ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের সঙ্গে ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চীনের সঙ্গে ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ চীনের সঙ্গে করা ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশটির সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে নতুন কৌশল নির্ধারণ করা হবে। তবে এখনই চীনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করা হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত যেসব চুক্তি করা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে চীনের উচ্চ পর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এদেশে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বাণিজ্য বৃদ্ধিতে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন চীনের উদ্যোক্তারা। এদিকে গত অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফর সামনে রেখে ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলারের বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় বাংলাদেশ থেকে পাট, পাটের সুতা ও পাটজাত পণ্য, চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, সামুদ্রিক মাছ আমদানি করবে চীন। ওই সময় দেশটির ৭টি সরকারী সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের ১৩টি প্রতিষ্ঠানের এ চুক্তি সই করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কাউন্সিল ফর প্রমোটিং সাউথ-সাউথ কো-অপারেশনের (সিপিএসএসসি) যৌথ উদ্যোগে আজ রবিবার এফবিসিসিআই সম্মেলন কক্ষে ‘চায়না-বাংলাদেশ বিজনেস মিটিং’ আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মি মা মিং কিয়াং ছাড়াও এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদ, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী এবং চীনের উচ্চ পর্যায়ের ৫০ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল সভায় অংশগ্রহণ করবেন। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ জনকণ্ঠকে বলেন, সারা বিশ্ব এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের দিকে নজর দিয়েছে। চীন বাংলাদেশে তাদের বাণিজ্য বাড়াতে চায়। তবে দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য বৈষম্য বা ঘাটতি রয়েছে। এর প্রধান কারণ শুল্কজনিত সমস্যা। এছাড়া ৯৩ শতাংশ আমদানির বিপরীতে দেশটিতে বাংলাদেশী পণ্য রফতানি হয় মাত্র ৭ শতাংশ। তাই এসব বাধা দূর করতে ভারতের মতো বাংলাদেশের সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায় করা জরুরী হয়ে পড়ছে। জানা গেছে, চীনে উৎপাদন খরচ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি থাকলেও বর্ধিত উৎপাদন খরচে বিশ্ব বাজারে রফতানিতে প্রতিযোগিতায় পড়ছে। এ অবস্থায় কম দামের পণ্য উৎপাদনের জন্য অন্য দেশে বিনিয়োগ স্থানান্তর করতে চাইছেন দেশটির উদ্যোক্তারা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন চীনের উদ্যোক্তারা। এছাড়া চীনের বাজার ধীরে ধীরে খুলে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন সেই সুযোগ নিতে মুখিয়ে আছে। জানা গেছে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। আমদানি করা পণ্যের বেশিরভাগই আসে চীন থেকে। দেশটি থেকে আমদানি করা পণ্যের তালিকায় রয়েছেÑ সব ধরনের সুতা, তুলা ও সুতি কাপড়, পারমাণবিক চুল্লী, বয়লার, শিল্প ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও উপরকরণ, লোহা ও ইস্পাত, ফিলামেন্ট, কাপড় তৈরির উপকরণ, প্লাস্টিকের উপকরণ, সার, অর্গানিক ও ইন-অর্গানিক কেমিক্যাল, রেল ও ট্রাম ছাড়া অন্যান্য পরিবহন ও এর যন্ত্রাংশ, কাগজ ও কাগজের বোর্ড, ফটোগ্রাফি ও মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, রাবার, কফি, চা ও মসলাসহ ২৬ থেকে ৩০ ধরনের পণ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি ব্যয় সংক্রান্ত এক বার্ষিক প্রতিবেদন মতে, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৯০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা বা ৩ হাজার ৭৪২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৬৩ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা বা ৮২৩ কোটি ডলারের পণ্য আসে চীন থেকে। যা ওই অর্থবছরে আমদানি করা পণ্যের ২২ শতাংশ। আমদানির ওই হিসাবের মধ্যে নগদ, বায়ার্স ক্রেডিট, আইডিবি বা আইটিএফসি ঋণ, ঋণ ও অনুদান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা বলেন, চীন বাংলাদেশকে ৫ হাজার ৫৪টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে এই বাণিজ্য বাড়াতে পারছে না। বর্তমানে কাঁচা পাট, চামড়া ও হিমায়িত পণ্য যায় বাংলাদেশ থেকে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশ ৬০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করতে চায়। এজন্য সরকার কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে তিনি বাংলাদেশের রফতানি প্রক্রিয়া অঞ্চল (ইপিজেড) এবং চায়নার জন্য নির্ধারিত চায়না রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) তাদের বিনিয়োগ প্রয়োজন। এদিকে বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) এক তথ্যমতে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতির জন্য বেমানান। ডিসিসিআই বলছে, বিশ্বের দ্রুত বর্ধমান ভোক্তাবাজারগুলোর মধ্যে চীন অন্যতম। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে চীনের ভোক্তাবাজারের আর্থিক পরিমাণ ২ লাখ কোটি থেকে ৬ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হবে। আর তাই এই বাজারে বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাট ও পাটজাত পণ্যের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক, কাঠ ও কাঠ থেকে উৎপাদিত পণ্য প্রভৃতি চীনের বাজারে রফতানি করতে পারে। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ বলেন, চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে নিশ্চয়ই লাভবান হবেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ঢাকা-বেজিংয়ের মধ্যকার এ বাণিজ্য চুক্তিগুলো বিশাল সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আশা করছি, চীনের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের উত্তম স্থান হিসেবে বাংলাদেশকেই বেছে নেবেন। এদিকে সম্প্রতি সিসিপিআইটির ভাইস চেয়ারম্যান চ্যান ঝহু এক সেমিনারে বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশে বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যেই রয়েছে। আমরা আস্থা নিয়ে এদেশের বিনিয়োগ পার্কে বিনিয়োগ করব। আমাদেরই অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা এদেশে বিনিয়োগ করতে চান। চামড়া, অবকাঠামো, তৈরি পোশাক, ওষুধ, অটোমোবাইলসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা চিন্তা করছি আমরা। চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য চীনে রফতানি করে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৈষম্য দূর করা সম্ভব।
×