স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ডাম্বুলা স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা মাত্র ১৬ হাজার ৮ শ’। শনিবার লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) নিজস্ব ফেসবুক পেজে জানিয়ে দেয়া হয়, তৃতীয় ওয়ানডের সব টিকেট ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। সেটাই তো স্বাভাবিক। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে যে শেষ হচ্ছে দ্বীপদেশটির আধুনিক ওয়ানডের আরও এক অধ্যায়ের। কুলিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আজ শেষ বারের মতো পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচটি খেলতে নামছেন তিলকারতেœ দিলশান। সিরিজ শুরুর আগেও সেভাবে অনুমান করা যায়নি। কিন্তু কলম্বোয় দ্বিতীয় ম্যাচের পর এসএলসি এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয়, ডাম্বুলার ম্যাচটিই হতে যাচ্ছে দিলশানের শেষ ওয়ানডে। আশ্চর্যেও, গতকাল এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত দিলশানের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি! স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের ইঙ্গিত, ২০১৯ বিশ্বকাপ (ওয়ানডে, ইংল্যান্ড) সামনে রেখে ভবিষ্যতের দল তৈরি করতেই এসএলসি চল্লিশ ছোঁয়া (৩৯ বছর ৩১৮ দিন) তুখোড় এই তারকার সঙ্গে একটা রফা-দফা করে নিয়েছে।
পেছনের ঘটনা যাই হোক, সিরিজ ১-১এ চলমান। একই ভেন্যু কলম্বোয় প্রথম ম্যাচে ৩ উইকেটের জয়ে এগিয়ে গিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় লড়াইয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। ৮২ রানের বিশাল জয়ে সমতা ফেরায় এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের দল। টেস্ট সিরিজে ৩-০তে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হওয়ার পর আবার ধাক্কা। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রস্তুতির দুয়ো তুলে অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথকে দেশে ফিরিয়ে নেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। তার পরিবর্তে বাকি তিন ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেবেন ডেভিড ওয়ার্নার। আলোচনার বিষয় হতে পারত এটিই, কিংবা জীবনের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমে দুরন্ত বোলিং (৪/১৮) উপহার দেয়া বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার আমিলা অপনসো, অথবা অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জয়ের নায়ক সেনাপতি ম্যাথুজ। কিন্তু সেসব নয়, ডাম্বুলার এই ম্যাচে আজ সব কিছু ছাপিয়ে আলোচনায় দিলশান। স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা কম হলেও দ্বীপদেশটির ক্রিকেট পাগল মানুষের বিরাট একটা অংশ নিশ্চিত টিভিতে বুঁদ হয়ে থাকবেন।
দিলশান কেবল আধুনিক শ্রীলঙ্কারই নয়, দেশটির ইতিহাসেরই একজন সেরা ব্যাটসম্যান। পরিসংখ্যান বলে টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ তিন ধরনের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার সেরা ছয় রান সংগ্রহকের মধ্যে রয়েছে তার নাম। ৭৮ টি২০তে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৮৮৪, ৩২৯ ওয়ানডেতে চতুর্থ সর্বোচ্চ ১০২৪৮ ও ৮৭ টেস্টে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ ৫৪৯২ রান। ক্রিকেট ইতিহাসে সকল ভার্সনে সেঞ্চুরি আছে বিশ্বের এমন পাঁচ ব্যাটসম্যানের একজন দিলশান। বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই, তবে ব্যাটে রান পাচ্ছিলেন না, তেমন নয়। গত ২০১৫ সালটাও ছিল তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সফল এক বছর, করেছেন ১২০৭ রান। এ সময়ে টি২০তেও দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান ছিল তারই। ২০১৩ পরবর্তী সময়ে ওয়ানডে গড় ৪৯.১৮। ১৯৭৬’র ১৪ অক্টোবর রাজধানী কলম্বোর ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণের জেলা কালুতারায় জন্ম দিলশানের। ১৯৯৯ সালের নবেম্বরে জিম্বাবুইয়ে সফরে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমন। অভিষেকের পর অনেকটা সময় লোয়ার-মিডল অর্ডারে খেলেছেন। তবে টপ-অর্ডারে উঠে এসেই নিজের জাত চিনিয়েছেন মারকাটারি উইলোবাজ। ২০০৯ সাল থেকে নিয়মিত ওপেন করেছেন, ক্যারিয়ারে ২২ ওয়ানডে সেঞ্চুরির ২১টিই এসেছে এরপরে! শেষ ছয় বছরে প্রতি বছরই কমপক্ষে ৮’শ বা তার বেশি রান। গ্রেট মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারা বিদায়ের প্রস্তুতি নেয়ার পর কিছুদিন দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য সে ভূমিকায় খুব একটা সফল ছিলেন না। সাদা পোশাকে ১৬ সেঞ্চুরি ও ২৩ হাফ সেঞ্চুরির মালিক টেস্ট ছেড়েছেন ২০১৩ সালের মার্চে। চলতি বছরের শুরুতে ইংল্যান্ড সফরে যাননি। ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ সামনে রেখে প্রধান নির্বাচক সনাথ জয়সুরিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর। হয়তো তখনই তাকে বিষয়টি অবগত করা হয়, জানানো হয়, আগামী বিশ্বকাপ নিয়ে শ্রীলঙ্কার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় তিনি নেই। এই সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ২২ ও ১০ রান করার পরই সিদ্ধান্তটা পাকা হয়ে যায়। ৯ সেপ্টেম্বর কলম্বোয় টি২০ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন ‘দিলশানিয়া দিলস্কুপ’।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: