ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৫ শতাংশ পরিবার ভোগ করে ঢাকার আয়ের ৪০ ভাগ

প্রকাশিত: ০২:২২, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

৫ শতাংশ পরিবার ভোগ করে ঢাকার আয়ের ৪০ ভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাত্র সাড়ে পাঁচ শতাংশ পরিবার ঢাকার বাসিন্দাদের মোট আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ ভোগ করে। এসব পরিবারের মাসিক আয় এক লাখ টাকার বেশি। অপরদিকে, ঢাকা শহরের মোট বাসিন্দার প্রায় ১৫ শতাংশ এখনো দারিদ্রসীমার নীচে রয়েছেন। এদের গড় মাসিক আয় আট হাজার টাকার কম। এর মধ্যে আবার চরম দরিদ্র নগরবাসীর সংখ্যা প্রায় ৩ শতাংশ। ঢাকার বাসিন্দাদের আয় বৈষম্যের এমন চিত্র তুলে ধরে তা কমানোর তাগিদ দিয়েছেন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, গ্রামীণ দারিদ্রের তুলনায় নগর দারিদ্রের প্রকৃতি ও মাত্রা ভিন্ন। রাজধানীর বস্তিগুলোতে বসবাসকারীদের একটি অংশ আর্থিক বিবেচনায় দরিদ্র নয়। তবে অভ্যস্ততা ও বাড়তি আর্থিক লাভের আশায় এরা বস্তিজীবন ছাড়তে চায় না। অন্য বস্তিবাসীদের জন্য মান সম্মত আবাসন, সুপেয় পানি, স্বাস্থ্যসেবা, গ্যাস ও সুলভ পরিবহন সেবা নিশ্চিত করাটা চ্যালেঞ্জিং। এজন্য সব শ্রেণির অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও পরিকল্পিত নগরায়ন জরুরী। শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এলজিইডি অডিটোরিয়ামে ‘নগর দারিদ্র ঃ একটি গবেষণা ও সমাধান’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) যৌথভাবে এ সম্মেলন আয়োজন করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পিপিআরসির নির্বাহী পরিচালক ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বক্তব্য রাখেন- অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সম্মেলনের প্রথম দিনে চারটি অধিবেশনে ১৫টির অধিক প্রবন্ধ ও প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দেশী-বিদেশী নগর বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া পিপিআরসির গবেষণা গ্রন্থ ‘দ্যা আরবান স্পেকট্রাম : মেট্রোপলিটন টু মফস্বল’ এদিন প্রকাশ করা হয়। চারটি স্তরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, আটটি সিটি কর্পোরেশন, চারটি উপজেলা শহর ও ১০ টি পৌরসভার মোট পাঁচ হাজার ৬০০ দরিদ্র পরিবারের ওপর এই গবেষণা করা হয়। এতে দেখা যায়, নগরকেন্দ্রিক দরিদ্র পরিবারগুলো যথাযথ স্যানিটেশনের আওতায় এসেছে। ঢাকার দরিদ্র পরিবারগুলোতে স্যানিটেশনের হার ৯৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৯৮ শতাংশ এবং নগরায়ন প্রভাবিত অন্য এলাকাগুলোতে এই হার ৯৬ শতাংশ। তবে ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রাম ও অন্য শহরগুলোর মধ্যে আয় বৈষম্য অনেক বেশি। তবে তিন ক্ষেত্রেই নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির (মাসিক আয় ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা) দাপট। ঢাকায় মোট বাসিন্দার ৪৭ শতাংশ, চট্টগ্রামের ৫৬ শতাংশ ও পৌরসভাগুলোর ৪৯ শতাংশ বাসিন্দা এই আয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, শহরের ওপর চাপ কমাতে সরকার গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। শহরে পাওয়া যায় এমন সব সুবিধা গ্রামাঞ্চলে দেয়ার চেষ্টা চলছে, যাতে শহরমুখী স্রোত কমে। ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হলে মানুষ শহরে আসবে না। এতে উন্নয়ন বৈষম্য কমে আসবে। প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, নগরায়ন উন্নয়নের একটি উঁচু স্তর। দারিদ্র হটিয়ে গ্রামাঞ্চলকেও এই স্তরে পৌঁছাতে হবে। সরকার এ লক্ষ্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে যারা উন্নয়ন কাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাদের মোকাবেলা করা দারিদ্র মোকাবেলার চাইতে কঠিন। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দারিদ্রের ধরণ, জীবনমান, সামাজিক স্তর ও কাঠামো ইত্যাদি বিবেচনায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পৌরসভায় ভিন্ন ভিন্ন রকমের সমস্যা। শহর ও পৌরসভার সেবার মানে অনেক পার্থক্য রয়েছে। সমস্যাগুলোর সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে পারলে ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন সহজ হবে। কীভাবে এই পার্থক্য কমিয়ে আনা যায় এই সম্মেলন থেকে তা বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আজ সম্মেলনের শেষ দিনে আরও পাঁচটি অধিবেশনে এসব সমস্যার সমাধান খোঁজা হবে।
×