ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

আল্লাহ্ সুন্দর সুন্দর নাম

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৯ জুলাই ২০১৬

আল্লাহ্ সুন্দর সুন্দর নাম

বিশ্বজগতের মহান স্রষ্টা (খালিক) হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। তাঁর গরিমা, মহিমা, শ্রেষ্ঠত্ব, বিরাটত্ব, মহত্ত্ব প্রভৃতির পরিচায়ক কিছু সুন্দর নাম আছে যাকে বলা হয় আল-আস্ মাউল হুস্না-সুন্দর নামসমূহ। তাঁর মূল সত্তাবাচক নাম বা ইস্মে যাত হচ্ছে আল্লাহ। আল্লাহ্র কোন শরিক নেই। তিনি একক, অদ্বিতীয়। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে: আর আল্লাহ্ বলেন, তোমরা দুই ইলাহ্ গ্রহণ করো না, তিনিই তো একমাত্র ইলাহ্ (সূরা নহ্ল: আয়াত ৫১)। আল্লাহ্ লফ্জ বা শব্দের কোন বুৎপত্তিগত শব্দ বা শব্দমূল নেই। এর দ্বিবচন বা বহুবচন যেমন হয় না, তেমনি খোদা, ঈশ্বর, গড্ প্রভৃতি শব্দ দ্বারা এর কোন আভিধানিক অর্থ করা যায় না বা আভিধানিক অর্থও হয় না। আল্লাহ্র এই ইস্মে যাত বা মূল সত্তা বাচক নামের ব্যাপকভাবে যৎসামান্য জ্ঞান আহরণ করা যায় তাঁর আল-আস্মাউল হুস্না কিংবা ইস্মে সিফাতের মাধ্যমে। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : আর আল্লাহ্র জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেই সকল নামেই ডাকবে (সূরা আ’আরাফ: আয়াত ১৮০)। এখানে এ কথা বলা যায় যে, আল্লাহ্র গুণবাচক নামসমূহের আভিধানিক অর্থ করে অনুধাবন করার চেষ্টা করলেও আসলে তার অর্থ পরিপূর্ণভাবে ব্যক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। কুরআন মজীদে আরও ইরশাদ হয়েছে : বলো, আল্লাহ্ নামে ডাকো কিংবা রহমান নামে ডাকো, তোমরা যে নামেই ডাকো সকল সুন্দর নামই তো তাঁর। (সূরা বনী ইসরাঈল : আয়াত ১১০)। কুরআন মজীদের ৫৯ নম্বর সূরা হাশরের শেষ তিনখানি আয়াতে কারীমায় আল্লাহ্র কতিপয় সুন্দর নামের উল্লেখ আছে। ইরশাদ হয়েছে : তিনিই আল্লাহ্ যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ (মা’বুদ) নেই, তিনি অদৃশ্য (গায়েব) ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা (আলিম), তিনি পরম করুণাময় (রহ্মান), পরম দয়ালু (রহীম)। তিনি আল্লাহ্ যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই। তিনিই সার্বভৌমত্বের অধিকারী (মালিক), তিনিই পবিত্র (কুদ্দুস), তিনিই শান্তি (সালাম), তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক (মু’মিন), তিনিই রক্ষক (মুহায়মিন), তিনিই পরাক্রমশালী (‘আযীয), তিনি প্রবল, মহাপরাক্রান্ত (জব্বার), তিনিই অতীব মহিমান্বিত (মুতাকাব্বির)। ওরা (কাফির-মুশরিকরা) যাকে শরিক স্থির করে আল্লাহ্ তা থেকে অতি পবিত্র সুমহান। তিনিই আল্লাহ্ যিনি সৃজনকর্তা সৃষ্টিকর্তা (খালিক), উদ্ভাবনকর্তা, উন্মেষকারী (বারী), আকৃতিদাতা, রূপদানকারী (মুসাওবির)-এ সবই তাঁর সুন্দর নাম (আল-আস্ মাউল হুস্না)। আকাশম-লী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সবই তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা (্ইউসাব্বিহু) ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় (‘আযীযুল হাকীম)। (সূরা হাশর: আয়াত ২২-২৪)। বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহ্ তা’আলার নিরানব্বইটি অর্থাৎ এক কম একশ’টি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি সেগুলোর গণনা করবে (গুনে গুনে যিক্র করবে) সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হচ্ছে: তিনিই আল্লাহ্ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তিনি আর রহমানু- পরম করুণাময়, আর রহীমু-পরম দয়ালু, আল-মালিকু-সর্ব সার্বভৌমত্বের অধিকারী, বাদশাহ্, আলকুদ্দুস-পবিত্র, আস সালামু-শান্তি, শান্তিদাতা, আল মু’মিনু-নিরাপত্তা বিধায়ক, আল আযীযু-পরাক্রমশালী, আল মুহায়মিনু-রক্ষাকারী, রক্ষক, আল জাব্বারু-ক্ষমতাশালী, প্রবল, মহাপরাক্রান্ত, আল মুতাকাব্বিরু- অতীব মহিমাম্বিত, গৌরবাম্বিত, আল্ কালিকু-স্রষ্টা, সৃজনকর্তা, আল বারীউ-উদ্ভাবনকর্তা, উন্মেষকারী, আল মুসাওবিরু-আকৃতিদাতা, রূপদানকারী, আল গাফ্ফারু-গোনাহ্ ক্ষমা করনেওয়ালা, পরম ক্ষমাশীল, আল কাহ্ হারু- মহাপরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, আল ওয়াহ্ হাবু- মহান দাতা, আর রায্যাকু- রিযক দেনেওয়ালা, জীবিকাদাতা, আল ফাত্তাহ- মহাবিজয়ী, বিজয়ীদানকারী, উন্মোচনকারী, আল ‘আলীমু-সর্বজ্ঞ, আল কাবিদু-মহা আয়ত্তকারী, সঙ্কোচনকারী, আল বাসিতু-প্রশস্ততা দানকারী, বিস্তৃতকারী, সম্প্রসারণকারী, আল খাফিদু-অহঙ্কারীকে পর্যুদস্তকারী, রোধকারী, আর রাফিউ-সমুন্নতকারী, উন্নয়নকারী, আল্ মু’ইয্যু-মান-ইয্যত দেনেওয়ালা, সম্মানদাতা, আল মুযিল্লু-লাঞ্ছিতকারী, অপমানকারী, আস সামী’উ-সর্বশ্রোতা, আল বাসীরু-সর্বদ্রষ্টা, আল হাকামু-মীমাংসাকারী, হুকুমদানকারী, আল-আদ্লু- ন্যায়নিষ্ঠ, ন্যায়পরায়ণ আল লাতীফু-সূক্ষ্মদর্শী, সূক্ষ্মদক্ষতাসম্পন্ন, আল খাবীরু-সর্বজ্ঞ, সব জাননেওয়ালা, আল হালীমু- সহিষ্ণু, আল আজীমু-মহিমাময়, মহান, আল গাফুরু-ক্ষমাশীল, আশ শাকুরু-গুণগ্রাহী, কৃতজ্ঞ, কৃতজ্ঞতা গ্রহণকারী, আল ‘আলীয়্যূ-অত্যুচ্চ, অতীব মহান, আল্ কাবীরু-সুমহান, বিরাট, মহৎ, আল্ হাফীজু-হিফাজত করনেওয়ালা, মহারক্ষক, আল্-মুকীতু-আহার্যদাতা, আল হাসীবু-মহাপরীক্ষক, আল্ জালীলু-মহিমান্বিত, সর্বক্ষমতার অধিকারী, প্রতাপান্বিত, আল কারীমু-অনুগ্রহকারী, মহামান্য আল্ রাকীবু-নিরীক্ষণকারী, রক্ষণাবেক্ষণকারী, নেগাহ্বান, আল্ মুজীবু-দু’আ কবুলকারী, প্রত্যুত্তরদাতা, আল ওয়াসি’-সর্বব্যাপী অসীম, আল হাকীমু-বিচক্ষণ, আল্ ওয়াদূদ-প্রেমময়, আল্ মাজীদু-মহামহিম, গৌরবময়, আল্ বু’ইছু-পুনরুত্থানকারী, আশ শাহীদু-প্রত্যক্ষকারী, আল্ হাক্কু-সত্য, আল্ ওয়াকীলু-তত্ত্বাবধায়ক, আল্কাবীউ-শক্তিশালী, আল্-মাতীনু-অটল, দৃঢ়তাসম্পন্ন ‘আল্ ওয়ালীউ-বন্ধু, অভিভাবক, আল্ হামীদু-প্রশংসিত, আল্-মুহ্সী-হিসাব গ্রহণকারী, আল্ মুব্দীউ-অকৃত্রিম স্রষ্টা, আদি সৃষ্টিকর্তা, আল্-মু’ঈদু পুনঃসৃষ্টিকারী, আল্ মুহ্য়ীউ-জীবনদাতা, আল্ মুমীতু-মরণদাতা, আল্-হাইয়্যু-চিরঞ্জীব, আল্্ কাইয়ুমু-স্বয়ং স্থিতিশীল, শাশ্বত, সর্বসত্তার ধারক, স্বাধিষ্ঠ, আল্ ওয়াজিদু-অবধারক, প্রাপক, অস্তিত্বদানকারী, আল্-মাজিদু-মহান, আল্-ওয়াহিদু-একক, আস্-সামাদু-অমুখাপেক্ষী, অভাবমুক্ত, আল কাদিরু-শক্তিমান, ক্ষমতাশালী, আলমুকতাদির-প্রবল, আল্-মুকাদ্দিম-অগ্রবর্তীকারী, অগ্রগামী, আল্ মুআখ্খিরু-পশ্চাদ্বর্তীকারী, আল্-আওয়ালু-অনাদি, প্রথম, আল্-আখিরু-অনন্ত, আজ্ জাহিরু-প্রকাশ্য, আল্ বাতিনু-গুপ্ত, আল্ ওয়ালীউ-কার্যনির্বাহক, আল্ মুতা’আলী-সুউচ্চ, আল্ বারবু পরম উপকারী, ন্যায়বান, আত্ তাওয়াবু-তওবা গ্রহণকারী, তওবা কবুল করনেওয়ালা, আল্ মুনতাকিমু-প্রতিশোধ গ্রহণকারী। অপরাধীর শাস্তি বিধানকারী, আল্-আফুওউ-ক্ষমাকারী, আল রাউফু-দয়ার্দ্র, স্নেহশীল, মালিকুল মুল্ক-সার্বভৌমত্বের অধিকারী, রাজত্বের মালিক, যুল-জালালি ওয়াল ইক্ রাম-সম্মান ও প্রতিপত্তিশালী এবং সম্মান প্রতিপত্তি দানকারী, মহিমান্বিত ও মহানুভব, আল-মুকসিতু-ন্যায়পরায়ণ, ন্যায় বিচারকারী, আল-জামি’উ-একত্রীকরণকারী, আল-গানীউ-অভাবমুক্ত, অফুরন্ত সম্পদশালী, আল-মুগনীউ-অভাব মোচনকারী, সম্পদদানকারী, দারিদ্র্য বিমোচনকারী, আল-মানি’উ-প্রতিরোধকারী, আদ্-র্দারু-অকল্যাণকর্তা, আন-নাফি’উ-কল্যাণকর্তা, মুনাফা দেনেওয়ালা, আল-হাদীউ-পথপ্রদর্শক, সৎ পথের দিশারী, আন্ নূরু-জ্যোতি, আল্ বাদী’উ-অভিনব সৃষ্টিকারী, আল বাকীউ-চিরস্থায়ী, আল-ওয়ারিছু-উত্তরাধিকারী, আল রাশীদু-সত্যদর্শী, আস্-সাবূরু-ধৈর্যশীল। (তিরমিযি শরীফ)। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর গুণবাচক এই সুন্দর সুন্দর নাম অতিশয় মুবারক ও পবিত্র। কুরআন মজীদে আরও ছয়টি নাম মুবারকেরও উল্লেখ আছে, আর তা হচ্ছে: আল-আহাদু-এক, অদ্বিতীয়, আর-রব্-রব শব্দের অর্থ প্রতিপালক করা হয়। কিন্তু এক কথায় এর সম্পূর্ণ অর্থ করা যায় না। কিছুটা এইভাবে রব্ শব্দের অর্থ করা যেতে পারে আর তা হচ্ছে স্রষ্টা, প্রতিপালক, সংরক্ষক, বিবর্ধক অর্থাৎ যিনিই প্রতিপালক আদিতে তিনিই স্রষ্টা, পরে সংরক্ষক, বিবর্ধক, আল-মুন’ইম-নিআমতদাতা, আল-মুতী-দাতা, আস-সাদিক-সত্যবাদী, আস-সাত্তার-দোষ গোপনকারী। কুরআন মজীদে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর গুণবাচক নামসমূহের মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়েছে আর রহমান, আর-রহীম। ততাসমিয়া বা বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম কুরআন মজীদে ১১৪ বার এসেছে। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো- আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না, আল্লাহ্ সমুদয় গোনাহ্ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনি গফুরুর রহীম- ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমরা তোমাদের রব্-এর অভিমুখী হও এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো আযাব (শাস্তি) আসার পূর্বেই। (সূরা যুমার : আয়াত ৫৩-৫৪)। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : তোমরা আল্লাহ্র নি’আমত (অনুগ্রহ) গণনা করে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা নহল: আয়াত ১৮)। তিনিই যথাবিধি আকাশম-লী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। যখন তিনি বলেন, হও (কুন) তখনই হয়ে যায় (ফাইয়াকূন)। তাঁর কথাই সত্য। যেদিন শিঙ্গা ফুঁৎকার দেয়া হবে সেদিন কার কর্তৃত্ব তো তাঁরই দৃশ্য অদৃশ্য সবকিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত। আর তিনিই প্রজ্ঞাময় সবিশেষ অবহিত। (সূরা আন্’আম: আয়াত ৭৩)। ইলমে তাসাওউফে আল্লাহ্র ইসমে যাত-এর যিক্র ও মুরাকাবা বা বিশেষ অনুধ্যান করার বিশেষ পদ্ধতি যেযন আছে, তেমনি ইসমে সিফাত বা আল আস মাউল হুসনার বিশেষ অনুধ্যান পদ্ধতি আছেÑযার মাধ্যমে নূর মুবারক লক্ষ্য করা যায় এবং সঠিক মর্ম আত্মস্থ করা সম্ভব হয়। যেমন : কাহ্হারী, জাব্বারী ও জালালী ফয়েযে বিশেষ নিয়ত শেষে ইয়া আল্লাহু, ইয়াকাহারু, ইয়া জলীলূ নামসমূহ কলবের দিকে গভীর মনোনিবেশ সহকারে উচ্চারণ ছাড়া খেয়াল করে অনুধ্যান করলে ওগুলোর ফায়দা হাসিল হতে পারে আল্লাহ্র রহমতে। তেমনি রহমতের ফয়েযে ইয়া আল্লাহু, ইয়া রহমানু, ইয়া রহীমু, ইয়া হাইয়্যূ, ইয়াকাইয়ূমু-এই মুবারক পাঁচ নামের মুরাকাবা করলে আল্লাহর রহমতের নূর প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হয়। সুলতানুল আয্ কারের ফয়েযে বিশেষ পদ্ধতিতে আল্লাহ্ সামী, আল্লাহ্বাসীর, আল্লাহ্ ‘আলীম আল্লাহ্ কাদির অনুধ্যান করলে আলোয় আলোয় নিজেকে অন্যান্য জ্যোতিই অভিষিক্ত করা সম্ভব হয় এবং আল্লাহ্র নৈকট্য লাভে নিজেকে ধন্য করা যায়। একে ফানাফিল্লাহ্ মাকামের মুরাকাবা বলা হয়। পীরে কামিলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ছাড়া, তাঁর কাছ থেকে সবক ও তা‘লীম গ্রহণ ছাড়া তাঁর ফয়েয ও তাওয়াজ্জুহ্ ছাড়া তরীকতের শিক্ষা হাসিল করা যায় না। ইলমে তাসাওউফে আল আস্মাউল হুস্নার বিশেষ অনুধ্যান অধ্যায় রয়েছে, যা পীরের নির্দেশ অনুযায়ী রপ্ত করলে আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর মা‘রিফতের ব্যাপ্তি যে কত প্রসারিত তা অনুধাবন করা যায়। ব্যক্তি বিশেষ যত বড় প-িতই হোক না কেন, নিজেকে আল্লামা বলে দাবি করে যতই যুক্তি দেখাক না কেন, এ কথা তার স্মরণে রাখতেই হবে সমুদ্র তলদেশের পাথরের নুড়ির মতো রসবিহীন জীবনের কোন দাম নেই, সুগন্ধবিহীন ফুলের মতো জীবন ধারণের কোন অর্থ হয় না। কবি মীর্জা গালিবের ভাষায় বলা যায় : ওহ্ ফুল তো ফুল্ই নেহী জিস্ ফুল্ মে খুশ্বো নেহী, ওহ্ দিল্ তো দিল্ই নেহী জিস্ দিল্ মে মুহব্বত নেহী- ও ফুল তো ফুলই না যে ফুলে সুগন্ধ নেই, ও অন্তর তো অন্তরই না যে অন্তরে প্রেম নেই। ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন যে, যারা তাসাওউফ অনুশীলন করে না তারা ফাসিক। তাসাওউফ চর্চার মাধ্যমেই কেবল জ্ঞানের পরিপূর্ণতা হাসিল হয়। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর যাত ও সিফাতের নূরে সমুজ্জ্বল হওয়ার একমাত্র উপায় তাসাওউফ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হওয়া, ইলমে তাসাওউফের তরীকতের পথ পরিক্রমে বিচরণ করা। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : তোমরা জান্নাতের বাগানের কাছ দিয়ে যাওয়ার কালে তাতে বিচরণ করবে। সাহাবীগণ বললেন : জান্নাতের বাগান কি? তিনি বললেন : যিক্রের হালক্াসমূহ। (তিরমিযি শরীফ)। আল্লাহ্ জাল্লা শানুহুর সুন্দর সুন্দর নামের আলোয় উদ্ভাসিত হতে হলে তরীকতের নিয়মে প্রতিটি নাম মুবারকের মর্ম উপলব্ধি করা ও নূর অবলোকন করার চেষ্টা করা অপরিহার্য আর ইল্মে তাসাওউফ চর্চা করা অবশ্য কর্তব্য লেখক : পীর সাহেব, দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা, ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (স.), সাবেক পরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
×