ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শীত আসছে ॥ নামছে খেজুরের রস, বাড়ছে হাঁড়ি বিক্রি

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১ নভেম্বর ২০১৬

শীত আসছে ॥ নামছে খেজুরের রস, বাড়ছে হাঁড়ি বিক্রি

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ হেমন্তের শুরু থেকেই গাছিরা শীতের সুস্বাদু খেজুরগাছের মিষ্টি রস সংগ্রহের প্রস্তুতি হিসেবে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন। পাড়া-মহল্লায় খাড়ি ও রাস্তার পাশের খেজুরগাছের ডাল কেটে, চেঁছে-ছিলে উপযোগী করে তোলা হয়েছে রস সংগ্রহের জন্য। ইতোমধ্যেই কোন কোন এলাকায় খেজুরের রস সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুর আলাদা স্বাদ-বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তেমনি শীতকালের সুমিষ্ট স্বাদ হলো খেজুরগাছের রস। শীতকালে বাঙালীর চিরাচরিত ঐতিহ্য পিঠা-পায়েস খেতে খেজুরের গুড় উৎকৃষ্ট উপাদান। শীতের তীব্রতা এখনও দেখা না দিলেও একটু বেশি লাভের আশায় ইতোমধ্যেই খেজুরগাছের রস সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে অনেকেই। বসন্তকাল পর্যন্ত চলবে রস সংগ্রহের কাজ। তবে শীতকালেই রস বেশি সুস্বাদু হয়। এক সময় নওগাঁ জেলা খেজুরের রস ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড়। কয়েক বছর আগেও জেলার বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলের পাশে ও রাস্তার দুই পাশে ছিল অসংখ্য খেজুরগাছ। কোন পরিচর্যা ছাড়া প্রাকৃতিকভাবেই বেড়ে উঠত এসব খেজুরগাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো লালি ও গুড়। অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এলাকার চাহিদা পূরণ করে বাড়তি গুড় সরবরাহ করা হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানে বসতবাড়ি কিংবা ক্ষেত-খামারের পাশে এমনকি রাস্তাঘাটের পাশে আর আগের মতো খেজুরগাছ চোখে পড়ে না। বগুড়া বগুড়া থেকে সমুদ্র হক জানান, শীতের আগমনী বারতায় শীত উদযাপনের নানা পরিকল্পনা নেয়ার পালা শুরু হয়েছে। শীতের অন্যতম আকর্ষণ পিঠাপুলি। আর এই পিঠা তৈরিতে মাটির হাঁড়ি পাতিল না হলেই নয়। শীত মৌসুমকে সামনে রেখে মাটির হাঁড়ি পাতিল বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বর্তমানে গ্রামীণ জীবন ছাড়াও শহুরে জীবনেও পিঠা বানাতে মাটির হাঁড়ি পাতিলের ব্যবহার বেড়েছে। বাঙালীর ঋতু বৈচিত্র্যের এই দেশে কতই না অনুষঙ্গ। গ্রামীণ জীবনে ঐতিহ্যের অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। এসেছে আধুনিক জিনিসপত্র। প্রযুক্তিও যোগ হয়েছে। যতই পরিবর্তন ও রূপান্তর হোক ঐতিহ্যের গর্ব আলাদা। যেমন মাটির হাঁড়ি পাতিল। এখন আর রান্নার কাজে মাটির পাতিলের সেই ব্যবহার নেই। গ্রামীণ জীবনেও রান্নাবান্নায় এসেছে সিলভারের হাঁড়ি পাতিল। খড়ির চুলার স্থলে এসেছে এলপিজি চুলা। সিলভারের হাঁড়ি পাতিলে আর যাই রান্না হোক পিঠাপুলি সহজে তৈরি করা যায় না। অনেক পিঠা সিলভারের হাঁড়ি পাতিলে হয়ও না। মাটির পাতিলে পাটি সাপটা, তেল পিঠা, কুশলি পিঠা, গড়গড়ি পিঠা, ভাপা পিঠাসহ অন্যান্য পিঠা সুস্বাদের হয়। খড়ির চুলার তাপে মাটির পাতিলে শুধু পিঠাই নয়, ভাত তরকারি রান্নাও হয় স্বাদের। মাটির পাতিলের পিঠা ও অন্যান্য রান্না স্বাস্থ্য সম্মত। এর অন্যতম কারণ মাটির পাতিল তাপ শোষণ করার পর তাপ দেয়। রান্না হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত। পিঠা পুলির ক্ষেত্রেও তাই। সিলভারের পাতিলে পিঠা পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মাটির পাতিলে তা খুবই কম। যে কারণে পিঠা পুলি তৈরিতে মাটির পাতিলের কোন বিকল্প নেই। শীতের প্রাক্কালে হেমন্তের এই সময়ে শহরে গ্রামে মাটির পাতিল বিক্রির ধুম পড়েছে। কুমোররা বলছেন, শীতের আগের সময় থেকে বসন্তের দিনগুলোতে মাটির হাঁড়ি পাতিল বিক্রি বেড়ে যায়।
×