ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আড়াই হাজারের বেশি ছাত্র পড়ার সুযোগ পাবে এমআইএসটিতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

আড়াই হাজারের বেশি ছাত্র পড়ার সুযোগ পাবে এমআইএসটিতে

আনোয়ার রোজেন ॥ রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে অবস্থিত মিলিটারি সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর ফলে আড়াই হাজারেরও বেশি সামরিক-বেসামরিক শিক্ষার্থী এবং ৪০০ শিক্ষক-কর্মকর্তার জন্য আধুনিক ভৌত সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এ জন্য ধরা হয়েছে প্রায় ৪২১ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির চারটি অনুষদের আওতায় ১৩টি বিভাগের জন্য শ্রেণীকক্ষ, পাঠাগার, পরীক্ষাগার ও অন্যান্য সুবিধার সংস্থান করা হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের ‘ভিশন ২০২১’, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে মানসম্পন্ন প্রকৌশল শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরী। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এমআইএসটির বিভিন্ন বিভাগে গবেষণা সুবিধার উন্নয়ন হবে এবং শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যা সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে। একনেকে অনুমোদন পেলে এমআইএসটি কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রকৌশল শিক্ষা বিস্তারের জন্য মিরপুরের সেনানিবাসে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) এর কার্যক্রম ১৯৯৮ সালে শুরু হয়। প্রথমদিকে শুধুমাত্র সামরিক বাহিনীর শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পেতেন। ২০০১-২০০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে বেসামরিক শিক্ষার্থীরাও এখানে ভর্তির সুযোগ পান। এখন মোট শিক্ষার্থীর ৮০ শতাংশ বেসামরিক ও ২০ শতাংশ সামরিক বাহিনীর। তাছাড়া বর্তমানে বিদেশী শিক্ষার্থীরাও এখানে অধ্যয়ন করছেন। এমআইএসটিতে বর্তমানে চারটি অনুষদের আওতায় প্রকৌশল বিদ্যায় ১২টি বিষয়ে ¯œাতক কোর্স চালু রয়েছে। এগুলো হলো- সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স এ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, মেক্যানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, নেভাল আর্কিটেকচার এ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়ো-মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিউক্লিয়ার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্ট, ওয়াটার এ্যান্ড কোস্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং, স্থাপত্য বিদ্যা, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং পেট্রোলিয়াম এ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং। এছাড়া প্রতিষ্ঠান থেকে সাতটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর, তিনটি বিষয়ে এমফিল এবং পাঁচটি বিষয়ে পিএইচডি কোর্স চালু রয়েছে। এর আগে মিরপুর সেনানিবাস মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) জন্য অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়) শীর্ষক একটি প্রকল্প জুলাই ২০০৬ থেকে জুন ২০১০ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৩১ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, নতুন প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে- এমআইএসটির অভ্যন্তরে ১৪তলা ভিতে ১২তলা বিশিষ্ট দুটি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ, ১৩তলা ভিতে ১২তলা বিশিষ্ট পাঠাগার ও পাঠ ভবন নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষাগার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ আসবাবপত্র ক্রয় করা হবে। এ বিষয়ে আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এমআইএসটির মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এজন্য এর অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণ প্রয়োজন। সূত্র জানায়, এমআইএসটির অধিকতর উন্নয়ন ও এর অবকাঠমোগত সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য ৪৫৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি হতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়। এরপর গত বছরের ১২ জুন প্রকল্পের পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পিইসি সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৪২১ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকাল ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। জানা গেছে, প্রকল্পটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দহীনভাবে অনুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী বছর ভিত্তিক যে বরাদ্দ বিভাজন করা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে চলতি অর্থবছরের বাকি ছয় মাসে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ৬২ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রায় ৮৮ কোটি টাকা, এর পরের অর্থবছরে প্রায় ১৯১ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় ১৪২ কোটি টাকা। উল্লেখ, প্রকল্পের সম্পূর্ণ ব্যয় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো হবে।
×