ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির কথা জানার আগ্রহ ছিল অনেক বিদেশীর

ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে দিনভর সম্মেলন, অভিজ্ঞতা বিনিময়

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে দিনভর সম্মেলন, অভিজ্ঞতা বিনিময়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক শ’ পেশাজীবী ‘দ্য বেস্ট অব ডিজিটাল মার্কেটিং’ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্রমাগত উন্নতির কথা জানতে বিভিন্ন দেশের আইটি মার্কেটিংয়ের অভিজ্ঞরা হাজির হন। দিনব্যাপী এই সম্মেলনে বেশ কয়েকটি পর্ব ছিল। প্রতিটি পর্বেই ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর কোন স্বপ্ন নয়। এটা বাস্তব। তার প্রমাণ আজকের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন। বিশ্বের অনেক দেশ থেকেই এখানে আইটি সেক্টরের অভিজ্ঞরা হাজির হয়েছেন। তারা আমাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা সম্পর্কেও জেনে যাচ্ছেন। আমরা যে এই সেক্টরে অনেক দূর এগিয়ে গেছি তাতে কোন সন্দেহ নেই। সোমবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিটপি লিও বার্নেট ও মাইটি বাইট আয়োজিত ডিজিটাল মার্কেটিং সম্মেলন সকাল নয়টায় শুরু হয়ে শেষ হয়েছে বিকেল সাড়ে চারটায়। সকালে জার্মানির মিডিয়াকম বিয়ন্ড এ্যাডভার্টাইজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নরম্যান ভাগনারের উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় সম্মেলনের। ভাগনার ডিজিটাল আধেয় ও ডেটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং তার প্রতিষ্ঠান মিডিয়াকমের তৈরি শেল, ডয়েচে টেলিকম ও জিলেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনী ক্যাম্পেন দেখান। এরপর নিজ নিজ উপস্থাপনা নিয়ে হাজির হন এস্তোনিয়ার বেস্ট মার্কেটিং ইন্টারন্যাশনাল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হান্ডো সিনিসালু, গ্রামীণফোনের ব্র্যান্ড কমিউনিকেশনসের লিড স্পেশালিস্ট রেফায়েত আহমেদ ও ভারতের ইন্টারফেস বিজনেস সলিউশনের (আইবিএস) প্রধান নির্বাহী বিক্রম ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়। ডিজিটাল মার্কেটিং সম্মেলন সম্পর্কে বিটপির ডিজিটাল মার্কেটিং পরিচালক নওশের রহমান বলেন, সম্মেলনে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে বিভিন্ন টুলস নিয়ে আলোচনা করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এই কাজের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। তাদের নিজেদের কার্যক্রমের সফল বিজ্ঞাপনী ক্যাম্পেনগুলো তুলে ধরেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে জড়িতরা তাদের কার্যক্রমকে সফল করার বড় ধারণাও পেয়েছেন। বিটপি লিও বার্নেটের ডিজিটাল কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর নওশের রহমান বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক মানের একটি সম্মেলন নিজেদের জন্যই আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, ইন্ডাস্ট্রির সবাইকে নিয়ে করলে সবারই উপকার হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আন্দোলন আরও একধাপ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এই আয়োজনের কারণে। একারণেই এ রকম একটি উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সবার কাছ থেকে অভাবনীয় সাড়া পাওয়া যায়। সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পুরস্কারজয়ী ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যাম্পেনের কেস স্টাডির ওপর ভিত্তি করে এই সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়। এই সম্মেলনে কথা বলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নর্ম্যান ওয়্যাগনার (ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মিডিয়াকম বিয়ন্ড এ্যাডভার্টাইজিং, জার্মানি), হান্ডো সিনিসালু (সিইও, বেস্ট মার্কেটিং ইন্টারন্যাশনাল এস্তোনিয়া), বিক্রম ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় (সিইও, আইবিএস- ইন্টারফেস বিজনেস সলিউশন, ভারত) ও রেফায়েত আহমেদ (লিড স্পেশালিস্ট, ব্র্যান্ড কমিউনিকেশনস, গ্রামীণফোন, বাংলাদেশ)। বিটপির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারাহ আলী ঘোষণা দেন, এখন থেকে প্রতিবছরই এই সম্মেলনের আয়োজন করা হবে। কারণ এই সম্মেলন থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিভাবে হচ্ছে, তারা এই মার্কেটকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তা বিনিময় হবে। বিনিময় হলেই বাংলাদেশের মার্কেটও প্রতিযোগিতামূলক এগিয়ে যাবে। বিশ্বের যে কোন দেশ থেকে অনলাইনে কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ করার ওপর বড় ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন হবে। আয়োজকরা বলেন, সম্মেলন থেকে সোশ্যাল মিডিয়া, মোবাইল মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, বিগ ডেটা ও রিয়েল টাইম মার্কেটিংসহ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের প্রায় সব দিক সম্পর্কে জানা যাবে। ‘দ্য বেস্ট অব ডিজিটাল মার্কেটিং ওয়ার্ল্ড ট্যুর ২০১৬’-এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হলো বেস্ট অব ডিজিটাল মার্কেটিং সম্মেলন। গত জানুয়ারিতে লাটভিয়ার রাজধানীতে শুরু হয়ে আমস্টারডাম, ইস্তানবুল, ম্যানিলা ও কুয়ালালামপুরে এ সম্মেলন হয়। সম্মেলনে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি দিয়ে আগেই রেজিস্ট্রেশন করে ছিলেন। সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মাইটি বাইট ও বিটপি লিও বার্নেট মিলে আন্তর্জাতিক মানের একটি ডিজিটাল কনফারেন্সের আয়োজন সত্যিই বড় একটি ঘটনা। দেশে ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে এত বড় সম্মেলন এই প্রথম। দেশ তথ্য প্রযুক্তি খাতে এগোনোর ফলেই এরকম একটি আয়োজন হয়েছে। আমাদের সরকার ডিজিটাল অগ্রযাত্রার জন্য তিনটি বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এ্যাকসেসেবিলিটি, এ্যাভেই-লেবিলিটি এবং এ্যাফোর্ডেবিলিটি। ফলে সামনে এই খাতে আরও অগ্রগতি হবে, নতুন নতুন প্রতিভাবান ছেলেমেয়েরা যুক্ত হবে। তাদের জন্য মাইটি বাইট ও বিটপি লিও বার্নেট এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন অব্যাহত রাখবেন বলে আশা রাখছি। বিটপি এবং মাইটি বাইটের কাছে আমার অনুরোধ আজকের পরে এই সম্মেলন যেন শেষ না হয়ে যায়। ফেসবুকে ক্লোজড গ্রুপ কিংবা ই-মেল গ্রুপের মাধ্যমে যেন ডায়ালগ চলতেই থাকে। ভবিষ্যতে এই আয়োজনের জন্য আমাদের আইসিটি ডিভিশন যদি কোন কাজে আসতে পারে তা আমাদের জানাবেন। আমরা আগ্রহ নিয়ে তৈরি থাকব। আয়োজনের স্পন্সর ডি-মানির অন্যতম উদ্যোক্তা সোনিয়া বশির কবির বলেন, আমরা বরাবরই নতুন কিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকতে আগ্রহী। ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে বাংলাদেশের তরুণদের অমিত সম্ভাবনা আছে। এই কনফারেন্স থেকে আমরা পুরো ইন্ডাস্ট্রি লাভবান হবে বলে আমার বিশ্বাস। সম্মেলনে প্রায় বিশটি কেস স্টাডি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করা হয়। সাথে ছিল ক্রিয়েটিভ কাজের উদাহরণ এবং ক্লায়েন্ট ও তাদের এজেন্সির সাক্ষাতকার। পাশাপাশি পুরস্কার পাওয়া প্রতিটি কেস স্টাডির শিক্ষণীয় মূল বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। উল্লেখ্য, এই কেস স্টাডিগুলো পি এ্যান্ড জি শিক্ষা, ওল্ড স্পাইস ইন্ডিয়া, শেল্, ফক্সওয়াগন, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাংক, রেড বুল, এ্যাডকক ইনগ্রাম, ডেল, ¯িœকার্স, ম্যাকডোনাল্ডসসহ বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডে ক্যাম্পেনের উপরে ভিত্তি করে তৈরি করা। মাইটি বাইট (ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি) ও বিটপি লিও বার্নেট (ক্রিয়েটিভ এ্যাডভারটাইজিং এজেন্সি) বিভিন্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং দেশের সুপরিচিত দু’টি এজেন্সি। সম্মেলনে ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজিভিত্তিক (ফিনটেক) প্রতিষ্ঠান ‘ডি-মানি’র সহযোগিতায় এ সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনার ছিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, দৈনিক ইত্তেফাক, ঢাকা ট্রিবিউন ও একাত্তর টেলিভিশন।
×