ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২০ বছরে প্রথম

সংসদে বিশেষ অধিকার ক্ষুণ্ণের নোটিস কণ্ঠভোটে গৃহীত

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭

সংসদে বিশেষ অধিকার ক্ষুণ্ণের নোটিস কণ্ঠভোটে গৃহীত

সংসদ রিপোর্টার ॥ সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে ২০ বছরেরও বেশি সময় পর একজন সংসদ সদস্যের নামে প্রকাশিত একটি নিউজকে কেন্দ্র করে আনীত বিশেষ অধিকার ক্ষুণেœœর নোটিস গ্রহণ করেছে জাতীয় সংসদ। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সম্পাদিত ডেইলী অবজারভারে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট নিয়ে রাজশাহী-৪ আসনের সরকারী দলের সংসদ সদস্য এনামুল হক সংসদে ‘বিশেষ অধিকার ক্ষুণ্ণে’র নোটিস উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। তিনি ছবি দিয়ে ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় এই বিশেষ অধিকার ক্ষুণেœœর নোটিসটি উত্থাপন করেন। কণ্ঠভোটে পাসের পর ওই সংসদ সদস্যের আনীত অধিকার ক্ষুণ্ণের নোটিসটি সংসদের বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সংসদের এই স্থায়ী কমিটি অভিযোগটি তদন্ত এবং প্রয়োজন হলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁকে কমিটিতে তলব করারও অধিকার রাখে বলে সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মাগরিবের নামাজের বিরতি শেষে সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী বিশেষ অধিকার ক্ষুণেœœ নোটিসটি অধিবেশনে তুলে ধরেন। প্রস্তাবটি স্পীকার ভোটে দিলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। সরকার ও বিরোধী দলের অধিকাংশ সদস্যই প্রস্তাবটির পক্ষে হাত উঁচিয়ে এবং ‘হ্যাঁ’ বলে সম্মতি জানান। প্রস্তাবটি পাসের পর স্পীকার নোটিসটি সংসদের বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করেন। সংসদীয় সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই যুগ পর সংসদ অধিবেশনে কোন সংসদ সদস্যের উত্থাপিত বিশেষ অধিকার ক্ষুণেœœর নোটিস গৃহীত হলো। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত পঞ্চম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন ইউসুফ (পরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী) বিমানবন্দরে তাঁকে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে না দেয়ায় সংসদে বিশেষ অধিকার ক্ষুণেœœর নোটিস উত্থাপন করেছিলেন। তৎকালীন স্পীকার প্রয়াত শেখ রাজ্জাক আলী প্রস্তাবটি অধিবেশনে অনুমোদনের পর তা সংসদের বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠিয়েছিলেন। এরপর গত ২০ বছরে শতাধিক বিশেষ অধিকার ক্ষুণেœœর নোটিস উত্থাপন করলে তার একটিও সংসদে আলোচনা কিংবা গৃহীত হয়নি। বিশেষ অধিকার ক্ষুণেœœর নোটিস উত্থাপন করে সরকারী দলের সংসদ সদস্য এনামুল হক অভিযোগ করেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সৈনিক হিসেবে ২০০৮ সাল থেকে এই সংসদে একজন সদস্য হিসেবে জনপ্রতিনিধিত্ব করছি। দেশ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে সেই সময়ে যারা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে জঙ্গীবাদী হিসেবে কলঙ্কিত করেছে, যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা জাতির জনককে হত্যা করে আবার পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল তাদের ষড়যন্ত্র থেকে নেই। তারা সবসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন থেকে দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন, দেশ যখন এগিয়ে যায়, তখনি ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমার বিরুদ্ধে হঠাৎ করে একটি পত্রিকায় কোন তথ্যবিহীন ছবি দিয়ে নিউজ করে আমার চরিত্র হনন করে। আমাদের যারা নির্বাচিত করেছেন তাদের সামনে আমাদের বিতর্কিত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। গাইবান্ধায় নিহত সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের প্রসঙ্গে তুলে ধরে এনামুল হক বলেন, লিটন নিহত হওয়া নিয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা টেলিভিশনে বা কোথাও এখন আলোচনা করেন না। কিন্তু একটি ঘটনার পর কীভাবে আলোচনা ও লেখা হয়েছে মিডিয়াতে। এখন সংসদের এমপিদের নিয়ে তথ্যবিহীন অসত্য ছবি দিয়ে নিউজ করা হয়। স্পীকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি (স্পীকার) সংসদের অভিভাবক। আপনাকে অনুরোধ করব যারা অসত্য সংবাদ পরিবেশন করে এমপিদের চরিত্র হননে নেমেছে তাদের ডাকেন। আমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তারা যদি প্রমাণ দিতে পারে তাহলে জনপ্রতিনিধিত্ব করব না। কিন্তু যদি প্রমাণ দিতে না পারে তাহলে আপনার কাছে আমরা প্রতিকার চাই। তাদের সংসদে তলব করে তথ্য চান। তারা অনেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধেও মিথ্যা বানোয়াট খবর দিয়ে বিতর্কিত করেছে। তিনি বলেন, আমাকে নিয়েও একটি পত্রিকায় বিভ্রান্তিকর নিউজ দিয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে আমার অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে। এমন একটি পত্রিকা নিউজটি ছাপানো হয়েছে দুঃখজনক হলেও সত্য সেই পত্রিকার সম্পাদক হচ্ছেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমি আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি, লিগ্যাল নোটিস দিয়েছি। কিন্তু এই হাউসের আপনি গার্জিয়ান হিসেবে, আপনার কাছে আমি প্রতিকার চাই। আপনাকে বলব, এই রকমভাবে ভিত্তিহীন নিউজ যারা প্রকাশ করবে তাদের পার্লামেন্টে ডেকে কৈফিয়ত তলব করা। তারা যদি প্রমাণ দিতে পারে তাহলে আমি বলতে চাই প্রধানমন্ত্রীর সৈনিক হিসেবে আমরা তাঁর সদস্য হিসেবে তাঁকে বিতর্কিত করব না। আমরা পদত্যাগ করে চলে যাব। আর প্রমাণ দিতে না পারলে বিশেষ অধিকার কমিটিতে তাঁকে তলব করা হোক। সামনাসামনি করা হোক। প্রমাণ দিতে না পারলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। পরে স্পীকার কার্যপ্রণালী বিধির ১৬৮ বিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্য এনামুল হক আনীত অধিকার ক্ষুণেœœর নোটিসটি ভোটে দিলে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ‘হ্যাঁ’ উচ্চারণ করে তাতে সম্মতি জানান। ভোটের পর এনামুল হকের আনীত অধিকার ক্ষুণেœœর নোটিসটি সংসদের বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করেন। এই কমিটির সভাপতি হলেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রস্তাবটি পাসের পর সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে সংসদ সদস্য এনামুল হককে উৎসাহিত করেন। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, নবম জাতীয় সংসদে অধিকার ক্ষুণেœর ৭১টি আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু কোন আবেদনই সংসদ অধিবেশনে তোলা হয়নি। এমনকি বিশেষ অধিকার কমিটিতেও পাঠানো হয়নি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলেও এ নিয়ে একাধিক আবেদন জমা দেন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিরা। সেগুলোরও একই পরিণতি হয়। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, গত ২০ বছরে পাঁচ শতাধিক অভিযোগ জমা হলেও একটিও নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে সংসদ সদস্যরা এ নিয়ে অভিযোগ করার আগ্রহ হারান। সংশ্লিষ্টরা জানান, এমপিরা প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১৬৪ ধারায় প্রতিকার করে আবেদন করতে পারেন। আবেদন সংসদ অধিবেশনে তোলা হয়। গুরুত্বপূর্ণ হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন স্পীকার। আবার বিষয়টি অধিকতর তদন্ত বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হলে কমিটির কাছে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। কমিটি প্রতিবেদন দিলে সংসদ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
×