম নং-৩১২/১৭) মিয়ানমার থেকে আমদানি করেছে। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর শুল্ক কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন সেলিম বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে জানান, সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমান ট্রেডিং ও আমদানিকারক এআর ট্রেডিং পণ্য আমদানির ঘোষণা দিয়ে মিয়ানমার থেকে এসব সেনা পোশাক নিয়ে এসেছে গোপনে। তাদের ঘোষণাপত্রে (আইজিএম) আমদানি করার কথা উল্লেখ ছিল শুঁটকি, আচার, তেতুল বিচি ও কাপড়। একাধিক সূত্র জানায়, যশোরের আব্দুস সালাম প্রকাশ ড্রাফট সালাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পার্বত্য বান্দরবানের ধৃত উপজাতি ব্যক্তিসহ বিদ্রোহী সংগঠনের ক্যাডারদের সঙ্গে সখ্য রয়েছে দীর্ঘদিনের। ইতোপূর্বে আরএসও ক্যাডার ও উপজাতি ব্যক্তিরা তার সঙ্গে বিভিন্নভাবে দেখা সাক্ষাত করেছে। ওই আবদুস সালাম হুন্ডিসহ বহু অপকর্ম চালিয়ে গেলেও উত্তরবঙ্গের ব্যক্তি হওয়ার সুবাদে পার পেয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। টেকনাফ বন্দর হয়ে বর্মী সেনাবাহিনীর আদলে পোশাক জব্দের ঘটনায় তোলপাড় চলছে সীমান্ত এলাকায়। এ ঘৃণ্যতম কাজের সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে সর্ব মহল থেকে। উথিয়া-টেকনাফের সাংসদ আবদুর রহমান বদি জনকণ্ঠকে বলেন, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও কাস্টমসের পাশাপাশি জঙ্গী সন্ত্রাস দমনে সীমান্ত এলাকা উখিয়া ও টেকনাফের মানুষ সোচ্চার রয়েছে। জঙ্গীপনার খবর পাওয়া মাত্র প্রশাসনকে খবর দিতে এমপি বদি তার সংসদীয় এলাকার লোকজনকে অনুরোধ জানিয়েছেন। টেকনাফ কাস্টমস অফিস সূত্রে জানা গেছে, রহমান ট্রেডিং নামের সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানটির মালিক হচ্ছে চট্টগ্রামের ব্যক্তি নূরে আলম সিদ্দিকী। টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলমের লেঙ্গুরবিল রোডের পৌরসভা এলাকার ভাড়া বাসায় এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়। সিএন্ডএফ লাইসেন্সটি টেকনাফ স্থলবন্দরে ভাড়ায় এনে ব্যবহার করে আসছেন ওই বন্দরের সাবেক কর্মচারী আব্দুর রহিম। আমদানিকারক আব্দুস সালাম প্রকাশ ড্রাফট সালাম নামে যশোরের এক ব্যক্তি এআর ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী। সূত্র জানায়, আমদানিকারক আবদুস সালামের তত্ত্বাবধানে ওই পোশাকগুলো কেন আনা হয়েছে? এসব অবৈধ পোশাক কোথায় নিয়ে খালাস করা হতো? এর পেছনে ইন্ধনদাতা ও গডফাদার কারা? এসব নিয়ে বন্দরসহ কক্সবাজার জেলার সর্বত্র বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা চলছে। জব্দকৃত সেনা পোশাকের মধ্যে রয়েছে ২শ’ পিস প্যান্ট, ২০২ পিস শার্ট, ইউনিফর্মের ব্যাগ ১৮৬, বেল্ট ৪৫২, রেন কোট ৩০, বুলেট রাখার সদৃশ্য ব্যাগ ১৮, ক্যাপ-টুপি ৫০, স্যান্ডো গেঞ্জি ১৮, সেনা বেজ ১২৭, বার্মিজ লুঙ্গি ২৩০ পিস, সিøপার স্পঞ্জ ফিতা ১৮৮ জোড়া। এসব পোশাকের আবরণে আমদানি করে আনা হয়েছে ৪৫০ কেজি শুঁটকি, ৮ হাজার ১শ’ কেজি তেতুল বিচি ও ১৩৪ কেজি আচার। বিষয়টি জানতে পেরে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ স্থল বন্দর পরিদর্শন করেন। টেকনাফ থেকে জনকণ্ঠের সংবাদদাতা জানান, বুধবার রাতে টেকনাফ পৌরসভার ইসলামাবাদ এলাকা থেকে বিজিবি জওয়ানরা ওই পোশাকের চাহিদা দাতা উপজাতি যুবক ব্রু অংছাই মারমাকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আবদুস সালাম ও আবদুর রহিমকে টেকনাফ বিজিবি কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোরের বাসিন্দা ও টেকনাফে অবস্থানকারী আবদুস সালামের সঙ্গে মিয়ানমারের একাধিক বিদ্রোহী গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। সে সুবাদে বান্দরবান এলাকার ওই উপজাতি যুবকের জন্য আব্দুর রহিমের সিএন্ডএফ (ভাড়ায় চালিত) মেসার্স রহমান ট্রেডার্সকে দিয়ে বর্মী সেনা পোশাকগুলো স্থলবন্দরের বৈধ ঘাট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়েছে। হবিগঞ্জে ব্রিজ দেবে ঢাকাসহ সারাদেশে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ, ৩০ মার্চ ॥ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে হবিগঞ্জের ইটাখোলা নামকস্থানে ৫৬নং রেলওয়ে ব্রিজ ধসে যাওয়ায় সিলেটের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে আকস্মিক এই ব্রিজটির নিচের ইটের গাঁথুনি ভেঙ্গে কয়েক টুকরো নদীতে পড়ে গেলে ব্রিজটিরও এক অংশ দেবে যায়। শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন স্টেশনের উর্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) রুহুল আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, রেল যোগাযোগ পুনরায় স্থাপনের জন্য ব্রিজটি মেরামতের কাজ দ্রুত সম্পন্নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে ব্রিজ দেবে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আন্তঃনগর কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।
×