ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর কোরবানির হাট কানায় কানায় পূর্ণ

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

রাজধানীর কোরবানির হাট কানায় কানায় পূর্ণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কানায় কানায় পূর্ণ রাজধানীর কোরবানির হাটগুলো। তারপরও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাটগুলোতে স্রোতের বেগে পশু আসছে। দেশী পশুর সঙ্গে স্বল্প পরিসরে ভারত, নেপাল, মিয়ানমার ও ভুটানের পশুও আসছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে বিক্রি। তবে কতটা বেড়েছে তা নিয়ে বিক্রেতারাও খুব বেশি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ভাল দামে বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী বেপারিরা। সবমিলে জমে উঠছে রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলো। এদিকে পশুর হাটগুলোতে ২৪ ঘণ্টার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইজারাদারদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। হাট ও আশপাশের এলাকায় সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে র‌্যাব। সিটি কর্পোরেশন ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছে সার্বক্ষণিক পশু চিকিৎসকের। এছাড়া প্রতিটি হাটে মোবাইল কোর্ট, জাল টাকা চিহ্নিতকরণ মেশিন এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক পুলিশের মানি এসকর্ট টিম বসানো হয়েছে। শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর গাবতলী হাটে কানায় কানায় পূর্ণ কোরবানির পশুতে। তারপরও সারাদিন ট্রাকে ট্রাকে গরু আসতে দেখা গেছে। গাবতলী পশুহাটের পরিচালক সানোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, এবার এ হাটে পশুর কোন সঙ্কট হবে না। কোন ধরনের সমস্যা ছাড়াই সব ধরনের ক্রেতাই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কিনছেন। তিনি বলেন, রাজধানীতে গরু বা অন্যান্য গবাদি পশু কিনে রাখার মতো স্থান অনেকেরই নেই। তাছাড়া লালন-পালন করাও অন্যতম সমস্যা। তাই এই কয়েক দিনে খুব বেশি কেনাবেচা হয়নি। তিনি বলেন, শুক্রবার ভাল বিক্রির কথা অনেক বেপারি জানিয়েছেন। গাবতলী হাটে ১২টি ষাঁড় নিয়ে আসা পাবনার বেড়া উপজেলার পশু ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, নিজেদের খামারে পালন করা প্রায় একই আকৃতির ষাঁড়গুলোর দাম হেঁকেছেন ৭৫-৮০ হাজার টাকা। তিনি জানান, প্রচুর ক্রেতা আসছেন, দামাদামি হচ্ছে, দুইটি ষাঁড় বিক্রি করেছি। পছন্দের দাম পেলে বাকিগুলো বিক্রি করবেন বলে জানান। এ হাটে কোরবানির গরু দেখতে আসা মিরপুর এলাকার বাসিন্দা হাজী বাবুল ইসলাম জানান, ঈদের রাতে গরু কিনব। দাম বোঝার জন্য এসেছি। দেশী গরু বেশি। ভারত বা অন্যান্য দেশের গরু সংখ্যায় খুবই কম। এবার গরু বেশি দামে কেনা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না বলে তিনি জানান। সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক ক্রেতা ঘুরে ঘুরে গরু, ছাগল, উট ও দুম্বার দাম করছেন। মিনহাজুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, তিনি কিনতে আসেননি। দেখতে এসেছেন। উট বিক্রেতা আমজাদ হোসেন চারটি উট এনেছেন। দুই বছর আগে পাকিস্তান থেকে এসব উট আনেন। আমজাদ জানান, প্রতিটি উট ১০ লাখ টাকা দাম হাঁকছেন। কথা হয় দুম্বা বিক্রেতা আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। সপ্তাহখানেক আগে তিনটি দুম্বা সৌদি আরব থেকে এনেছেন। প্রতিটি দুম্বার দাম হাঁকছেন সাড়ে তিন লাখ টাকা। গাবতলী হাটের দায়িত্বরত পুলিশের এসআই এলিস মাহমুদ জানান, সম্পূর্ণ পশুরহাট ক্লোজড-সার্কিট ক্যামেরার আওতায় এনে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ১৩টি ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে আশপাশের এলাকার প্রতি নজর রাখা হচ্ছে। এ কাজে মিরপুরের ডিসির নেতৃত্বে ৬০ জন পোশাকধারী পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। এছাড়াও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন। আটজন করে র‌্যাব সদস্যও তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন। সোনালী ব্যাংকের পাশাপাশি র‌্যাব-পুলিশ সদস্যরা যন্ত্রের সাহায্যে জাল টাকা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাড্ডা আফতাবনগরের ইন্দুলিয়া-দাউদকন্দি-বাঘাপুর হাটে বিপুলসংখ্যক গরু ও ছাগল উঠেছে। শুক্রবার সারা দিন ট্রাকে ট্রাকে গরু আসতে দেখা গেছে। হাটের সার্বিক সহযোগিতার দায়িত্বে থাকা এসএম তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, বিক্রেতা ও ক্রেতাদের নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পুরো হাটে ৯৬টি ক্লোজড-সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ১২টি স্থান থেকে সেটি মনিটরিং করা হচ্ছে। নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক সদস্য সাড়ে তিন হাজার। স্বেচ্ছাসেবীরা বিক্রেতা বা ক্রেতাদের হয়রানি করতে পারেন এমন আশঙ্কা অনেকের-এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোন স্বেচ্ছাসেবক সদস্যের বিরুদ্ধে কারও সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জাল টাকা শনাক্তে হাট মালিকের পক্ষ থেকে ১২টি বুথে মেশিন বসানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি পুলিশ ও বেসরকারী ব্যাংকের পক্ষ থেকেও জাল টাকা শনাক্তে মেশিন রাখা হয়েছে। তিনি জানান, শুক্রবার কোরবানির পশু বিক্রি বেড়েছে। আগামী কয়েকদিন আরও বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বারিধারা সাঈদনগরের হাটটি বসেছে নতুন বাজার- বেরাইদ একশ’ ফুট সড়কের পাশে। বেপারিরা বলেন, ক্রেতারা আসছেন, দরদাম করছেন। অল্পস্বল্প বিক্রি হচ্ছে। মতিঝিল ব্রাদার্স ক্লাবের মাঠের পশুর হাটটি আশপাশের গলি-অলিতেও পৌঁছেছে। মধুমিতা সিনেমা হলের পেছনের সড়কে অনেক গরু রাখতে দেখা গেছে। পর্যাপ্ত পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। এ হাটে দুটি ওয়াচ টাওয়ারের একটি পুলিশ, অন্যটি র‌্যাব সদস্যরা ব্যবহার করছেন। যাত্রাবাড়ী সিটি কর্পোরেশন কাঁচাবাজার হাটটি মার্কেটের ভেতরের খালি জায়গা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। সামনের সড়কেও পশু রাখা শুরু করেছেন ইজারাদার। শ্যামপুর ও পোস্তগোলা হাটে যেসব পশু উঠেছে, সবই দেশী। ইজারাদার আসাদুজ্জামান রুবেল জানান, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুর এলাকার ব্যবসায়ীরা এ হাটে গরু এনেছেন। বিক্রি সেরকম বাড়েনি। এখনও হাটে গরু আসছে। কড়াইল টিএন্ডটি খেলার মাঠেরও হাটে পর্যাপ্তসংখ্যক পশু দেখা গেছে। হাটের আশপাশের সড়কগুলো ফাঁকা, কোন সড়ক দখল হয়নি। ফলে আশপাশের সড়কে চলাচলে দুর্ভোগ হচ্ছে না। ইজারাদার মজিবর রহমান জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি আমাদের স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। বিক্রি শুরু হয়েছে। এখনও হাটে পশু উঠছে এবং বিক্রি জমে উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। শুক্রবার খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজার কোরবানি পশুরহাট জমে উঠেছে। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার বেপারি হামিদ মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার ১৩টি গরু তুলেছেন হাটে। শুক্রবার তিনটি বিক্রি হয়েছে। তবে আজ শনিবার থেকে বেচাকেনা পুরোপুরি জমে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। পাবনার গরু ব্যবসায়ী আমিন উদ্দিন বলেন, তার ১০টি গরুর মধ্যে শুক্রবার দুটি বিক্রি হয়েছে। কাক্সিক্ষত দাম পেয়েছেন বলে জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে এবার স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ২৪টি কোরবানি পশুর হাট বসছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অস্থায়ী ১৪টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অস্থায়ী ৮টি ও গাবতলীতে একটি স্থায়ী হাট বসেছে।
×