ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানী শিশুকে ফেরত দিল ভারত

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পাকিস্তানী শিশুকে ফেরত দিল ভারত

ভারতে নিজ সন্তান ইফতেখার আহমদকে নিয়ে গিয়েছিলেন তার পিতা। এগারো মাস পর পাঁচ বছর বয়সী ওই শিশুকে পাকিস্তানে তার মার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার ভারত-পাকিস্তানের ওয়াগা সীমান্ত পথে ইফতেখারকে পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। খবর ডন ও বিবিসির। গত বছর একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ভান করে ইফতেখারের বাবা গুলজার আহমদ ছেলেকে ভারতে নিয়ে যান। তার মা রোহিনা কায়ানি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে রয়ে যান। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের গান্দেরবাল গ্রামে গুলজারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ১৯৯০ সালে তিনি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে চলে যান। ওই সময় ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিদ্রোহ চরম আকার ধারণ করেছিল। সামরিক প্রশিক্ষণের উদ্দেশেই গুলজার পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পাড়ি জমিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আছে। ২০১৬ সালের মার্চে গুলজারকে গ্রেফতার করে ভারতীয় পুলিশ। তাকে তারা নিজেদের হেফাজতে নিয়ে যায়। কিন্তু গোল বাধে তার সঙ্গে থাকা শিশু সন্তান ইফতেখারকে নিয়ে। সে তার বাবাকে ছাড়া থাকতে না চাওয়ায় তাকেও পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। পাঁচদিন ধরে ইফতেখার পুলিশ হেফাজতে থাকার পর তাকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিতর্ক দেখা দেয়। পরে ইফতেখারের বাবাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়। ভারতের একটি আদালত শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিলে ভারত ও পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়। গত বছর স্বামী গুলজারের বিরুদ্ধে ছেলেকে ‘অপহরণের’ অভিযোগ করেছিলেন রোহিনা। জানিয়েছিলেন, ২০০২ সালে বিয়ের পর এক দশকের মধ্যেও কোন সন্তান না হওয়ায় ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ইফতেখারকে দত্তক নেন তারা। ২০০৫ এর ভয়াবহ ভূমিকম্পে রোহিনার পরিবারের অনেকেই মারা যান, তাদের মধ্যে তার ছোট ভাই ইফতেখারও ছিল। যে কারণে পরে ভাইয়ের নামে ছেলের নাম রাখেন, বিবিসি উর্দুকে সে সময় বলেছিলেন রোহানি। ২০১৬ সালে গুলজার খাইবার পাখতুনখোয়ায় এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বলে ইফতেখারকে নিয়ে যান বলে জানান রোহানি। তিনদিন ধরে ফোনে না পেয়ে গুলজারের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে রোহানি বুঝতে পারেন, তার স্বামী তাকে না জানিয়ে ছেলেকে দুবাই হয়ে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নিয়ে গেছে। এরপরই থানায় অভিযোগ করেন তিনি। রোহানির এ অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে গুলজারের পরিবার। তাদের দাবি, গুলজারই ইফতেখারের জন্মদাতা পিতা। একজন বাবা কি করে তার সন্তানকে অপহরণ করতে পারে? আমার নাতি তার বাবাকে এতটাই ভালবাসে যে সে তার বাবাকে ছাড়তেই চায়নি। গত বছর বাবাকে ছাড়া থানা ছাড়তে ইফতেখারের অস্বীকারের সময় গুলজারের বাবা মোঃ মকবুল এমনটাই বলেছিলেন। ইফতেখার ‘দত্তক নেয়া সন্তান নয়’ বলেও তখন দাবি করেছিল গুলজারের পরিবারের সদস্যরা। গুলজারের ভাই জুবায়ের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, ইফতেখার তার ভাইয়ের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। ওই স্ত্রী মারা যাওয়ার পর প্রথম স্ত্রীর ঘরে ইফতেখারকে রেখেছিলেন গুলজার। পরে সৎ মায়ের কাছ থেকে তাকে ভারতে নিয়ে আসা হয় বলে জানান তিনি। ইফতেখারকে ফিরে পেয়ে উচ্ছ্বসিত মা রোহিনা এ ঘটনাকে ‘অলৌকিক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। শনিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছেলেকে ফিরে পাওয়ার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। ইফতেখারকে ফিরিয়ে আনায় পাকিস্তান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রোহানি।
×