ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

যারা আমার ছেলেকে জঙ্গী বানিয়েছে, সরকার যেন তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় ॥ রাব্বির বাবা

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৯ আগস্ট ২০১৬

যারা আমার ছেলেকে  জঙ্গী বানিয়েছে,  সরকার যেন তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয় ॥ রাব্বির বাবা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ায় শনিবার পুলিশের জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নিহত যশোরের ফজলে রাব্বী জিহাদে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। এ বছরের ৫ এপ্রিল রাব্বি ঘর ছাড়ে। এরপর শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জে পুলিশী অভিযানে জেএমবি নেতা তামিম আহমেদের সঙ্গে রাব্বীও নিহত হয়। ফজলে রাব্বী যশোরের কিসমত নওয়াপাড়ার বাসিন্দা উপশহর ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহর ছেলে ও যশোর সরকারী এমএম কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিল। শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জে পুলিশী অভিযানে জেএমবি নেতা তামিম আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে নিহত দুজনের একজন রাব্বি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার একটি জাতীয় পরিচয়পত্র সূত্রে রাব্বির পরিচয় জানা গেছে। তার বাড়ি যশোর উপশহরের কিসমত নওয়াপাড়ায়। গুলশান হামলার পর যশোর পুলিশ নিখোঁজ যে পাঁচজনের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছিল সেখানে ২ নম্বরে ছিল রাব্বি। ফেসবুক, ইন্টারনেটের মাধ্যমে জঙ্গীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে রাব্বি। স্থানীয়রা তাকে ভাল ছেলে বলেই জানতেন। রাব্বির বাবা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুল্লাহর বরাত দিয়ে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘গত রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জে নিহত একজনের ছবি দেয়া হয় আমার কাছে। আমি ছবিটি অধ্যক্ষ সাহেবকে দেখাই। উনি ছবিটি তার ছেলে রাব্বির বলে শনাক্ত করেন। তিনি ছবিটি দেখে খুবই মর্মাহত হয়েছেন এবং ভেঙ্গে পড়েছেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, যারা তার ছেলেকে জঙ্গী বানিয়েছে, সরকার যেন তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়।’ স্থানীয়রা জানান, রাব্বি গত ৫ এপ্রিল বাড়ি থেকে নিখোঁজ হলে তার বাবা হাবিবুল্লাহ ৭ এপ্রিল ছেলের নিখোঁজের তথ্য জানিয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করেন। তিনি তখন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তার ছেলের ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য কলেজেও তিনি আবেদন করেছেন। তাকে জিডি করতে সহযোগিতা করেছিলেন যশোর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল। স্থানীয়রা আরও জানান, বাড়ি ছাড়ার সময় ফজলে রাব্বী তার বোনকে বলে গিয়েছিল, সে জিহাদে যাচ্ছে, হাশরের ময়দানে দেখা হবে। আর স্থানীয় মসজিদের ইমাম ইয়াহিয়া রাব্বীর পিতাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তাকে বাড়ি ছাড়ার সুযোগ করে দিতে। ইমাম বলেছিল, তাকে যেতে না দিলে আপনি তো শহীদের পিতা হতে পারবেন না। প্রতিবেশীরা আরও জানান, জঙ্গী সংগঠনে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাব্বীর প্রায়ই ঝগড়া হতো। এ নিয়ে গোলযোগের বিষয়টি প্রকাশ্যই ছিল। ফজলে রাব্বীর নিখোঁজ ও মৃত্যুর বিষয়টি স্থানীয় পুলিশ অবহিত। জানা গেছে, যশোরে থাকতেই কাজী ফজলে রাব্বি জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এলাকায় মাথা নিচু করে চলা এই ছেলেটি যে নারায়ণগঞ্জে নিহত মাস্টারমাইন্ড তামিমের সহযোগী, তা অনেকেই ভাবতে পারছেন না। শনিবার রাতেই বিষয়টি প্রতিবেশীরা জানতে পারেন। রবিবার সকাল থেকে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় রাব্বির বাবা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুল্লাহর সঙ্গে। ‘মদীনা মনজিল’ নামে যশোর শহরতলীর কিসমত নওয়াপাড়া এলাকার দোতলা বাসার উপরতলায় তিনি থাকেন। নিচতলা ভাড়া দেয়া। অনেক অনুরোধ করার পর তিনি নিচতলায় নামেন। কিন্তু পর্দার আড়ালে থেকে দু’একটা কথা বলে আবার দ্রুত চলে যান। তিনি বলেন, ‘ছেলে মারা গেছে, শনিবার বিকেলে জানতে পেরেছি। তার বিষয়ে রিপোর্ট করেন, আমার কোন সমস্যা নেই। তবে, আমার ছেলেকে যারা জঙ্গী বানিয়েছে, বিষ খাইয়েছে, সরকার তাদের কেন ধরছে না?’ লাশ নিয়ে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমার ছেলের মরদেহ আনব।’
×