ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দারিদ্র্যের বিস্তার ;###;কর্মসংস্থান ;###;দুর্বল শ্রম অভিবাসন ;###;সব খাতে বীমা

সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রম খাতে ৪ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২১ অক্টোবর ২০১৬

সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রম খাতে ৪ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দারিদ্র্য বিমোচনের সাফল্য ধরে রাখতে বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ও শ্রম খাতের চারটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। এগুলো হলো- দারিদ্র্যের ব্যাপক বিস্তার, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান এবং দুর্বল শ্রম অভিবাসন ব্যবস্থা। এছাড়া টেকসই সামাজিক নিরাপত্তার জন্য সব খাতে বিমা চালু করা এবং বিবিধ বৈষম্য দূরীকরণে বিদ্যমান শ্রমবাজারে সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। এ দুটি খাতে চলমান বিভিন্ন কর্মসূচী পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশ সোশাল প্রোটেকশন এ্যান্ড লেবার রিভিউ : টুওয়ার্ডস স্মার্ট সোশাল প্রোটেকশন এ্যান্ড জবস ফর দি পুওর’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দারিদ্র্য বিমোচনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে। তাই চলমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচী, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ এবং শ্রমবাজার বর্ধিতকরণ কর্মসূচীকে শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এজন্য সামাজিক বিমা চালু করতে হবে। সরকারী খাতের মতো পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে হবে বেসরকারী সব খাতকে। ক্ষুদ্রঋণের পরিচালন ব্যয় ও সুদের হার এখনও অনেক বেশি। বর্তমানে এই সুদের হার সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ। এই সুদ হার দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। তাছাড়া মানসম্মত উদ্যোক্তা তৈরিতে ক্ষুদ্রঋণের দুর্বল ভূমিকার বিষয়টিও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে চলমান ঋণ বিতরণ কর্মসূচীগুলোর সঙ্গে উৎপাদনশীল শ্রমবাজারের সম্পর্ক দুর্বল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের নেয়া সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর অবদান রয়েছে। তবে কর্মসূচীর আওতাধীন উপকারভোগীর সংখ্যা দরিদ্রদের মোট সংখ্যার চেয়ে কম। এজন্য কর্মসূচীর আওতা বাড়ানো, ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রায় অভিন্ন কর্মসূচীগুলোকে একটি কর্মসূচীতে রূপান্তর করা এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনার মান উন্নত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় শক্তি। তবে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। সংশ্লিষ্ট দেশের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরি, ডাটাবেজ তৈরি, শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজতর করা ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ৩৯ শতাংশ মানুষের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছর। শ্রমবাজারে প্রবেশ করা তরুণ-তরুণীর সংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে। এদের জন্য স্থায়ী ও মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া খাতভিত্তিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণের অনুপাত এবং মজুরি বৈষম্যের বিষয়েও বাংলাদেশকে সতর্ক করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১ কোটি ২৯ লাখ কর্মসংস্থানের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এটি অর্জন করা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। কর্মক্ষম মানুষকে কাজ দিতে না পারা একটা ব্যর্থতা। আমরা ব্যর্থ হতে চাই না। সরকার যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় রেখে এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর মতো অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য দারিদ্র্য লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেশন রির্সাচ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ড. রুশিদান ইসলাম রহমান, সমাজকল্যাণ সচিব মোঃ জিল্লার রহমান, বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তা ইফফাত শরীফ প্রমুখ।
×