ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ সমর্থন ও নতুন সাক্ষীদের দিন ২৫ এপ্রিল

তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য ও জেরা নিয়ে বেগম জিয়ার আপত্তি নাকচ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৮ এপ্রিল ২০১৬

তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য ও জেরা নিয়ে বেগম জিয়ার আপত্তি নাকচ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য ও জেরা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আপত্তি নাকচ করে তার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ২৫ এপ্রিল নতুন তারিখ ঠিক করে দিয়েছে আদালত। রবিবার এ মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের ধার্য দিনে খালেদা জিয়া সকাল সাড়ে দশটায় রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে হাজির হন। খালেদার হাজিরাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে দলের সিনিয়র নেতারাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে আদালত ও আশপাশের এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চার শতাধিক সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিএনপি চেয়ারপার্সন আদালতে হাজির হলে শুরুতেই তার আইনজীবী মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর-রশিদের দেয়া জবানবন্দী নিয়ে আপত্তি তুলে নতুন করে সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন করেন। বিচারক আবু আহমেদ জমাদার ওই আবেদন নাকচ করে দিলে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী তদন্ত কর্মকর্তাকে নতুন করে জেরা করার অনুমতি চান। দ্বিতীয় আবেদনও খারিজ হয়ে গেলে খালেদার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন উত্তেজিত হয়ে আদালতের ওপর অনাস্থা জানিয়ে বক্তব্য দিতে থাকেন। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর বিচারক আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ২৫ এপ্রিল নতুন তারিখ ধার্য করেন। এ সময় দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তার আগের জবানবন্দী নিয়ে খালেদার আইনজীবীদের আপত্তিতে বলা হয়, তদন্তের কাগজ দেখে সাক্ষ্য দেয়ার নিয়ম না থাকলেও হারুন-অর-রশিদ সেটাই করেছেন। এই যুক্তিতে নতুন করে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের আবেদন করেন তারা। জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, মামলার এ পর্যায়ে এসে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য ও জেরা নিয়ে আপত্তি তোলার সুযোগ নেই। দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘এতদিন পরে এ কোন্ আবেদন? এ কীসের আলামত? এ মামলার বিচার পিছিয়ে দেয়ার জন্য আর কত পদ্ধতি অবলম্বন করবেন?’ অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরা চলছে। অসমাপ্ত জেরা ও নতুন সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের দিনও ধার্য করা হয়েছে আগামী ২৫ এপ্রিল। এর আগে গত ৭ এপ্রিল জামিনে থাকা তিন আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য থাকলেও খালেদা জিয়া হাজির না হয়ে আইনজীবীদের দিয়ে সময়ের আবেদন জানান। এ আবেদন মঞ্জুর করে ১৭ এপ্রিল দিন পুনর্নির্ধারণ করে তাকে হাজির থাকার আদেশ দেন আদালত। ওদিন জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে বক্তব্য দেন। তারা কোন সাফাই সাক্ষী দেবেন না এবং পরে লিখিত বক্তব্য দেবেন বলেও জানান। গত ৩১ মার্চ ৩২তম ও শেষ সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর রশিদকে আসামিপক্ষের জেরার মধ্য দিয়ে শেষ হয় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ॥ মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলার অপর আসামিরা হলেন খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ॥ মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
×