ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টুটুল মাহফুজ

এলইডি স্টাম্পে যে প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৩ মে ২০১৬

এলইডি স্টাম্পে যে প্রযুক্তি

বিশ্ব ক্রিকেটে এক রহস্যময় বোলারের নাম মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজ বল হাতে নিলেই কেঁপে ওঠে ব্যাটসম্যানদের বুক। চোখের পলকে উড়িয়ে দেয় প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের স্টাম্প। এখনকার স্টাম্পগুলোতে থাকে এলইডি লাইট তাই স্টাম্পের বেলস পড়লেই সঙ্গে সঙ্গে আলো জ্বলে ওঠে। কিন্তু কিভাবে কাজ করে এই এলইডি লাইট আর এতে কি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তাই নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। কয়েক শ’ বছর ধরে ক্রিকেট একটি দলীয় খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এর আধুনিক রূপের সূত্রপাত হয় ইংল্যান্ডে এবং কমনওয়েলথ দেশগুলোর মধ্যেই এই খেলা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় ক্রিকেটই অধিক জনপ্রিয় খেলা। বিভিন্ন অঞ্চল যেমন : ইংল্যান্ড ও ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে, বারমুডা এবং ক্যারিবিয়ানের ইংরেজিভাষী দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহে ক্রিকেট একটি প্রধান খেলা। ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশগুলো একত্রে ওয়েস্ট ইন্ডিজ নামে বিশ্বে ক্রিকেট খেলে থাকে। নেদারল্যান্ডস, কেনিয়া, নেপাল ও আর্জেন্টিনা প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন অপেশাদার ক্রিকেট ক্লাব সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও এক শ’র বেশি ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশ রয়েছে যারা বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইসিসির সদস্য। ক্রিকেট খেলায় ৪২টি ক্রিকেট আইন আছে, যা বিভিন্ন প্রধান ক্রিকেট-খেলুড়ে দেশের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রণয়ন করেছে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)। কোন বিশেষ খেলাতে দলগুলো সর্বসম্মতিক্রমে কোন আইন পরিবর্তন বা লঙ্ঘন করতে পারে। অন্য আইনগুলো প্রধান আইনের সম্পূরক এবং বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে ব্যবহৃত হয়। এখানে উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে সীমিত ওভারের খেলায় পুরনো আদল থেকে বেরিয়ে ক্রিকেটকে আরও আকর্ষণীয় করতে ফিল্ডিং দলের ওপর কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। তেমনি সংযোজন করা হয়েছে নতুন আইন ও প্রযুক্তির ব্যবহার। জুলাই ২০১৩ সালে বিশ্ব ক্রিকেটে আসে উইকেটে ফ্লাস লাইটের ব্যবহার। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ব্রন্টি ইকারম্যান উইকেটে ফ্লাস লাইট ব্যবহারের দাবি জানান। এর আগ পর্যন্ত ক্রিকেট স্টাম্প এবং বেলস ছিল কাঠের। আধুনিক উইকেটে শক্ত প্লাস্টিকের ভেতরে নিখুঁতভাবে বসানো থাকে এলইডি লাইট। ২০১৩ সালে ক্রিকেটে প্রথম এরকম উইকেট ব্যবহারে দর্শকদের বাড়তি উত্তেজনা লক্ষ্য করা যায়। দুই ব্রিটিশ সাংবাদিক হ্যারি ল ও হান্না সান্ডার জানিয়েছেন কিভাবে কাজ করে স্টাম্প এবং বেলসে এই এলইডি প্রযুক্তি- ক্রিকেটের গতানুগতিক নিয়ম অনুযায়ী, বল স্টাম্পে লেগে বেল স্থানচ্যুত হলেই তা আউট হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু বিশ্ব ক্রিকেটে এমনও নজির দেখা গেছে যেখানে বল স্টাম্পে লেগেছে তবে বেল স্থানচ্যুত হয়নি, বলের গতির কারণে। সুতরাং এটি আউট না নিয়ম অনুযায়ী। তবে আধুনিক এলইডি ফ্লাস লাইট যুক্ত বেলস ও উইকেটে আর এ সুযোগ থাকেনি। বল স্টাম্পে লাগা মাত্রই সিগনাল দিয়ে দেয়, অর্থাৎ লাল আলো জ্বলে যাবে। এর মানে আউট। ক্রিকেটে আধুনিক এই প্রযুক্তি জিং উইকেট সিস্টেম নামে পরিচিত। স্টাম্প এবং বেলস জ্বলে উঠবে বল লাগা মাত্রই। বেল দুটিতে অল্প মাত্রায় ব্যাটারির পাওয়ার যুক্ত থাকে। স্টাম্প ও বেলস দুটিতেই এক ধরনের মাইক্রো প্রসেসর যুক্ত থাকে যা বল লাগার সঙ্গে সঙ্গে সঙ্কেত দেয় এবং এক ধরনের কম্পন হয়। প্রথমে বেলস জ্বলে ওঠে এবং এই বেল থেকে রেডিও সিগনাল যায় স্টাম্পে। এরপর স্টাম্প জ্বলে ওঠে। ক্রিকেটে আধুনিক এই প্রযুক্তির উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছে অস্ট্রেলিয়াতে। পরবর্তীতে এর উন্নয়ন করতে কয়েক হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার খরচ হয়েছে। এরপর অনেক তর্ক বিতর্কের পর কাঠের স্টাম্প ও বেলসের পরিবর্তে এখন আধুনিক স্টাম্প ও বেলস ব্যবহার হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, ক্রিকইনফো
×