ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

২৮ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

২৮ কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পেনিসিলিন, হরমোন, এন্টিবায়োটিক, ও এ্যান্টিক্যান্সার জাতীয় ওষুধ উৎপাদনকারী আরও ২৮টি ওষুধ কোম্পানির উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই আদেশ প্রতিপালন করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও ওষুধ অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি এবং সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়ন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব, শিল্পসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের মহাপরিচালক, ওষুধ উৎপাদন মালিক সমিতির সভাপতি, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র‌্যাবের মহাপরিচালককে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। শুনানিতে রিটকারী পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। বিবাদী পক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। যে ২৮টি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদনে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলো- এ্যামিকো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, এজটেক ফার্মাসিউটিক্যালস, বেঙ্গল টেকনো ফার্মা লিমিটেড, বেনহাম ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ডিসেন্ট ফার্মা লিমিটেড, ডাঃ টিমস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, গ্লোবেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, গ্রিনল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইনোভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ম্যাক্স ড্রাগস লিমিটেড, ম্যাডিমেট ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, মর্ডার্ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মিসটিক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, অর্গানিক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, ওয়েস্টার ফার্মা লিমিটেড, প্রিমিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সীমা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, হোয়াইট হর্স ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মমতাজ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইউনিক ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ইউনাইটেড কেমিক্যাল এ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ইউনিট-১, ইউনিট-২, ইউনিট-৩। আদেশের পর তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা তা জানিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্যসচিব, শিল্পসচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, ওষুধ উৎপাদন মালিক সমিতির সভাপতি, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও র‌্যাব মহাপরিচালককে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা ‘গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস’ অনুসরণ না করে ২৮টি কোম্পানি নিম্নমানের এ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করছে। এতে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।” ওষুধের মান ঠিক রাখতে উৎপাদন পদ্ধতি, লোকবল, কারখানার অবস্থান, পদ্ধতি, মোড়কজাতকরণসহ অনেক বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে ‘গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস’ বা জিএমপি নীতিমালায়। তিনি আরও বলেন, এ নীতিমালা আমাদের দেশের প্রচলিত আইন দ্বারা স্বীকৃত। ফলে জিএমপি লঙ্ঘন করে ওষুধ উৎপাদন সম্ভব নয়। রিট আবেদনে ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ থেকে উদ্বৃত করা হয়েছে। এর ১৫ (১) ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদন করবে। আবার ১৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ওষুধ কোম্পানি জিএমপি অনুসরণ না করে, সেই কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল অথবা স্থগিত করা যেতে পারে। অধ্যাদেশের ১৭ ধারায় নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত, মজুদ, অথবা বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- অথবা অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানাসহ শাস্তি অথবা উভয় দ-ের শাস্তির বিধান রয়েছে। “মাননীয় স্পীকারের অনুমতিক্রমে গঠিত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে এসব কোম্পানির উৎপাদিত এ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন বন্ধের সুপারিশ করে। কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় জনস্বর্থে এই রিট আবেদনটি করা হয়েছে।” এর আগে একই হাইকোর্ট বেঞ্চের নির্দেশে ২০টি কোম্পানির সকল ধরনের ওষুধ ও ১৪টি কোম্পানির সকল ধরনের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। মানসম্মত ওষুধ উৎপন্ন না করায় এ সকল কোম্পানির লাইসেন্সও বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। উৎপাদন বাতিল হওয়া আগের ২০টি ওষুধ কোম্পানি হলো- এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো কেমিক্যাল, রিদ ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করা ১৪টি কোম্পানি হলো- আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রিস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, পনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।
×