ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টেনিস আমার ধ্যান-জ্ঞান ॥ মুসকান

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ১১ নভেম্বর ২০১৬

টেনিস আমার ধ্যান-জ্ঞান ॥ মুসকান

রুমেল খান ॥ যখন আপনি আন্ডারডগ, তখন নিজের খেলাটা খেলতে হবে একেবারেই চাপমুক্তভাবে। যথাসম্ভব খেলাটা উপভোগ করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ হারানোর তো কিছু নেই। এভাবেই খেলে জয় কুড়িয়ে নিয়েছি। দৃঢ়বিশ্বাস ছিল, যদি লড়াই করতে পারি, তাহলে অবশ্যই জিতব। জেতার রহস্য এটাই। এখন পর্যন্ত এটাই আমার ক্যারিয়ারের সেরা ও স্মরণীয় ম্যাচ। মুসকান গুপ্তা। দিল্লীর মেয়ে। পঞ্চদশী (জন্ম ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০১) এই সুদর্শনা বৃহস্পতিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওয়ালটন আইটিএফ জুনিয়র টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ আসরের মেয়েদের এককে মুসকান ঘটায় টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় অঘটনটি। সে ৬-৩, ৬-৪ গেমে হারিয়ে দেয় আসরের শীর্ষ বাছাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাটি লাফ্রান্সকে, যে কিনা মুসকানের চেয়েও অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। কিভাবে এল অপ্রত্যাশিত জয়টি? রহস্যটা কি? জনকণ্ঠের এমন প্রশ্নে তার উপরোক্ত উত্তর। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুসকানের বয়স যখন ১০, তখন তার স্কুলের টেনিস একাডেমিতে (শান্তি টেনিস একাডেমি) টেনিস খেলত। সেটা নিতান্তই শখের বশে, সময় কাটানোর জন্য। একপর্যায়ে তার বাবা টেনিস খেলার ব্যাপারে উৎসাহী করে তোলেন মুসকানকে। বাবা যদিও টেনিস খেলতেন না। তিনি ছিলেন বডিবিল্ডার। বডিবিল্ডিংয়ে আমার আগ্রহ ছিল না। বাবা আমাকে বোঝালেন বডিবিল্ডিং না করেও ফিটনেস ধরে রাখা যায়। সেটা টেনিস খেলে। পরে আমার মাও আমাকে টেনিসটা সিরিয়াসলি খেলতে বলেন। এভাবেই টেনিসে আসা। টেনিসে হাতেখড়ির গল্পটা শোনায় মুসকান। ভারতের বাইরে এটা মুসকানের তৃতীয় কোন আইটিএফ টুর্নামেন্টে খেলতে আসা। এর আগে এ বছরই সে গত মে মাসে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা এবং অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে গিয়ে খেলেছে। সেখানকার রেজাল্ট তেমন আহামরি কিছু ছিল না। জাকার্তায় দ্বিতীয় রাউন্ড এবং কলম্বোতে সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছিল। এবার ঢাকায় এসেও সেমিতে উঠলো সে। এ প্রসঙ্গে মুসকানের বক্তব্য, এর আগে অনেক প্রতিযোগীকে হারালেও কখনও কোন আসরের শীর্ষ বাছাইকে হারাইনি। এবারই প্রথম হারালাম (ক্যাটিকে)। এজন্য খুব ভাল লাগছে। কারণ আমি ক্যাটির মতো বহু দেশ ঘুরে খেলিনি। এত ম্যাচও খেলিনি। উল্লেখ্য, ক্যাটির একক র‌্যাঙ্কিং যেখানে ৪৯১, সেখানে মুসকানেরটা ১১৮০। সেমিতে মুসকানের প্রতিপক্ষ তারই স্বদেশী, আসামের মেয়ে তানিশা কাশইয়াপ। মজার ব্যাপার, এই আসরের দ্বৈতে তানিশা আবার মুসকানেরই পার্টনার। সঙ্গী যখন প্রতিপক্ষ, তখন বিষয়টা কেমন? হুম, বিষয়টা মজারই। তানিশার বিরুদ্ধে এর আগেও খেলেছি এবং হেরেছি (দিল্লীতে, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে)। শুক্রবারের সেমির ম্যাচে সেই ফেবারিট। তবে আন্ডারডগ হয়েও কিন্তু আমি টপ সিডেড ক্যাটিকে হারিয়েছি। হয়তো বা আমি ফাইনালেও উঠে যেতে পারি বা চ্যাম্পিয়নও হয়ে যেতে পারি। কিছুই অসম্ভব নয়।’ মুসকানের দৃপ্ত উচ্চারণ। জুনিয়র আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এখনও কোন ট্রফি না জিতলেও স্কুল এং আঞ্চলিক পর্যায়ে ৩২টি শিরোপা জিতেছে মুসকান, সেগুলোর বেশিরভাগই এককে। টেনিসের আদর্শ? রজার ফেদেরার। শুধু খেলার জন্যই নয়, তার আচরণ, নিষ্ঠা, পরিশ্রম করার মানসিকতাÑ সবকিছুরই গুণমুগ্ধ আমি। মেয়েদের মধ্যে ভাল লাগে সেরেনা উইলিয়ামসের খেলা। সানিয়া মির্জা অনেকবারই দিল্লীতে খেলতে এসেছেন। তার খেলা মাঠে বসে দেখেছি। খেলার বিষয়ে তার কাছ থেকে কোন টিপস না পেলেও তার লেখা আত্মজীবনী পড়েছি এবং অনুপ্রাণিত হয়েছি। এখন পর্যন্ত বড় কোন চোট না পেলেও প্রতিবছর অন্তত একবার পিঠের বাঁ দিকের একটা পুরনো ব্যথা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে মোটামুটি ভোগায় মুসকানকে। টেনিস নিয়ে ভবিষ্যত লক্ষ্য? সবারই লক্ষ্য থাকে, নাম্বার ওয়ান হওয়া এবং গ্র্যান্ডসø্যাম জেতা। তবে আমি এভাবে ভাবি না। আমি সাফল্য পেতে চাই ছোট ছোট ধাপ অতিক্রম করে। আপাতত প্রাথমিক লক্ষ্য ডব্লিউটিএ র‌্যাঙ্কিংয়ের আওতায় আসা। তারপরের লক্ষ্য শীর্ষ ২০-এ স্থান করে নেয়া। টেনিস বাদে মুসকান পছন্দ করে ব্যাডমিন্টন খেলা দেখতে আর ফুটবল খেলতে। প্রিয় ফুটবলার পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। ক্রিকেটার-ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির খেলা ভাল লাগলেও সার্বিকভাবে ক্রিকেট খেলা পছন্দ নয় মুসকানের। ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই খেলাটি সম্পর্কে তার ভাষ্য, ক্রিকেট খেলা মোটেও ভাল লাগে না। এটা সময়ের অনেক অপচয় করে এবং অন্য খেলার ক্ষতি করে। বিশ্বে মাত্র ১২টি দেশ ক্রিকেট খেলে। কোন বৈচিত্র্য নেই এবং এটা একঘেঁয়েমিতে পূর্ণ। মুসকানের খেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য? কাউন্টার পাঞ্চ করা। দু’হাতে ব্যাকহ্যান্ড স্ট্রোকই হচ্ছে আমার মূলশক্তি। শখ? পড়াশুনা ও খেলে এমনিতেই হাতে খুব একটা সময় পাই না। তারপরও যতটুকু সময় পাই, কোন একটি চলমান বা সমকালীন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার চেষ্টা করি। এগুলো অবশ্য কোথাও ছাপাতে লিখি না। ব্যক্তিগত আনন্দের জন্যই লিখি। বাংলাদেশে এই প্রথম আসা। কেমন লাগছে সবকিছু? এখানকার আবহাওয়া ভারতের মতোই। তাই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি। এখানকার মানুষরা খুবই মিশুক, ভাল, অতিথি ও সহযোগিতাপরায়ণ। শুধু ট্রাফিক জ্যামটাই অসহ্য লেগেছে। সবশেষে মুসকান বলেন, টেনিসই আমার প্রথম প্রেম। এটা মিশে আছে আমার অস্তিত্বে। এটা ছাড়া জীবন-যাপন কল্পনাই করতে পারি না। এজন্য ঠিক করেছি যখন খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেব, তখন কোচ বা সংগঠক হিসেবে টেনিসের সঙ্গেই থাকব।
×