ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পর্ষদের কোন্দলের দায় নিচ্ছে বিনিয়োগকারী

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ৩০ আগস্ট ২০১৬

পর্ষদের কোন্দলের দায় নিচ্ছে বিনিয়োগকারী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিএ্যান্ড এ টেক্সটাইলের পরিচালনা পর্ষদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের দায় নিতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। মূলত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পরিচালকের নিজেদের মধ্যে দূরত্বের কারণে তাদের এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বলে জানা গেছে। একই অবস্থা বস্ত্র খাতের অন্য কোম্পানি ফ্যামিলি টেক্সের শেয়ারের। সেখানেও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোন্দলের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে বর্তমানে এই দুটি কোম্পানির শেয়ারের দর অবস্থান করছে অভিহিত দরের নিচে। বর্তমানে ফ্যামিলি টেক্সের প্রতিটি শেয়ার ৮ টাকা এবং সিএ্যান্ড এর প্রতিটি শেয়ার ৮ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হচ্ছে। জানা গেছে, ফ্যামিলি টেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ মোরশেদ। অন্যদিকে কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রোকসানা মোরশেদ। উভয় সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। কিন্তু বাজার থেকে টাকা উত্তোলনের ২০১৩ সাল থেকে মোহাম্মদ মোরশেদ ও রোকসানা মোরশেদের মধ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ফলে উভয়েরই মধ্যে মতভেদের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যবসায়। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিএ্যান্ড এ টেক্সটাইলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জামাল উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, কোন কারণে পারিবারিক দ্বন্দ্ব হতেই পারে। একে ব্যবসার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা উচিত হবে না। আমি মনে করি তাদের মধ্যে যদি কোন ঝামেলা থেকেও থাকে তবে তার প্রভাব কোম্পানিতে পড়বে না। এছাড়া ২০১৩ সালের পর থেকে ক্রমাগত লোকসান শুরু হয় ফ্যামিলি টেক্সেও। সেখানেও কোম্পানিটির শীর্ষ কর্তাদের মধ্যে অর্থাৎ সিএ্যান্ড এ টেক্সটাইলের পরিস্থিতিই বিরাজ করছে। তালিকাভুক্তির পর থেকেই ফ্যামিলি টেক্স লিমিটেডের শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) কমেছে। গত ২০১৩ সালে প্রতিটি শেয়ারের ইপিএস হয় ৭.২৬ টাকা। ২০১৪ সালে তা নেমে আসে ৩.২৮ টাকায়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৯ মাসে প্রতিটি শেয়ারে ইপিএস নেমে এসেছে ১.৩৪ টাকায়। এদিকে কোম্পানিটির পরিচালকরা নিয়মিতই শেয়ার বিক্রি করে যাচ্ছেন। কোম্পানির তথ্যানুযায়ী ২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের শেয়ার ছিল ৬০.১২ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯.৯৭ টাকায়। এতে বিনিয়োগকারীদের মনে কোম্পানিটির ভবিষ্যত নিয়ে আশঙ্কা আরও বেড়েছে। ফলে এসব শেয়ারের ক্রেতা পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। এদিকে অন্য কোম্পানি সিএ্যান্ড এ টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ মোরশেদের স্ত্রী রোকসানা মোরশেদ। পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে তারও এ কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনায় মন নেই বলে কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে। ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা নাজুক থেকে নাজুক হচ্ছে। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ইপিএস ছিল ২.০১ টাকা। বর্তমানে (৯ মাসের) কোম্পানিরটির প্রতিটি শেয়ারের ইপিএস রয়েছে ১.০৯ টাকা। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, যে কোন কোম্পানিতে পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হলে, তার প্রভাব ব্যবসায় পড়া স্বাভাবিক। কারণ ব্যবসায় লোকসান হলে বিনিয়োগকারীরা লোকসানের কবলে পড়বে। তাই টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয়ার আগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে কারা আছে, তাদের সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরী। এ প্রসঙ্গে কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারি তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার খালেদ ইব্রাহিম বলেন, কোম্পানির পারিবারিক দ্বন্দ্ব বা পরিচালনা পর্ষদের যে কোন ধরনের কর্মকা-ের প্রভাব পড়ে তাদের ব্যবসায়। আর কোম্পানির প্রভাব পড়া মানে তাদের ব্যবসায় প্রভাব পড়া। যে প্রভাবে প্রভাবিত হন বিনিয়োগকারীরা। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের কারা আছে তা জেনে বিনিয়োগ করা। অন্যদিকে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের পরিচালক মোঃ রকিবুর রহমান বলেন, কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের বা ব্যবস্থাপনা সঙ্গে কারা জড়িত সেটিও কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ব্যবস্থাপনা পর্ষদ দক্ষের বা সমন্বয়ের ওপরও কোম্পানিটির ভাল মন্দ নির্ভর করে। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত দেখেশুনে বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদে কারা আছেন তা দেখে শুনে নেয়া।
×