ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিআইএর হ্যাকিং কোড ফাঁস করবে উইকিলিকস

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৫ মার্চ ২০১৭

সিআইএর হ্যাকিং কোড ফাঁস করবে উইকিলিকস

উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান একসঙ্গে সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে তার প্রতিষ্ঠান সিআইএর হ্যাকিং ডিভাইসগুলোর বিস্তারিত বিবরণ টেক কোম্পানিগুলোর কাছে প্রকাশ করবে। মানুষের যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় তার স্বার্থেই এটা করা হবে বলে তিনি জানান। এ কথা ঘোষণা করে এ্যাসাঞ্জ নিজেকে সাইবার সিকিউরিটির রক্ষকের অবস্থানে দাঁড় করানোর চেষ্টা যেমন করেছেন তেমনি অন্যদিকে গোয়েন্দা সম্প্রদায়কে আরও ক্ষেপিয়ে দিয়েছেন। এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ্যাসাঞ্জ বলেন, একবার সফটওয়্যার কোডটি কার্যকরভাবে নিষ্ক্রিয় করতে পারলে উইকিলিকস আরও বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করবে। এ্যাসাঞ্জের এই মন্তব্যের দু’দিন আগে এই র‌্যাডিকেল ট্রান্সপারেন্সি সাইটটি এক বাক্স ফাইলের ছবি পরিবেশন করে বলে এগুলো হচ্ছে সিআইএর হ্যাকিংয়ের গোপন টেকনিক ও ডিভাইস যার লক্ষ্য ছিল আইফোন ও গুগলের এনড্রয়েড ফোনগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয়া, স্যামসাংয়ের কিছু টেলিভিশন সেটকে আড়িপাতার সঙ্গে পরিণত করা এবং ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযোগ নেই এমন সব ডিভাইস থেকে ড্যাটা হাতিয়ে নেয়া। উইকিলিকস সবকিছুই ফাঁস করে দিয়েছে শুধু কোডটার কথা বলেনি। কিছু কিছু জাতীয় নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এই ভেবে অবাক হয়েছেন কেন উইকিলিকস ইতোমধ্যে সফটওয়্যারের ত্রুটিগুলো অন্যদের জানায়নি। ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উইকিলিকস সত্যিই যদি অত ভাবিত হতো তাহলে সফটওয়্যারের এই ভা-ার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঝুঁকির ব্যাপারগুলো ভেন্ডারদের জানিয়ে দিতে পারত। অথচ তাদের হাতে সেগুলো থাকার পরও তা করেনি। অন্যরা অবশ্য টেক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে উইকিলিকসের ক্যাটা শেয়ার করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে, বলেছে যে ব্যক্তিগত সাইবার সিকিউরিটির জন্য এ এক দারুণ ভাল সংবাদ। তারা বলেন, এতে উইকিলিকসেরও লাভ হবে। কারণ অতীতে প্রাইভেসি ও নিরাপত্তার দিকটা যাচাই না করেই তথ্য প্রকাশ করার জন্য তারা সমালোচিত হয়েছিল। উইকিলিকস সিআইএর সফটওয়্যার সংক্রান্ত কিছু দলিল প্রকাশ করে বলেছে যে, এগুলো হলো প্রথম কিস্তি। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও প্রকাশ করা হবে। সিআইএ এসব দলিলের নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেনি। তবে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ফাইলগুলো নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়। এই হাতিয়ার দিয়ে হ্যাকাররা যে কোন ডিভাইসে অনুপ্রবেশ করতে পারে। তবে এর অনেকই পুরনো। গবেষকরা বলেন, বেশ কিছু কৌশলের সঙ্গে তারা অনেক আগে থেকেই পরিচিত। সিআইএর এক মুখপাত্র জোনাথান লিউ বলেন যে উইকিলিকস প্রকাশিত ভল্ট-৭ এর ব্যাপকতা ও প্রভাব সম্পর্কে যা কিছু বলা হচ্ছে তা অতিরঞ্জিত। তিনি বলেন, এ্যাসাঞ্জ সততা ও ন্যায়নীতির প্রতীক নন। এ্যাসাঞ্জের ও তার লোকজনের অপপ্রয়াস সত্ত্বেও সিআইএ সন্ত্রাসবাদী, বৈরী রাষ্ট্র ও অন্যান্য শত্রুর হাত থেকে আমেরিকাকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বৈদেশিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে। তিনি আরও বলেন, মার্কিন আইন অনুযায়ী সিআইএ আমেরিকার মাটিতে নাগরিকদের টার্গেট করে ইলেকট্রনিক নজরদারি চালাতে পারে না এবং সিআইএ তা করেও না। উইকিলিকস ফাঁস করার আগেই সিআইএর কর্মকর্তারা জানতে পেরেছিলেন যে কিছু স্পর্শকাতর তথ্য খোয়া গেছে। সংস্থার সংশ্লিষ্ট বিভাগের লোকজন বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবরও করে চলেছিল। তবে সমস্যার ব্যাপকতা ও গভীরতা তাদের কাছে পরিষ্কার ছিল না। পরিষ্কার হলো উইকিলিকস ক’দিন আগে প্রায় ৯ হাজার দলিল অনলাইনে পোস্ট করার পর। ঘাপটি মেরে থাকা কোন গুপ্তচর এ কাজ করে থাকতে পারে এই ধারণা করে এফবিআই তদন্তকারীরা সেই গুপ্তচরের হদিস বের করার কাজে নেমে পড়ে। তবে শত শত, কি হাজার হাজার লোকের তথ্য উপাত্ত দেখার সুযোগ থাকায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করাই তাদের জন্য আশু চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। জানা গেছে, এ্যাসাঞ্জের সাংবাদিক সম্মেলনের পর টেক কোম্পানিগুলো উইকিলিকসের কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত নেয়ার পরিণতি নিয়ে আলোচনা করে। তারা বেআইনীভাবে পাওয়া নথিপত্রের তথ্য ব্যবহারের আইনগত তাৎপর্য এবং এর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার দিকটাও বিবেচনা করে দেখে। এ্যাসাঞ্জ প্রযুক্তি শিল্প ও মার্কিন সরকারের মধ্যে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করছেন কিনা সে প্রশ্নও তোলে তারা। এ্যাপল এ্যাসাঞ্জের বক্তব্য সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেনি।
×