ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার

ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৯ জুন ২০১৬

ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের জামায়াতের সাবেক সাংসদ আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ পলাতক ছয়জনের বিরুদ্ধে তিনটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন ও প্রসিকিউশন পক্ষে প্রসিকিউশনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২ আগস্ট দিন ঠিক করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আরী, প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর শেখ মুশফিক কবির। অপরদিকে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট গাজী তামিম। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু, মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ, আবু মুসলিম মোঃ আলী, মোঃ নাজমুল হুদা ও মোঃ আব্দুর রহিম মিয়া। তাদের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা সদর ও সুন্দরগঞ্জ এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, আটক, নির্যাতন, অপহরণ ও লুণ্ঠনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি ছয়জনই পলাতক। এর আগে গত ১৬ জুন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর আব্দুল আজিজসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ, অগ্নিসংযোগের তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বছরের ২৬ নবেম্বর আবদুল আজিজসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। তবে এখন পর্যন্ত ছয়জনই পলাতক। ২০০৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সুন্দরগঞ্জের পাঁচগাছী শান্তিরাম গ্রামের মৃত আলম উদ্দিনের ছেলে আজিজার রহমান সরকার বাদী হয়ে জামায়াত নেতা আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে আজিজার রহমানের বড় ভাই ফয়েজ উদ্দিনকে নির্যাতনের পর হত্যার অভিযোগে ওই মামলাটি করা হয়। অপরদিকে ধর্মপুর গ্রামের আকবর আলীকে হত্যার অভিযোগে জামায়াত নেতা আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন আনিছুর রহমান। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ২০ নবেম্বর সাবেক এমপি আবদুল আজিজের অপরাধ তদন্তে কাজ শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ৬ রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন তিনটি অভিযোগ এনেছে। এর মধ্যে রয়েছে চার্জ-১ : একাত্তরের ৯ অক্টোবর সকাল ৮টা বা সাড়ে ৮টার সময় আসামিরা পাকিস্তানের দখলদার সেনা বাহিনীর ২৫-৩০ জনকে সঙ্গে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি বাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ, নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে। পরে তাদের দাড়িয়াপুর ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গনেশ চন্দ্র বর্মণের মাথার সঙ্গে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে এবং বাকিদের ছেড়ে দেয়। আসামিরা আটককৃতদের বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে। চার্জ-২ এ বলা হয়েছে ওইদিন বিকেল ৪টার দিকে আসামিরা সুন্দরগঞ্জ থানার মাঠেরহাট ব্রিজ পাহারারত ছাত্রলীগের নেতা বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠেরহাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। পরদিন সকালে আসামিরা বয়েজকে থানা সদরের স্থাপিত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিন দিন আটক রেখে নির্যাতনের পর ১৩ অক্টোবর বিকেলে তাকে গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটির নিচে চাপা দেয়। চার্জ-৩ এ বলা হয়েছে, একাত্তরের ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সুন্দরগঞ্জ থানার পাঁচটি ইউনিয়নে স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে আটক করে। তাদের তিন দিন ধরে নির্যাতন করার পর পাকিস্তানী সেনাদের ক্যাম্পের কাছে নদীর ধারে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং লাশ মাটি চাপা দেয়। সেখানে ওই শহীদদের স্মরণে একটি সৌধ নির্মিত হয়েছে।
×