ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

একই পরিবারের আট নারী কুস্তিগীর

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৪ ডিসেম্বর ২০১৬

একই পরিবারের আট নারী কুস্তিগীর

রুমেল খান ॥ ধ্বস্তাধ্বস্তির খেলা কুস্তি। উনিশ শতাব্দীর উৎসব সমারোহে পার্শ্ব প্রদর্শনী হিসেবে কুস্তি খেলার উৎপত্তি হয়। এতে প্রধানত শক্তিমত্তা ও শরীরী দক্ষতা প্রদর্শিত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে কুস্তির সঙ্গে ৮ সংখ্যার একটা সম্পর্ক আছে এবং সেটা বাংলাদেশে! কিভাবে? বলছি। সবাই জানেন, আট একটি সংখ্যা। আচ্ছা, আট নিয়ে কি কি হতে পারে বলুনতো? প্রহর হলো আটটি (অষ্টপ্রহর), দিক হলো আটটি (অষ্ট দিক), স্বর্গ হলো আটটি, বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ, সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড, অক্টোপাস এবং মাকড়সার পা ৮টি, অক্সিজেনের পারমাণবিক সংখ্যা ৮টি, বাংলা বর্ণমালার অর্ধমাত্রার বর্ণ ৮টি, বিশ্ব সাক্ষরতা দিবস ৮ সেপ্টেম্বর, আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চ ... ঘাঁটলে আট নিয়ে হয়তো আটটি মজার তথ্য পাওয়া যাবে। সেগুলো নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে বরং ৮-এর সঙ্গে কুস্তি সম্পর্কিত আসল মজার তথ্যটি পাঠকদের জানান যাক। তবে সেটা বরং কুইজের মতো প্রশ্নাকারে করে। প্রশ্নটা হচ্ছে বাংলাদেশ কুস্তি ফেডারেশনের স্টাফ মোঃ মহিউদ্দিনের পরিবার ও আত্মীয় মিলে কতজন কুস্তিগীর আছেন? উত্তর হচ্ছে : আটজন। ৫১ বছর বয়সী মহিউদ্দিন কুস্তি ফেডারেশনে আছেন ৩৩ বছর ধরে। ‘খাস ঢাকাইয়া’ মহিউদ্দিনের নানাও (রূপাই মাজি, নামটা একটু অদ্ভুতই) একসময় কাজ করেছেন এই ফেডারেশনে। জনকণ্ঠের সঙ্গে আলাপচারিতায় (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেশিয়ামে ‘মার্সেল বিজয় দিবস পুরুষ ও মহিলা কুস্তি প্রতিযোগিতা’ চলাকালে) মহিউদ্দিন জানান, তার পরিবার ও আত্মীয় সব মিলে আট সদস্য এই প্রতিযোগিতায় কুস্তিগীর হিসেবে অংশ নিচ্ছেন এবং তাদের সবাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ও সবাই মহিলা। মহিউদ্দিনের মাধ্যমে জানা গেল এই আটজনের নাম। এদের একজন তার খালাতো বোন, একজন চাচাতো বোন, পাঁচজন শ্যালিকা এবং একজন ভাতিজি। খালাতো বোন ঊষা খাতুন। তিনি খেলেন ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে। শ্যালিকারা হলেন : জান্নাতুল ফেরদৌস ফারহিন শিখা (৭৫ কেজি), রুনা খাতুন (৫৫ কেজি), আইরিন আক্তার নিপা (৫৮ কেজি), নাসরিন আক্তার (৫৩ কেজি) এবং ফরিদা ইয়াসমীন রুমী (৪৮ কেজি)। চাচাতো বোন আসমা খাতুন (৬০ কেজি) এবং ভাতিজি হ্যাপি খাতুন (৪৮ কেজি)। এদের সবাই একসঙ্গে খেলোয়াড়ী কোটায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি পান ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি। ফরিদা ছাড়া বাকিরা সবাই সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার আগে কুস্তি খেলতেন রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে। আর ফরিদা খেলতেন নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে। এই আট জনের সবাই কমবেশি কুস্তি খেলে সাফল্য পেয়েছেন। যেমন : ঊষা ২০১৫ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্য, ২০১৩ জুনিয়র ন্যাশনালে স্বর্ণ, ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসে তাম্র, শিখা ২০১৫ সালে রৌপ্য, রুনা ২০১৫ সালে এসএ গেমসে স্বর্ণ, ২০১৩ জুনিয়র ন্যাশনালে রৌপ্য, নিপা ওই আসরেই রৌপ্য, আইরিন ২০১৩ জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ, আসমা রৌপ্য, হ্যাপি ২০১৬ স্বাধীনতা দিবস কুস্তিতে রৌপ্য, ২০১৩ জুনিয়র ন্যাশনালে রৌপ্য, নাসরিন ২০১৫ ও ২০১৬ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ, ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসে তাম্র, ফরিদা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ। আইরিন আবার বক্সিংও খেলে থাকেন। ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসে তাসম্রপদক জিতেছিলেন তিনি। ঊষাও তাই। ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসে ৬০ কেজিতে তিনি জিতেছিলেন রৌপ্যপদক। শুধু তাই নয়Ñ ঊষার ছোট বোন আসমা মনি আবার বক্সার। তিনি অবশ্য খেলেন আনসারের হয়ে। ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসে তিনি ৪৮ কেজিতে রৌপ্য জিতেছিলেন। এই আটজনের কুস্তি খেলার পাশাপাশি লেখাপড়াটাও চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ স্নাতক, কেউ উচ্চ মাধ্যমিকে। এদের মধ্যে সবার আগে কুস্তি খেলা শুরু করেন শিখা, রুনা ও নিপা ২০০৯ সাল থেকে। পরিবার ও আত্মীয় মিলে আটজনই সেনাবাহিনীর কুস্তিগীর- বিষয়টা কেমন লাগে? শিখা জানান, ‘এটা অনেক মজার ব্যাপার। আমরা তো বটেই, অন্যরাও বিষয়টা নিয়ে আলাপ করে। ভালই লাগে।’ কুস্তি নিয়ে সবার ভবিষ্যত লক্ষ্য? সবার একটাই উত্তর- এসএ গেমসে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চাই এবং স্বর্ণ জিততে চাই। ভবিষ্যতে বিয়ে করলে এবং সন্তান হলে কি তাদেরও কুস্তিগীর বানাবেন? ঊষা বলেন, ‘কুস্তিগীর নয়, বক্সার বানাব।’ মহিউদ্দিন বলেন, ‘এই আটজনকে নিয়ে আমার গর্বের শেষ নেই। ওরা নিজেদের যোগ্যতাবলেই এতদূর এসেছে। আশাকরি আগামীতেও তারা সাফল্য পেয়ে আরও এগিয়ে যাবে।’ মহিউদ্দিনের কথা কতটা বাস্তবে রূপ নেবে, সেটা সময়ই বলে দেবে।
×