ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৫ জুলাই ২০১৬

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ ২৯ রমজান। আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল ঈদ। নতুবা পরশু পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এখন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর অত্যাসন্ন। ঈদ-উল-ফিতর মানে রোজা শেষে মহান আনন্দ উৎসব। আলবিদা মাহে রমজান, খোশ আমদেদ পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। গত একমাস ধরে সিয়াম সাধনার মধ্যে দিয়ে রোজাদার যে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছে, আজ তা থেকে উত্তীর্ণের সময় ক্রমেই ঘনিয়ে এসেছে। চতুর্দিকে তাই আজ ঈদের আমেজ সুস্পষ্ট। মুসলিম সমাজ জীবনে ঈদ-উল-ফিতরের অবারিত আনন্দধারার তুলনা চলে না। কারণ, প্রথমত এ আনন্দ- উৎসবের আমেজ গরিবের পর্ণ কুটির হতে ধনীর বালাখানা পর্যন্ত সমানভাবে মুখরিত। শহর-নগর-গ্রাম- গঞ্জ সর্বত্র এর ঢেউ বি¯ৃÍত। দ্বিতীয়ত এ আনন্দ অতি পবিত্র ও নির্মল। এখানে বাড়াবাড়ি নেই, অতিরঞ্জিতের কোন স্থান নেই। আছে আত্মত্যাগ, অন্যকে কাছে টানার ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের সমন্বিত কর্মসূচী। এ জন্য ঈদের দিনের রয়েছে সুনির্ধারিত আমল। সত্যিকার অর্থে রোজাদার মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা করে যে সংযম ও নৈতিকতাবোধ, সহমর্মিতাবোধ ও পরিচ্ছন্নতাবোধ শিখেছে তারই প্রথম বাস্তব প্রয়োগ ও প্রদর্শনী ঘটে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের সকাল থেকে। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিঃ ) এক দীর্ঘ হাদিসে বর্ণনা করেন : যখন ঈদ-উল-ফিতরের রাতের আগমন হয় ঐ রাতকে পুরস্কার দানের রজনী হিসেবে অভিহিত করা হয়। যখন ঈদের সকাল নামে তখন আল্লাহ প্রতিটি দেশে ফেরেশতা প্রেরণ করেন। তারা পথের ধারে অবস্থান নেন এবং ডাকতে থাকেন। তাদের আহ্বান মানুষ ও জ্বীন ব্যতীত সব মাখলুকই শুনতে পায়। তারা বলেন : ওহে উম্মতে মুহাম্মদী (স)! বের হয়ে এসো মর্যাদাবান প্রতিপালকের পানে। তিনি অধিক পরিমাণে দান করে থাকেন, মারাত্মক অপরাধও ক্ষমা করে দেন। ঈদ-উল-ফিতরের দিবস হচ্ছে ইয়াওমুল জায়েযা বা পুরস্কারের দিন, আত্মোপলব্ধির দিন। সমাজ ও যুগের নানা অবক্ষয়ের ছোঁয়ায় ঈদের অনুষ্ঠানেও নানা অতিরঞ্জিত বিষয় ও বাড়াবাড়ি দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসে পড়েছে। আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে মহানবী (স) এর প্রবর্তিত পবিত্র ঈদের শিক্ষা ও বরকত হতে আমরা বঞ্চিত না হই। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) ঈদ-উল- ফিতরের নির্মল শিক্ষায় উজ্জীবিত হওয়ার জন্য নরনারী প্রত্যেককেই ঈদগাহে সমবেত হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিন তিনি দুস্থ এতিম যুদ্ধাহত পরিবারের সদস্যদের কাছে টানতেন। যিকর আজকার ও ফজরের জামাত সমাপ্তির পর গোসলের মাধ্যমে পাক পবিত্র হয়ে আতর সুঘ্রাণে সুশোভিত হতেন, গ্রহণ করতেন মিষ্টি জাতীয় পানাহার। অন্যদেরও এতে শামিল করতেন। নগর জীবনের সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতায় আজ আমরা সর্বস্তরের মানুষদের দিয়ে ঈদ করার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছি। এক সময় ছিল ধনী গরিবে কোলাকুলি। এখন হয়েছে ধনীতে ধনীতে কোলাকুলি, গরিবে গরিবে কোলাকুলি। সমতার ঈদ যেন অসম প্রাচীর হয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়, যা সত্যিই দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আসুন না সকলে এ বিভেদ প্রাচীর অস্বীকার করি, মিশে যাই ধনী গরিব এ পাড়া ও পাড়া, সোসাইটি ও লোকালয়, শহুরে ও গাঁওয়ের জাতিধর্ম নির্বিশেষে একে অপরের সাথে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও নবীজী এদিন ঈদের জামাতে এক রাস্তা দিয়ে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরতেন। তার এটাই প্রত্যাশা, আসা যাওয়ার মধ্যে অতিরিক্ত অতিরিক্ত মানুষের সাথে তার সালাম কালাম ও কুশল বিনিময় হবে। এমন ঈদ উদযাপনে গর্বিত হয়ে তিনি উচ্চারণ করতেন : লিকুল্লি কাওমিন ঈদ ওয়া হাযা ঈদুনাÑ প্রত্যেক জাতিরই কোন না কোন খুশির দিন রয়েছে আর এ হলো আমাদের আনন্দোৎসব! হ্যাঁ এমনই নির্মল নিষ্কলুষ কল্যাণময় ধারার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের প্রত্যাশায় মাসব্যাপী ‘মাহে রমজান’ কলামের সমাপ্তি। সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক আস্সালাম।
×