ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের কাল থেকে নতুন পোলিও ভ্যাকসিন দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২২ এপ্রিল ২০১৬

শিশুদের কাল থেকে নতুন পোলিও ভ্যাকসিন দেয়া হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিশুদের জন্য দেয়া হবে আরেকটি নতুন পোলিও ভ্যাকসিন। আগামীকাল শনিবার থেকে এই নতুন ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে। নতুন এ ভ্যাকসিন আগের ট্রাইভ্যালেন্ট ওরাল পোলিও ভ্যাকসিনের বদলে দেয়া হবে। এটি টাইপ-১ ও টাইপ-৩ পোলিও নির্মূলে কাজ করবে। বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর (ইপিআই) কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইপিআইর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর পরিচালক হাবিব আবদুল্লা সোহেল, ইউনিসেফের টিকা (ইমিউনাইজেশন) বিশেষজ্ঞ জুসি মেরিনা অধিকারী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা তানভিরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে ইপিআইর প্রোগ্রাম ডিরেক্টর পরিচালক হাবিব আবদুল্লা সোহেল জানান, সারাবিশ্ব থেকে টাইপ-২ পোলিও নির্মূলের পর ট্রাইভ্যালেন্ট ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন নামে নতুন এ ভ্যাকসিন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দ্য পোলিও ইরাডিকেশন এ্যান্ড গেম স্ট্র্যাটেজিক প্লান ২০১৩-২০১৮ কর্ম পরিকল্পনায় ওপিভি ব্যবহারকারী দেশগুলোকে এ বছরের এপ্রিল থেকে নতুন এই টিকা দিতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশে আগামী ২৩ এপ্রিল নতুন টিকার যাত্রা শুরু হবে। নতুন এ ভ্যাকসিনও আগের নিয়মে দুই ফোঁটা করে শিশুদের খাওয়ানো হবে বলে জানান সোহেল। ১৯৯৯ সাল থেকে পোলিও টাইপ-২ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী না পাওয়ায় ‘গ্লোবাল সার্টিফিকেশন কমিশন’ গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্বকে টাইপ-২ পোলিওমুক্ত ঘোষণা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ কমিশন ২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বকে পোলিওমুক্ত করার লক্ষ্য নিয়েছে। এ সময়ের পর আর পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানোর ‘প্রয়োজন পড়বে না’ বলেও আশা প্রকাশ করেন সোহেল। তবে পৃথিবী থেকে রোগটি পুরোপুরি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচী চালানো হবে বলে জানিয়েছেন ইপিআইর প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ্ব থেকে একসঙ্গে পোলিও নির্মূল করতে হবে। অধিকাংশ দেশেই এখন এ রোগটির অস্তিত্ব নেই। তবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে রোগী পাওয়া যাওয়ায় এই কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, পোলিওমুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। তবে নতুন করে যাতে প্রাদুর্ভাব ঘটতে না পেরে সেজন্য পোলিও ভ্যাকসিন কার্যক্রম চালু রাখতে হবে। ২০০৬ সালের ২২ নবেম্বর এ দেশে সর্বশেষ পোলিও রোগী শনাক্ত হয়েছিল। তার পর থেকে সাত বছর বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি দেশকে নয়, একটি অঞ্চলকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করে। একটি দেশ পরপর তিন বছর পোলিওমুক্ত থাকার প্রয়োজন পড়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে (সিয়ারো) দেশ ১১টি। ভারতে পোলিও থাকায় এই অঞ্চল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পোলিওমুক্ত থাকার সনদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত ছিল। কিন্তু প্রতিবেশী এই দেশে গত তিন বছর কোন পোলিও রোগী পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে ২০০৬ সালের নবেম্বরের পর থেকে আর কোন পোলিও আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ২৫ বছর ধরে ভুটানে নতুন করে কোন পোলিও রোগী পাওয়া যায়নি। তবে ভারতে ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারিতে শেষ পোলিও রোগী চিহ্নিত হয়। স্বীকৃতির শর্ত হিসেবে পোলিও মুক্ত হিসেবে অন্তত তিন বছর পার করতে হবে। সেই বিবেচনায় ভারত তিন বছর অতিক্রম করেছে। আর তাই এবার দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়াকে পোলিওমুক্ত হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, পোলিও ভাইরাস দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ায়। এ ভাইরাসটি সাধারণত ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর অন্ত্রে বসবাস করে ও বংশবৃদ্ধি করে। পরে তা রক্তে প্রবেশ করে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শিশুটি পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত এ শিশুর মলের মাধ্যমে ভাইরাস বের হয়ে আসে। স্যুয়ারেজের পানির সঙ্গে মিশে দূষিত পানি পানকারী শিশুকে আক্রান্ত করে। সাধারণত স্যুয়ারেজের পানি বা শরীরের বাইরে এ ভাইরাস ২-৩ দিন বাঁচতে পারে। এ সময়ের মধ্যে কাউকে সংক্রমিত করতে না পারলে ভাইরাসটি মারা যায়। ভ্যাকসিন হিসেবে কিন্তু ব্যবহার করা হয় প্রোসেস করা পোলিও ভাইরাস, যেটি রোগ সৃষ্টি করতে পারে না। পোলিও টিকা খাওয়ানো হলে টিকার ভাইরাস শিশুর অন্ত্রে বংশবৃদ্ধি করে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসকে শরীর থেকে বের করে দিয়ে শিশুকে পোলিওমুক্ত করে। এটির ওপর ভিত্তি করে জাতীয় টিকা দিবস আয়োজন করা হয়। প্রতিবছর টিকা দিবসে ৫ বছরের কম বয়সী সব শিশুকে ২ ফোঁটা পোলিও টিকা খাওয়ানো হয়।
×