ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইংলিশদের প্রতি ওয়ালশের আহ্বান

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ইংলিশদের প্রতি ওয়ালশের আহ্বান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘আমি বাংলাদেশে এসেছি, আপনারাও আসুন।’ ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) ও ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের উদ্দেশে বলেছেন বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ। ইনডিয়া টুডেতে ওয়ালশের মন্তব্য দিয়ে এমনই একটি নিউজ করা হয়েছে। নিরাপত্তার কারণ সামনে এনে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগান ও এ্যালেক্স হেলস যখন বাংলাদেশে না আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তখনই ওয়ালশ এমনটি জানিয়েছেন। নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই যে বাংলাদেশে এসেছেন ওয়ালশ, তাও বলেছেন। ওয়ালশ জানান, ‘সফরটা যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আমি একটু অবাক। তবে আমি নিশ্চিত তাদের (মরগান ও হেলস) দিক থেকেও যুক্তি আছে।’ সঙ্গে ওয়ালশ যুক্ত করেন, ‘ক্রিকেটের কথা যদি চিন্তা করলে আপনি সেরা খেলোয়াড়দেরই চাইবেন। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য এটা কিছুটা হতাশারই। একই সঙ্গে বলব, ইংল্যান্ডের কিছু সমর্থকের জন্যও এটা হতাশার।’ ওয়ালশ আরও বলেছেন, ‘আমি যদি একটি সফরে যাই এবং ওই সফর থেকে কিছু খেলোয়াড় সরে দাঁড়ায়, তখন আপনি কিছুটা হলে হতাশাবোধ করবেন এই জন্য যে, সবাই একসঙ্গে এই সফরে যাচ্ছে না। অবশ্যই একটি দলের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি চিন্তা করেন, সবাই চাইবে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের নিয়েই সফরে যেতে।’ নিরাপত্তার কোন সমস্যা দেখা দেবে না বলেও জানান ওয়ালশ, ‘আমি এখানে নিরাপদ বোধ করছি এবং আত্মবিশ্বাসী। নিরাপত্তাজনিত ঘটনা সবখানেই ঘটছে। এখানে আমাকে সর্বোচ্চস্তরের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।’ বাংলাদেশ যে নিরাপদ? এ চিত্র তুলে ধরেছে ব্রিটিশ প্রভাবশালী দৈনিক গার্ডিয়ানও। গার্ডিয়ানের সহকারী সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক-বিষয়ক কলামিস্ট সিমন টিসডাল এ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। লেখার শুরুতেই বাংলাদেশে উগ্রবাদীদের উত্থানের একটি চিত্র সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন। গত তিন বছরে এসব ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। টিসডাল বলেছেন, নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বাংলাদেশী। গত কয়েক বছরে ভিন্ন চিন্তার ব্লগার, লেখক, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, সমকামী আন্দোলনকর্মী, এমনকি শিয়া মুসলিমদের ওপরও একের পর এক সহিংস আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সাল থেকে এই আক্রমণের ধারা বদলে গিয়ে লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠেন বিদেশীরা। সবচেয়ে বড় সহিংস ঘটনা ঘটেছে গত জুলাই মাসে, গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয়। এ চিত্রগুলো তোলার সঙ্গে নিরাপদ ব্যাখ্যাও দাঁড় করান তিনি। তার প্রশ্ন, ক্রিকেট কি সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তু? জবাব, রেস্তরাঁর এই নৃশংস ঘটনার কারণেই পশ্চিমাদের সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে সফরের বিষয়ে; ভ্রমণের উপলক্ষ ব্যবসা হোক, পর্যটন কিংবা খেলা। তবে এমন নয় বাকিদের তুলনায় ইংল্যান্ডের খেলোয়াড় বা সমর্থকেরা বাড়তি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ বানচাল করে দেয়ার কোন সুনির্দিষ্ট ও প্রকাশ্য হুমকিও এখন পর্যন্ত নেই। ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসার কারণে এই সফরে বাংলাদেশের মানুষ আরও বেশি সতর্ক থাকবে, ‘বাংলাদেশীরা ক্রিকেটেরপাগল। নিরাপত্তার কারণে বড় ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলো পাকিস্তানে যাচ্ছে না। বাংলাদেশের মানুষ কোন অবস্থাতেই এমন নির্বাসন প্রত্যাশা করে না।’ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকি কতটা? এমন প্রশ্ন রেখে টিসডাল জবাব দেন, ইরাক ও সিরিয়াস আইসিস বিরোধী সামরিক অভিযানে যুক্তরাজ্যের সম্পৃক্ততার কারণে ইসলামি স্টেট ব্রিটিশ নাগরিকদেরও লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার দাবি করছে, দেশটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে আইসিসের কোন যোগসূত্র নেই। এগুলো দেশের অভ্যন্তরের উগ্রবাদীদের ঘটানো, যাতে মদদ দিচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা। ঢাকা তো বটেই, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও বিদেশীদের ভ্রমণকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রের উষ্ণ অভ্যর্থনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সফরকারী সমর্থকদের হোটেল থেকে গাইড, দোভাষী, স্থানীয় মোবাইল ফোন ব্যবহারে সাহায্য নেয়ার সময় ‘কমন সেন্স’ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন টিসডাল। যে কোন জায়গায় যেতে ট্যাক্সি বা রিকশা ব্যবহার করতে বলেছেন; রাতে একা একা হাঁটতে বারণ করেছেন। টিসডাল লিখেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যের কথা যদি মাথায় রাখা হয়, তাহলে ঢাকার চেয়ে লন্ডন-প্যারিসে যাওয়াই বরং বেশি ঝামেলার। পৃথিবীর যেখানেই যান, কোন অঘটনের শিকার তখনই হবেন, যদি আপনি হন সবচেয়ে দুর্ভাগাদের একজন।’
×