ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুতুলের বিয়ে

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১১ আগস্ট ২০১৬

পুতুলের বিয়ে

আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা,চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা;ধান ভাঙ্গলে কুড়ো দেব,মাছ কাটলে মুড়ো দেব-শৈশবের সেসব ঘুমপাড়ানি গান আজ আর নেই। শিশুদের শৈশব নেই, মা-মাসিদের ঘুমপাড়ানি গান নেই, যান্ত্রিক জীবনযাত্রায় সবই আজ কুয়াশায় ঢাকা। নাগরিক ছোঁয়ায় গ্রাম্য সজীবতা আজ দূরঅস্ত। তথাপি কেউ না কেউ তো আনমনে গেয়ে ওঠে কবি নজরুল ইসলামের লেখা গানের দুকলি, ‘খেলি আয় পুতুল খেলা/বয়ে যায় খেলার বেলা’। তেমনি এক আয়োজন দেখা গেল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহড়া কক্ষে ঢাকা আর্ট থিয়েটার প্রযোজিত, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম রচিত, হাফিজ শিশির নির্দেশিত নাটক ‘পুতুলের বিয়ে’ এর রিহার্সেল দেখবার সুবাদে। বিভেদের বিপরীতে সমন্বয়, মতবিরোধের বিপরীতে সহযোগিতা আর খরাশ্রিত ধরিত্রিতে শান্তির বারি সিঞ্চনের নাটক পুতুলের বিয়ে। যা পুতুল তাই ইংরেজী ভাষায় ডল। নাম ভিন্ন কিন্তু বস্তু এক। একই বস্তু পুতুল কিন্তু আঙ্গিক কারণে কোন পুতুল জাপানের, কোনটি চীনের, আবার কোনটি বিলেতের কিংবা বাংলার। তাদের নামও ভিন্ন ভিন্ন। চীনা পুতুলের নাম ফুচং, জাপানী কনের নাম গেঁইসা, বাংলার পুতুলের নাম ডালিমকুমার, কনের নাম পুঁটুরানী। প্রতিটি পুতুলের মালিকানায় ছোট ছোট কিশোরী। তারা কমলি, টুলি, পঞ্চি, খেঁদি কিংবা বেগম। প্রত্যেকেই মনে মনে পুতুলের মা জননী কিন্তু কারওবাড়ী ময়মনসিংহ তো কারও বাড়ি বাঁকুড়া। নাম-গোত্র-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র, সৌন্দর্য-কুৎসিত, সুখী দাম্পত্য-সতীনের যন্ত্রণা প্রভৃতির বিভেদের রেখা পার করে হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের শুভ বন্ধনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাট্যকার নজরুল ইসলামের নাটক পুতুলের বিয়ে। বিয়ে তথা হৃদয়ের সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধনের প্রযোজনা সৃজনে নির্দেশক হাফিজ শিশিরের হৃদয়ের মাঝে রয়েছে রবীন্দ্র নির্ভরতা, যেখানে উচ্চারিত হয়, ‘দর্শকের চিত্তে রঙ্গমঞ্চ আছে/উহাতে স্থানাভাব নাই/কতক তুমি দেখাইবে কতক তাহারা দেখিবে....’। ফলে এক অর্থে ঘরের দাওয়াই এর মতো সিম্বলিক মঞ্চে, রেকর্ডিং সুর মুচ্চনার আবহে, পাপেট প্রদর্শনে, আলোকের সীমিত প্রক্ষেপণে আর তারুণ্যদীপ্ত এক ঝাঁক অভিনেতা-অভিনেত্রীর প্রাণবন্ত অভিনয়ে সৃজন গন্তব্যের দ্বার প্রান্তে তিনি। জার্মানের গ্রীবস থিয়েটার প্রযোজনার আদলে যুবক-যুবতীদের দিয়ে শিশুতোষ অভিনয় বের করে আনতে পারাটা নির্দেশক হাফিজ শিশিরের নির্দেশনা দক্ষতা কিন্তু পোস্টারের আদলে সেøাগান প্রদর্শন খানিকটা সকলের কথা শুনতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে পেছনে হাঁটার মতো দুর্বলতা। নির্দেশক হাফিজ শিশির নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন, চিত্তের মানচিত্রে জোরপূর্বক ভূমি অধিগ্রহণ এক অর্থে ভূমি দস্যুতারই সামিল। তবে শিশুতোষ কাহিনী উপস্থাপণের মধ্যে দিয়ে পরিণত মনস্কদের আত্মবিস্মৃতির হাত থেকে রক্ষা করার দায়ভার নেয়ায় নজরুল অনুরাগী সংগঠন বাঁশরীর আন্তরিক সহযোগিতা এবং ঢাকা আর্ট থিয়েটারের মঞ্চ উপস্থাপনা এক অর্থে আঁধার সরাতে প্রজ্বলিত অগ্নিশিখা।
×