ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিরপুরে স্পিন না পেস- ভাবাচ্ছে দু’দলকেই

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

মিরপুরে স্পিন না পেস- ভাবাচ্ছে দু’দলকেই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ উপমহাদেশের উইকেট মানেই স্পিনারদের জন্য সাফল্যময় নৈপুণ্যের দারুণ এক মঞ্চ। আর এই স্পিনের ফাঁদে পড়ে নাকানি-চুবানি যা খাওয়ার এশিয়ার বাইরে থেকে আসা দলগুলোই খেয়ে যায়। এবার সফরকারী ইংল্যান্ডও বাংলাদেশে আসার পর থেকেই স্পিনারদের দাপটে সংগ্রাম করছে। বিশেষ করে তাদের সেই সংগ্রামটা আরও কঠিনতম হয়েছে সিরিজের প্রথম টেস্টে। বাংলাদেশের স্পিনাররা চট্টগ্রাম টেস্টে ইংল্যান্ডের দুই ইনিংস থেকে নিয়েছে ১৮ উইকেট, ইংলিশ স্পিনাররা পেয়েছে ১২ উইকেট। পক্ষান্তরে ইংল্যান্ডের পেসাররা নিয়েছেন ৮ উইকেট এবং বাংলাদেশের পেসাররা সাকুল্যে ১ উইকেট নিতে পেরেছেন। সাগরিকা টেস্টই প্রমাণ করে স্পিন আক্রমণে বাংলাদেশের আর পেস আক্রমণে ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ শক্তিশালী। আজ শুরু সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের পরিসংখ্যান বলছে স্পিনাররাই এখানে উইকেট প্রাপ্তিতে পেসারদের তুলনায় এগিয়ে। কিন্তু বোলিং গড় আর স্ট্রাইকরেটে এগিয়ে পেসাররাই। সেক্ষেত্রে সাগরিকায় যেভাবে স্পিনারদের একক আধিপত্য ছিল সেটা পাল্টে গিয়ে মিরপুরে বাংলাদেশের স্পিনের সঙ্গে জ্বলে উঠবে ইংল্যান্ডের পেস বিভাগ? নাকি সার্বিকভাবেই জ্বলে উঠবেন পেসাররা? প্রশ্নটা উঠছে ম্যাচের আগেরদিন থেমে থেমে কয়েক দফা বৃষ্টির কারণে। বৃষ্টি পাল্টে দেয় উইকেটের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আর্দ্র উইকেটে স্পিনের চেয়ে কার্যকর হয়ে ওঠে পেস! ধারাবাহিকভাবে টেস্ট খেলে বাংলাদেশ সফরে এসেছে এবার ইংল্যান্ড দল। দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে নিয়মিতই দুর্দান্ত নৈপুণ্য তাদের। আর বাংলাদেশ দল সাড়ে ১৪ মাস পেরিয়ে গেছে কোন টেস্ট না খেলে সেই দলটির মুখোমুখি হয় চট্টগ্রামে। অনেক শঙ্কা ছিল স্বাগতিকদের ভাল নৈপুণ্য দেখান নিয়ে। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে আবার ইংলিশরা চার নম্বরে। সেখানে বাংলাদেশ প্রায় ভাঙ্গাচোরা একটা দল নিয়ে নেমেছিল। দু’দলের মধ্যে বিস্তর ফারাকটা তাই আগেভাগেই বোঝা যাচ্ছিল এবং আশঙ্কা ছিল বাংলাদেশের চরম ভরাডুবি হওয়ার। কিন্তু বিশাল এই পার্থক্যটা কমিয়ে একেবারে সমান করে ফেলেছিলেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা হিমশিম খেয়েছেন বাংলাদেশী স্পিনের বিরুদ্ধে ঠিকভাবে খেলতে গিয়ে। ব্যর্থ হয়েছেন উপমহাদেশে এশিয়ার বাইরে থেকে আগত কোন দেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক ইংলিশ অধিনায়ক এ্যালিস্টার কুকও। রান পাননি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তরুণ ব্যাটসম্যান জো রুট। এ দু’জনই দুই ইনিংসে বধ হয়েছেন বাংলাদেশী স্পিনারদের কাছে। এই টেস্টের আগে বাংলাদেশের কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহেই আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমাদের দলে ২০ উইকেট নেয়ার মতো বোলার নেই!’ তার সেই আক্ষেপ ঘুঁচিয়ে জ্বলে ওঠেন অভিষিক্ত ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান। দুই ইনিংসেই ৩০০ রানের নিচে মুখ থুবড়ে পড়েছে ইংল্যান্ডের ইনিংস। ১৮ উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। দুই ইনিংসে ২৯৩ ও ২৪০ রান করতে পেরেছে তারা। এ দুটোই তাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বনি¤œ টেস্ট স্কোর। শক্তিমত্তার বিশাল তারতম্যটা এ কারণেই কমে গেছে এবং শেষদিন পর্যন্ত স্বাগতিকরা ছিল সাগরিকায় জয় তুলে নেয়ার মতো অবস্থানে। শেষ পর্যন্ত সেটা হয়নি। এমন স্পিন স্বর্গেও ইংলিশ পেসাররা দারুণ বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের দুই ইনিংসেই পেসার বেন স্টোকস ম্যাচের নিয়ন্ত্রণটা স্বাগতিকদের হতে দেননি। নিজেদের স্পিনারদের সঙ্গে সমান তালে লড়েছে তারা তুলনামূলকভাবে মিরপুরের উইকেট সাগরিকার সদৃশ নয়। এখানে পেসার এবং স্পিনারদের লড়াইটা সমানে-সমান। অতীত পরিসংখ্যানও সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। এখন পর্যন্ত মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ১৪ টেস্ট হয়েছে। এই ১৪ টেস্টে সবমিলিয়ে খেলেছেন ৭০ পেসার। ৩৫.৩৮ গড়ে তারা শিকার করেছেন ১৮১ উইকেট। অনেক কম ওভার বোলিং করেছেন তারা স্পিনারদের চেয়ে। এরপরও মিরপুরের উইকেটে বোলিং গড়ে এগিয়ে পেসাররা। ৮২ জন স্পিনার ৩৬.৯২ গড়ে ২০২ উইকেট নিয়েছেন। তবে সাগরিকার অভিজ্ঞতা অনুসারে স্বাগতিক হিসেবে বাংলাদেশ দলের জন্য মিরপুরেও হয়তো এবার স্পিনের গোলকধাঁধা তৈরি করা হবে। ইংলিশ পেসাররা এখানে ২০১০ সালে একটিই মাত্র টেস্ট খেলেছে। সে ম্যাচে ৬ পেসার নিয়ে খেলে অবশ্য আহামরি কোন সাফল্য আসেনি, ৮ উইকেট পেয়েছিলেন পেসাররা। আর ১২ উইকেট নেন দলটির স্পিনাররা। সর্বশেষ দুই বছরে তেমন টেস্ট খেলেনি বাংলাদেশ। মাত্র ৪ টেস্ট হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ উইকেট নিয়েছেন স্পিনাররা আর পেসাররা নিয়েছেন ৪৫ উইকেট। তবে বৃহস্পতিবার ম্যাচের আগেরদিন কয়েক দফা বৃষ্টি এবং আজ দিনে বৃষ্টির জোর সম্ভাবনা থাকায় পেসারদের জন্য স্বর্গ হয়ে উঠতে পারে মিরপুরের উইকেট। সেক্ষেত্রে স্পিনারদের পেছনে ফেলে দাপুটে হয়ে যেতে পারেন পেসাররা। আর সেক্ষেত্রে এগিয়ে ইংল্যান্ডই। তাদের দলে স্টুয়ার্ট ব্রড, স্টিভেন ফিন, বেন স্টোকস, ক্রিস ওকসদের মতো দারুণ কয়েকজন পেসার আছেন। আর বাংলাদেশ দলে মাত্র দু’জন পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি ও শুভাশীষ রায়ই আছেন। এর মধ্যে রাব্বি মাত্র এক টেস্ট খেলেছেন আর শুভাশীষ এখন পর্যন্ত কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলেননি। হয়তো আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বাংলাদেশর জন্য।
×