ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিক দাসত্ব ॥ শিকার সাড়ে ৪ কোটি

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ১ জুন ২০১৬

আধুনিক দাসত্ব ॥ শিকার সাড়ে ৪ কোটি

বিশ্বের চার কোটি ৫০ লাখেরও বেশি পুরুষ, নারী ও শিশু আধুনিক দাসত্বের শিকার। আগে যা ধারণা করা হয়েছিল এই সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি এবং এর দুই-তৃতীয়াংশ এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর। লন্ডনে মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল সেøভারি ইনডেক্স ২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। খবর এএফপি ও ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের। অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের এই গবেষণা প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আধুনিক দাসত্বের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের জন্য ২০১২ সালে অস্ট্রেলীয় ধনকুবের ও সমাজসেবক এ্যান্ড্রু ফরেস্ট এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। গবেষণায় ৫৩ ভাষায় ৪২ হাজার সাক্ষাতকার ও সরকারের প্রতিক্রিয়াসহ ১৬৭টি দেশের দেশের তথ্য সমন্বয় করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দুই বছর আগের চেয়ে ২৮ শতাংশেরও বেশি লোক দাসত্বের শিকার। দাসত্বের ফাঁদে পড়া মানুষের সংখ্যা ২০১৪ সালের চেয়ে বেড়ে চার কোটি ৫৮ লাখে দাঁড়িয়েছে। ২০১৪ সালে এই সংখ্যা ছিল তিন কোটি ৫৮ লাখ। পাচার হওয়া এই নারী, পুরুষ ও শিশুদের গৃহভৃত্য, পতিতা ও শ্রমদাস হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। তালিকার শীর্ষে থাকা ভারতে সবচেয়ে বেশি, এক কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার লোক আধুনিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। গত বছরের চেয়ে এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক কোটি ৪০ লাখ ৩০ হাজার। ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে মোট আধুনিক দাসত্বের শিকারদের মধ্যে আনুমানিক ৪৫ শতাংশ ভারত ও পাকিস্তানের। অপরদিকে দাসত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে উত্তর কোরিয়ায় এবং সরকারের প্রতিক্রিয়াও সবচেয়ে দুর্বল। দেশটির মোট জনসংখ্যা দুই কোটি ৫০ লাখের প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাংশ দাসত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। উজবেকিস্তানে এই হার ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও কম্বোডিয়ায় এক দশমিক ৬৫ শতাংশ। গ্লোবাল সেøভারি ইনডেক্স বলেছে, বিশ্বজুড়ে যে ৪ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ এভাবে ‘আধুনিক দাসের’ জীবন কাটাচ্ছে, তাদের ৫৮ শতাংশই ভারত, চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তান- এই পাঁচ দেশের বাসিন্দা। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন এই তালিকায় আছে দ্বিতীয় অবস্থানে, সেখানে ৩৪ লাখ মানুষ এ ধরনের দুর্দশার জীবনে বাধ্য হচ্ছেন। তালিকার তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে দাসের জীবনে বাধ্য হচ্ছেন ২১ লাখ মানুষ। আধুনিক দাসত্ব বলতে শোষণের এমন পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে কোনও ব্যক্তি হুমকি, সহিংসতা, নিগ্রহ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ছলচাতুরীর কারণে সেই কাজ ছেড়ে দিতে পারে না। যারা কারখানা, খনি বা খামারে নামমাত্র মজুরিতে দাসের মতো শ্রম দিতে বাধ্য হচ্ছেন, দালালের খপ্পরে পড়ে বাধ্য হচ্ছেন যৌনকর্মীর জীবন যাপনে, এ যুগেও যাদের ঋণ শুধতে না পেরে কাটাতে হচ্ছে গোলামের জীবন, অথবা বাবা-মায়ের ঋণের দায় মাথায় নিয়ে যাদের জন্ম হচ্ছে কৃতদাসের মতো- তাদের সংখ্যা ধরেই এ সূচক তৈরির কথা জানিয়েছে ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন। ফরেস্ট বলেন, আগের জরিপের তুলনায় এবার তথ্য সংগ্রহের হার ভাল হওয়ায় আরও স্পষ্ট চিত্র পাওয়া গেছে। এ কারণে দাসের জীবন যাপনে বাধ্য হওয়া মানুষের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে বলে মনে হতে পারে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাস্তুচ্যুতি ও বিশ্বজুড়ে দেশান্তরী হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তুলনায় বেশি মানুষ আধুনিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেন, পর্তুগাল ও নরওয়েসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সরকার এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ ও প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ১২৪টি দেশ ইউএন ট্রাফিকিং প্রটোকল অনুযায়ী মানবপাচারকে অপরাধ বলে গণ্য করছে। অপরদিকে ইরান, হংকং ও চীনের মতো দেশগুলোর পদক্ষেপ খুবই দুর্বল। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৪ সালে বৈশ্বিক দাসত্ব সূচক প্রকাশের পর ক্রোয়েশিয়া, ব্রাজিল ও ফিলিপিন্স ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। গবেষণায় এ সমস্যা মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্য ভারতের প্রশংসা করা হয়েছে।
×