ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোরসালিন মিজান

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৮ মার্চ ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

চৈত্র চলছে। আজ শুক্রবার চতুর্থ দিন। এরই মাঝে গরমটা মোটামুটি টের পাওয়া যাচ্ছে। ক্রমশ তাপ বাড়ছে সূর্যের। ঘন ঘন ঘেমে উঠছে গা। প্রকৃতির এই পরিবর্তন বলে দিচ্ছে- বৈশাখ আসন্ন। আর বৈশাখ মানেই গ্রীষ্মকাল। কাঠফাটা রোদে মাটি পর্যন্ত চৌচির হয়ে যায়। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে জীবন। সেই আভাস এখন প্রকৃতিতে। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকার কিছুদিন আগের রূপ বদলে গেছে। সব বাসাবাড়িতে ফ্যানের সুইচ অন করা। এসি চলছে বিরামহীন। আধুনিক সময়ে প্রয়োজন ফুরায়নি হাতপাখারও। শহরের বিভিন্ন সড়কের পাশে এখন হাতপাখা বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। তৈরিতেও অনেকে ব্যস্ত। বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবার হাতপাখা তৈরির কাজ করে। গত মঙ্গলবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি তিনটি টিনের ঘর। সবকটিতেই তালপাতা দিয়ে পাখা তৈরির কাজ হচ্ছে। বেশ কয়েকজন মহিলা কাজ করছিলেন। পাখা তৈরি শেষে সেগুলো রাখা হচ্ছিল একটি গুদামঘরে। নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শীতের পর পরই তারা পাখা তৈরির কাজ শুরু করে দেন। এখন যেহেতু গরম, আরও যেহেতু বাড়বে, কাজ করতে হচ্ছে দিন-রাত। বিশেষ করে পহেলা বৈশাখের দিন প্রচুর পাখা বিক্রি হয়। তাই বর্ষবরণের দিনটি মাথায় রেখে কাজ করছেন বলে জানান তাঁরা। একটু আগেভাগেই বৈশাখ শুরু হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। বিপুল আয়োজনের কথা মাথায় রেখে দীর্ঘ হয় প্রস্তুতি। এবার সময়টা আরও বাড়িয়ে নেয়া হয়েছে। অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাজে নেমে গেছেন গত বুধবার থেকে। এদিন জয়নুল গ্যালারির সামনের খোলা জায়গায় ছবি এঁকে কর্মযজ্ঞের উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী কার্টুনিস্ট রণবী ও মনিরুল ইসলাম। এর পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা শুরু করেন ছবি আঁকার কাজ। বৃহস্পতিবারও এখানে অনুষদের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা ছবি আঁকেন। আজ শুক্রবার থেকে চলবে সরাচিত্র আঁকা। এভাবে ক্রমশ পরিধি বাড়বে কাজের। শিল্পী ও শিল্পপ্রেমীদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠবে প্রিয় প্রাঙ্গণ। শিল্পকর্ম বিক্রির টাকায় এখান থেকে আয়োজন করা হবে ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রার। বৃহস্পতিবার ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। আনন্দঘন দিনটি একই সঙ্গে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ‘শ্রেষ্ঠতম বাঙালী, শুদ্ধতম জাতীয়তাবাদী’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। অনুষ্ঠানে পথশিশুদের সঙ্গে নিয়ে বিশাল একটি কেক কাটা হয়। পথশিশুদের হাতে তুলে দেয়া হয় ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত লাল-সবুজ পতাকা। এ সময় মাইকে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ বেজে উঠলে আবেগঘন হয়ে ওঠে পরিবেশ। এর আগে ফোরামের সহ-সভাপতি আবু ওসমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনা করেন ফোরামের চেয়ারম্যান কেএম শফিউল্লাহ, ফোরামের মহাসচিব সাংবাদিক হারুন হাবীব প্রমুখ। একই দিন বাংলা একাডেমিতে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনানো হয়। ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনো’ শিরোনামে গত কয়েক বছর ধরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে আসছে।
×