ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৌলভিত্তিক কোম্পানিকে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বেড়েছে

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৫ আগস্ট ২০১৬

মৌলভিত্তিক কোম্পানিকে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বেড়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নিজেদের কৌশলগত বা পর্যান্ত জানা শোনা না থাকায় পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করেন হুজকে গুজবে কিংবা অন্যের কথা শুনে। লাভের আশায় এ ভাবে বিনিয়োগ করলেও বেশিরভাগ সময়ই তার ফল শুভ হয় না। এই কারণেই ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা এখন ঝুঁকছেন ভালো মৌলভিত্তির বা ফান্ডামেন্টাল কোম্পানির দিকে। তাদের অভিমত, এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে লাভ কম হলেও লোকসানের ঝুঁকি কম। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বাজার সংশ্লিষ্টরাও। দীর্ঘদিন থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছেন এমন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় তাদের পছন্দের তালিকায় কিছু ভালো মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানি রয়েছে। তাদের বিবেচনায় শীর্ষে এগিয়ে থাকা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে গ্রামীন ফোন, আইডিএলসি, স্কয়ার র্ফামা, বার্জার পেইন্টস, রেকিটবেনকিজার, আইপিডিসি, তিতাস গ্যাস, মবিল যমুনা, সাবমেরিন ক্যাবল, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো, আরএকে সিরামিক, লাফার্স সুরমা সিমেন্ট, লিন্ডেবিডি, বিএসআরএম স্টিল, সিঙ্গার বাংলাদেশসহ আরও কিছু কোম্পানি। এ বিষয়ে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অনকে বলে থাকেন আমাদের দেশে ফান্ডামেন্টালের কোন ভিত্তি নেই। কিন্তু বিষয়টি আসলে তা নয়। তালিকাভুক্ত বেশকিছু কোম্পানি রয়েছে, যারা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগকারীদের অনেক ভালো রিটার্ন দিয়েছে। সে কারণে এসব কোম্পানিতে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। বিদেশীরা কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতা, করপোরেট গবর্ন্যান্স ও ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে। কারণ কোথায় বিনিয়োগ করছেন বিনিয়োগকারীদের তা দেখে নেয়া উচিত। আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এমন মনোভাব তৈরী হচ্ছে এটা ভালো লক্ষণ। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায় বিনিয়োগকারীদের পছন্দের এসব কোম্পানির বেশিরভাগই দীর্ঘদিন থেকে বিনিয়োগকারীদের সন্তোষজনক লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। অন্যদিকে এসব শেয়ারে দর খুব বেশি বাড়ার বা কমার প্রবনতা নেই। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্রামীণ ফোন ২০১৫ সালে বিনিয়োগকারীদের ১৪০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। গত এক মাসে এ শেয়ারের দর ২৫৪ টাকা থেকে ২৮৪ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে অন্তবর্তীকালীন লভ্যাংশ প্রদান করার জন্য এ শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। সম্প্রতি কোম্পানিটি ৮৫ শতাংশ অন্তবর্তীকালীন লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটির মতো লিন্ডেবিড়ির শেয়ারেও বিনিয়োগকারীদের চাহিদা রয়েছে। গত বছর ৩১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করা এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার গত এক মাসের মধ্যে ১ হাজার ৪১৩ টাকা থেকে ১৪৮৩ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। এদিকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো সর্বশেষ শেয়ার হোল্ডারদের ৫৫০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। গত এক মাসের লেনদেন চিত্রে দেখা যায় এ শেয়ারের দর সীমাবন্ধ থাকে ২ হাজার ৬৩৬ টাকা থেকে ২ হাজার ৬৪৮টাকার মধ্যে। এই তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানি রেকিট বেনকিজার সম্প্রতি ৬৫০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদাদের ঘোষণা দিয়েছে। এক মাসের মধ্যে এ শেয়ারের দর ১৫২৬ টাকা থেকে ১৫৯০ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়। অন্য কোম্পানি স্কয়ার ফার্মার শেয়ার এই সময়ের মধ্যে ২৬৪ টাকা থেকে ২৬৮ টাকার মধ্যে লেনদেন হয়। ওষধ খাতের এ কোম্পানিটি ২০১৫ সালে শেয়ার হোল্ডারদের ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। এইক সময়ে আইপিডিসির শেয়ারের দর ওঠানামা করে ৫৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৬১ টাকা ৭০ পয়সার মধ্যে লেনদেন হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিগত বছর ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানি তিতাস গ্যাস গত বছর ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করলেও এ প্রতিষ্ঠানে তাদের আস্থা রয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে এ কোম্পানির শেয়ার ৪৭ টাকা থেকে ৫০ টাকার মধ্যে কেনাবেচা হয়। এ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানি আরএকে সিরামিক ২০১৫ সালে বিনিয়োগকারীদের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। এক মাসের মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর ওঠানামা করে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৬২ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে সিঙ্গার বিডির শেয়ার গত এক মাসের মধ্যে ১৫১ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১৬৮ টাকা ৯০ পয়সার মধ্যে লেনদেন হয়। একইভাবে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোও সর্বশেষ সন্তোষজনক লভ্যাংশ প্রদান করেছে। আর গত একমাসের মধ্যে এসব শেয়ারে খুব বেশি পরিবর্তনও নেই। সংশ্লিষ্টদের মতে যা ফান্ডামেন্টাল কোম্পানি বলে বিবেচিত। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সদস্য শাহাদাত হোসেন বলেন, দূর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে অনেক সময় ভালো লাভ করা সম্ভব। কিন্তু এর বিপরীতে ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি। সেই জন্য ভালো মানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয় বুদ্ধিমানের কাজ।
×