ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

তুলনা ছেড়ে সুখে থাকুন

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৪ নভেম্বর ২০১৬

তুলনা ছেড়ে সুখে থাকুন

আমাদের জীবনে কত না সমস্যা। বক্তিগত, পারিবারিক কিংবা জাতীয়। আলাদা আলাদা উল্লেখ করলে হয়ত অন্ত-মিলবে না। জীবনের সবটাই যে হতাশার তা কিন্তু নয়। ভালভাবে বেঁচে থাকার সবুজ সম্ভাবনাও অনেক। নিজ সৃষ্টি সমস্যা বা অপ্রীতিকর বিষয়গুলো এরিয়ে চললে ইতিবাচক জীবন ভোগ করা যায়। সময়ের সঙ্গে সবকিছু বদলায়। জীবনযাপন খাদ্যাভাস থেকে শুরু করে সমাজ সামাজিকতাও। অতীতের সঙ্গে বর্তমানের তফাত হলো এই। জীবনে যা কিছু ঘটছে বা যটবে তার সিংহভাগই সমসাময়িক। অর্থাৎ বর্তমানকে নিয়েই জীবন। অধুনা আমরা এক ধরনের কমপ্লেক্স জীবনযাপন করি। এক্ষেত্রে নিজেদের নির্ঝঞ্ঝাট ভাবা বা রাখা দুরূহ। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, আসলে সত্যই কি আমরা জটিল জীবনযাপন করছি? নাকি নিজেরাই নিজেদের জটিল করে ফেলছি? একটা পারিবারিক গল্প বলা যাক। সাদিয়া আফরিন লেখাপড়া জানা একজন উচ্চ শিক্ষিত পেশাগত জীবনে নিয়োজিত আধুনিক নারী। ব্যক্তিগত জীবনে স্বামী সংসারও এক সন্তানের মা। মেয়ে নাবিলা। বয়স ৮। স্বামী বেসরকারী ব্যাংকের মধ্যপদস্থ কর্মকর্তা। বাড়িতে শাশুড়ি ও এক ননদ তাদের সঙ্গে থাকেন। সব মিলে পাঁচজনের সংসার তার। মেয়ে নাবিলার দেখাশোনা স্কুলে নিয়ে যাওয়া সবটাই ননদ-শাশুড়ি করে থাকে। এছাড়া বাড়িতে রান্নাবান্না কি হবে। বাজার কি হবে। এসব ও দেখভাল তারাই করেন। মাস শেষে স্বামী-স্ত্রী বেশ মোটা অঙ্কের টাকা বাড়িতে আনেন। যে কারণ জীবনযাপনে অর্থাভাবের লেস মাত্রটি নেই। অর্থাৎ, অর্থ সংশ্লিষ্ট সবই তাদের মেটে। বছরে দুটি ঈদ, দুটি বাৎসরিক ছুটিও একত্রে ভোগ করেন। তাদের এই জীবনযাপনে আপাত দৃষ্টিতে কোন সঙ্কট পাবেন না। এমন দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্বাভাবিক। যে খানে কোটি কোটি দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর দেশ আমার বাংলাদেশ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিক্ত বাস্তবতা হলো সাদিয়া ব্যক্তিগত পারিবারিক ও পেশাগত জীবনে মোটেও সুখী নয়। তার সমস্যাগুলো বহ্যিক নয় মানসিক। প্রথমত তাঁর মেয়ে স্কুলে লেখাপড়ায় ভাল নয়। সে ক্লেসে তৃতীয় সারির ছাত্রী। এক্ষেত্রে তার পরিতাপ হলো ওই স্কুলে তার সহকর্মীর ছেলেও পরে, যে কিনা ক্লেসের দ্বিতীয় বয়। এদিকে অফিসে তার পাশের ডেস্কের সমপদের সহকর্মী গেল মাসে একা ভাল ইনক্রিমেন্ট পেয়েছে। বেতনও বেড়েছে হাজার চারেক টাকার। এদিকে স্বামী জায়েদ ইকবাল, গত দুই বছর আগে একটা ইনক্রিমেন্ট পেয়েছে। তারপর আর কোন খবর নেই। অথচ গেলমাসে জায়েদের সহকর্মী একটা টয়োটা প্রিমিও মডেলের গাড়ি কিনেছে। বাড়ি ননদ থাকে তাঁর লেখাপড়া খরচ, মায়ের প্রায়ই অসুখ করে। তাকে ডাক্তার দেখানো ডায়াগোসিস করানো এবং ওষুধপত্র কেনা। অথচ জায়েদের ছোট ভাই ও মেজ বোন ও কিন্তু বড় বড় শহরের বাসিন্দা। তবে তাদের কাছেই এরা স্থায়ী কেন? এমন প্রশ্নও শক্তভাবে বাসা বেঁধেছে। সাদিয়ার মনে। সবমিলে দাম্পত্য জীবনে বোঝাপড়ার খুব অভাব। এসব কারণে অন্তর্মহলে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। প্রথম দর্শনে যে কেই আফরিনকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে জানবেন। দ্বিতীয় দর্শনে আফরিন কে পৃথিবীর সব থেকে অসুখী মানুষ জানবেন। আসলে মূল কারণ কি? সবই কি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যর্থতা, নাকি অন্য বিবেচনা? একটু ধীর স্থীর হয়ে বিবেচনা করলে আপনি নিজেই উপলব্ধি করবেন। অসলে সমস্যার বেশিরভাগই তার নিজ সৃষ্টি। দ্বান্দ্বিক চিন্তা চেতনা ও অন্যকে অনুকরণের ফল। যে কারণে তার সব থেকেও যেন কিছুই নেই। তার মেয়ে, স্বামী কিংবা সংসার সবই কেন অন্যের মতো নয়। এক্ষেত্রে কে তাকে শান্তি দেবে শান্ত¡না দেবে! কিভাবেই থাকবেন তুষ্ট। এসব বাহ্যিক নয় অভ্যন্তরীণ। এসব বিষয় নিজে থেকে সহজভাবে এরিয়ে না গেলে কেউ তাকে ফেরাতে পারবে না । যে কারণে অধরাই থেকে যাবে তার সুখ। আসলে এটা কেবল আফরিনের সমস্যা নয়। তবত সমাজ, জীবনের সমস্যা। অন্যকে অনুকরণ কিংবা পরশ্রীকাতরতা আমাদের ভেতর শক্ত করে বাসা বেঁধেছে। কিভাবে আমরা শান্তি পাব? নাকি পরিতাপের হতাশায় ডুবে যাব। না এমনটা হতে পারে না। সুখে থাকার, ভাল থাকার যথেষ্ট কারণ আছে। সেগুলোর কাছেই আমাদের ফিরতে হবে। ভুলতে হবে অন্যকে, অন্যের শ্রীকে। ভাবতে হবে ইতিবাচক ভাবনা। জীবনে যা কিছু অর্জন তা যেন হয় পরমপ্রাপ্তির। তাহলেই নামবে চোখের পাতায় আঠালো ঘুল। জীবনে আসবে নবীন সূর্যের সোনালি আকাশ। জীবন হবে কচি ঘাসের মতো নিষ্পাপ।
×