ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চলছে উন্নয়ন কাজ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রামকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চলছে উন্নয়ন কাজ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামকে একটি পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে এগিয়ে চলেছে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ। যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার ও নতুন সড়ক নির্মাণের পাশাপাশি সাগরপাড়জুড়ে গড়ে তোলা হবে পর্যটন স্পট। বাস্তবায়নাধীন আউটার রিং রোড প্রকল্পের সঙ্গে সংযোজন ঘটছে নান্দনিকতার। এ লক্ষ্যে আরও ১১শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক), যা দিয়ে সাগরপাড়ে আউটার রিং রোডের সঙ্গে হবে বেড়ানোর জায়গা। আর ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড থেকে বায়েজিদ সংযোগ সড়কে থাকবে ধীরগতির গাড়ির পৃথক লেন। চউক সূত্রে জানা যায়, পর্যটনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সংশোধিত আউটার রিং রোড প্রকল্পে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতকে বিশেষ পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তোলা। পতেঙ্গা থেকে হালিশহর পর্যন্ত সাগরপাড়ের পাঁচ কিলোমিটার সড়ক হবে বিশেষ পর্যটন এলাকা। সেখান থেকে পর্যটকরা দেখতে পাবেন সমুদ্রের বিশাল জলরাশি। বসার জন্য স্থাপন করা হবে বেঞ্চ। একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার পর্যটকের স্থান সঙ্কুলান হওয়ার মতো ব্যবস্থা রাখা হবে। দেশের দূর-দূরান্ত এবং বাইরে থেকে আসা পর্যটকদের কাছে সাগর-নদী ও পাহাড়সমৃদ্ধ বন্দরনগরীকে তুলে ধরতেই এ মহাপরিকল্পনা। সরকারও চট্টগ্রামকে সেভাবেই গড়ে তুলতে আগ্রহী। আউটার রিং রোড প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাস্তবায়নাধীন সংশোধিত প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের চেহারা পাল্টে যাবে। আউটার রিং রোডসংলগ্ন পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় থাকবে ৬টি জেটি, যা দিয়ে বোটিং করতে পারবেন পর্যটকরা। সাগরপাড়ে ৫০ ফুট জায়গা রাখা হবে ওয়াকওয়ে হিসেবে। থাকবে কিছু নির্দিষ্ট দোকান, কিডস জোন, গ্রীন জোন ও পার্কিং সুবিধা। সিমেন্ট ক্লক থাকবে সাগরের অংশে সীমানা দেয়ালের পাশাপাশি। সবকিছুই হবে পরিকল্পিত। পরিকল্পনার বাইরে কিছুই রাখার সুযোগ থাকবে না। পর্যটকরা সেখানে বেড়াতে গিয়ে নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন। প্রসঙ্গত, সাগরপাড়ে আউটার রিং রোডের কাজ ইতোমধ্যেই ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে বিভিন্ন স্থানে ব্লক বসানোর কাজ। চলছে বিভিন্ন স্থানে সøুইসগেট নির্মাণের কাজ। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এ আউটার রিং রোড একই সঙ্গে কাজ করবে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ হিসেবে। চউক গৃহীত প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে। এর জন্য ব্যয় নির্ধারিত ছিল ১ হাজার ৪১৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা দিচ্ছে ৭১৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা আর বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৬৯৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বৃহৎ এ প্রকল্প এবং চউকের ঢাকা ট্রাঙ্ক রোড-বায়েজিদ সংযোগ সড়কের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরও ১১শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ মেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নে আর কোন সমস্যা নেই। ডিটি-বায়েজিদ সড়কের কাজ সম্পন্ন হলে কক্সবাজারগামী যানবাহনগুলোকে আর চট্টগ্রাম শহর হয়ে যাতায়াত করতে হবে নাÑ এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই গ্রহণ করা হয়েছিল এ পরিকল্পনা। তবে আউটার রিং রোড কাজ করবে কর্ণফুলী টানেলের এ্যাপ্রোচ সড়ক হিসেবে। যদি তাই হয় তাহলে কক্সবাজারের গাড়িগুলো চলাচল করতে পারবে সে পথে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে আরও আকর্ষণীয়, নান্দনিক ও মনোরম হিসেবে গড়ে তুলতে একের পর এক গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্প। চট্টগ্রামবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকারও ছিল তাই। চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য কোন প্রকল্প নিয়ে গেলে তাতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মেলে। এটি তাঁর আন্তরিকতারই বহিঃপ্রকাশ। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের চেহারা বদলে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
×