ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তির মুখে স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৭ মার্চ ২০১৭

বিলুপ্তির মুখে স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী

পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে যখন তোলপাড় চলছে বিশ্বজুড়ে তখন বন্য প্রাণীদের ওপর এর ভয়াবহ প্রভাবের একচিত্র উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায়। সমীক্ষার ফল জানাচ্ছে অর্ধেকেরও বেশি বন্য স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণী আজ বিলুপ্তির মুখে। এই তালিকায় আছে উল্লুকও। রয়েছে বিভিন্ন জাতের বানর, ভাম বিড়াল, সেøনডার বা সেøা লরিস ইত্যাদি। এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক আবাস ধ্বংস করে ক্রমবর্ধমান কৃষি জমি বা শিল্প স্থাপনা গড়ে ওঠা। সংরক্ষণবাদীদের হিসেবে আশ্রয়হীনতার কারণে বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ৬০% আজ বিলুপ্তির মুখে। সমীক্ষায় আরও ৩০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর টিকে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে গরিলা, শিম্পাঞ্জি ও দীর্ঘবাহুর বানর, আমেরিকার পিগমি বানর, টার্সিয়ারস, লোরিস ইত্যাদি। কনসারভেশন ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র গবেষক এন্থনি রাইল্যান্ডস বলেন, সমীক্ষায় ওঠে আসা চিত্রে তিনি রীতিমতো আতঙ্কিত। এই রিপোর্ট ঠাঁই পেয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দি কনসারভেশন অব ন্যাপারের রেড লিস্টে, বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে ইউএন ডাটাবেজে। রাইল্যান্ড জানান, বিলুপ্তির এই হার অনেক বেশি রীতিমতো আশঙ্কা জাগানিয়া। ‘বন্য প্রজাতির সংখ্যাবৃদ্ধি হ্রাস যে হুমকির মুখে তাতে পৃথিবী অচিরেই তাদের হারিয়ে ফেলবে যদি এখনই কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়। ইউনিভার্সিটি অব ইলিয়নস ও ন্যাশনাল অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর একদল গবেষকের এই নিবন্ধে প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল সায়েন্স এডভান্সে। বিভিন্ন প্রজাতির এই বিলুপ্তির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৃষি জমির চাহিদা বৃদ্ধি। ১৯৯০ থেকে ২০১০-এ কৃষি কাজের জন্য উজাড় হয়ে ১.৫ মিলিয়ন বর্গ কিমি বনাঞ্চল যা আকৃতিতে ফ্রান্সের তিনগুণ। সুমাত্রা আর বার্নিওতে পামওয়েল আবাদের জন্য বনাঞ্চল উজাড়ের ফলে বিলুপ্ত প্রায় ওরাং ওটাং। চায়নাতে রাবার চাষের জন্য ধ্বংস করা বনাঞ্চল হুমকির মুখে ফেলেছে হোয়াইট চিফ ক্রেসটেড গিবনের ভবিষ্যত। আর ভারতে রাবার চাষের জন্য অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে বেঙ্গল সেøালরিস, হুলক গিবন আর ফাইরেস লিফ মাংকি। স্তন্যপায়ী প্রজাতির জন্য প্রাণী ছড়িয়ে আছে প্রায় ৯০টি দেশে। কিন্তু এর দুই-তৃতীয়াংশের বাস মূলত চারটি দেশে ব্রাজিল, মাদাগাস্কার, ইন্দোনেশিয়া এবং ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে। সমীক্ষা জানাচ্ছে মাদাগাস্কারে এই প্রজাতির ৮৭% বিলুপ্তির পথে আর এশিয়াতে এই হার ৭৩% গবেষকরা মত দিচ্ছেন মানবজাতির সামনে রয়েছে ‘শেষ সুযোগ’ এই বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির বংশ রক্ষায়। এশিয়া আফ্রিকা আর নিউট্রফিকস অঞ্চলে শিল্পায়নের জন্য কাঠের চাহিদা বৃদ্ধি ধ্বংস করছে বন্য প্রাণীর আবাস। খনিজ আর হীরক উত্তোলনের জন্যও মূল্য দিতে হচ্ছে বন্য প্রাণীকেই। ফিলিপাইনের ডিনাগাট দ্বীপে স্বর্ণ, নিকেল আর আমার উত্তোলন সঙ্কটে ফেলেছে ফিলিপিন্স টারসিয়ারস-এর অস্তিত্ব। ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক ও কঙ্গোতেও মাইনিংয়ে বিপন্ন গ্রাউরেস প্রজাতির গরিলা। শিল্পায়নের জন্য গড়ে তোলা পথঘাটের জন্য উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল যা ২০৫০-এ আশঙ্কাজনক পর্যায়ে দাঁড়াবে। গবেষণায় দেখা গেছে কিছু প্রজাতির প্রাণী তাদের আভাসস্থল ত্যাগ করেছে টিকে থাকার প্রয়োজনে। তাদের স্বাভাবিক আচরণে পরিবর্তন এনে অন্যত্র বসতি স্থাপনের চেষ্টা করছে। কিন্তু সেখানেও দেখা দিচ্ছে সমস্যা। ভাম বিড়াল আর শিম্পাঞ্জির বেলায় দেখা গেছে আবাস পরিবর্তনের কারণে মানুষের সংস্পর্শে আশায় তারা আক্রান্ত হচ্ছে নানান রোগে। এই বন্যপ্রাণীর বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তির আরেকটি বড় কারণ শিকারীদের দ্বারা নির্বিচারে হত্যা। বলা হচ্ছে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা জোগান এই শিকারের মূল কারণ। সমীক্ষায় জানা যায়, কেবল নাইজেরিয়া আর ক্যামেরুনে প্রতিবছর হত্যা করা হয় এক লাখ পঞ্চাশ হাজার ১৬টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। বর্নিওতে প্রতিবছর হত্যা করা হয় দুই থেকে তিন হাজার ওরাং ওটাং। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতিগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে আমাদের নিজ স্বার্থেই। আর এই উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×