ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অধিবেশন সমাপ্ত

নিহত জঙ্গীদের ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের এত দরদ কেন ॥ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৮:১৩, ২৮ জুলাই ২০১৬

নিহত জঙ্গীদের ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের এত দরদ কেন ॥ প্রধানমন্ত্রীর

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের পর ৯ জঙ্গী নিহত হওয়া নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, নিহত জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের এতো দরদ ও আহাজারি কেন? নিহত জঙ্গীদের ব্যাপারে তাদের এত কষ্ট ও বুকে ব্যথা লাগছে কেন? তাদের মনে এ ধরনের সন্দেহের কারণটা কী? এ প্রশ্ন জাতির কাছে রেখে গেলাম। এসব জঙ্গী-সন্ত্রাসীর সঙ্গে বিএনপির গোপন সম্পৃক্ততা ও কোন গোপন ষড়যন্ত্র আছে কি না- সেটাই এখন দেখার বিষয়। কেননা যেখানেই যারা ধরা পড়ছে তদন্তের পর দেখা যাচ্ছে সবার গোড়া এক জায়গায়। এসব সন্ত্রাসী ঘটনার তদন্তে আগামীতে আরও অনেক সত্য বেরিয়ে আসবে। বুধবার রাতে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলতি দশম জাতীয় সংসদের দীর্ঘতম বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। আর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পীকার অধিবেশন সমাপনীর রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে সমাপ্তি ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, যখন বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বব্যাপী, দেশে ব্যাপক বিনিয়োগ আসছে, দেশ উন্নয়ন-অগ্রগতির দিকে যাচ্ছে- ঠিক তখনই এসব হামলার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। পর পর তিনটি বছর বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাসহ নানা নাশকতা আমরা শক্তহাতে দমন করেছি। যখন দেখল তাদের প্রকাশ্য মানুষকে পুড়িয়ে মারার সহিংসতা দেশের জনগণই প্রতিরোধ গড়ে তুলছে, তখন তারা সারাদেশে গুপ্তহত্যা শুরু করল। এরপরেই গুলশানসহ নানা স্থানের হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর বহু দেশেই এ ধরনের জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবীর কোথাও এসব জঙ্গী-সন্ত্রাসীকে কোলে করে পোষা হয়নি, অন দ্য স্পট (ঘটনাস্থলেই) হত্যা করা হয়েছে। জঙ্গী দমনে এটাই নিয়ম। কিন্তু আমাদের দেশে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের দমন করছে, অনেকে জীবনও দিয়েছে। সেসব জঙ্গী-সন্ত্রাসীর ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের এতো মায়াকান্না কেন, সেই বিচারের ভার তিনি জনগণের ওপর ছেড়ে দেন। বিএনপি নেতা হান্নান শাহ ও শাহ মোয়াজ্জেমের বক্তব্যের প্রসঙ্গে সংসদ নেতা বলেন, ‘তারা বলেছেন, অভিযানে নিহত ৯ জন জঙ্গী কি না, সন্দেহ রয়েছে’। তারা গুলশানের ঘটনার সঙ্গে কল্যাণপুরের তুলনা করেছেন। কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে এ দুটি ঘটনার তুলনা করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কল্যাণপুরে যেসব জঙ্গী নিহত হয়েছে, তাদের কাছে একই ধরনের পোশাক, আলখেল্লা, পাগড়ি ও ব্যাগ ছিল। এরপরও বিএনপির নেতাদের সন্দেহ কেন? গুলশানে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আর কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবুও এ দুটি ঘটনার তারা তুলনা করছেন কেন? তবে কী এসব ঘটনার সঙ্গে তাদের গোপন যোগসূত্রতা রয়েছে? কল্যাণপুরের জঙ্গীবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে আমরা খবর পাচ্ছিলাম এ ধরনের হামলা আরও হতে পারে। আমি এটা বলেছি। সেই ধরনের একটি হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল কল্যাণপুরের জঙ্গীরা। জঙ্গী দমনে আমরা সারাদেশব্যাপী ব্লক রেইড শুরু করেছি। ব্লক রেইডের অংশ হিসেবে কল্যাণপুরে গিয়ে জঙ্গীদের আস্তানা পাওয়া যায়। এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি দ্রুত গতিতে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারত তাহলে তারা আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটাত। কারণ তারা সেখানে পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছিল কোথাও বড় হামলা করার। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকা ঘেরাও করলে ওসব জঙ্গীরা আল্লাহু আকবর বলে তাদের ওপর বোমা ও গুলি করছিল। সফল অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী জঙ্গীদের খতম করে দেশ ও জাতিকে আরেকটি হামলা থেকে রক্ষা করেছে। অভিযান পরিচালনাকালে এক জঙ্গী ধরা পড়েছে আরেকজন পালিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে আরও বলেন, জাতির জীবনে ১৫ আগস্ট না এলে, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা যদি না করা হতো, তবে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নত ও সমৃদ্ধ হতো। সেই বঙ্গবন্ধুর খুনী, যুদ্ধাপরাধী এবং পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা এখনও রয়ে গেছে। তাদের ষড়যন্ত্র এখনও চলছে। তাদের ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় এসব জঙ্গী-সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, দেশের এত উন্নয়ন হচ্ছে এ কারণেই যে, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণের কল্যাণ ও সেবা করতে ক্ষমতায় এসেছে। সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে দেশ পরিচালনা করছি বলেই উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বের কাছে উন্নয়ন-অগ্রগতির রোল মডেল। শক্ত হাতে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা করে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতাও কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
×