ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান বিচারপতিকে টকশোতে হেয় করার চিন্তা করা হয়

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৩ মার্চ ২০১৬

প্রধান বিচারপতিকে টকশোতে হেয় করার চিন্তা করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ অবসরের পর রায় লেখা বা দ্রুত রায় লেখা নিয়ে যারা টকশো করেন তারা এর পক্ষে না বলে উল্টো প্রধান বিচারপতিকে হেয় করার চিন্তা করেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বিচারকদের হাতে লেখা সাক্ষ্যগ্রহণের পদ্ধতি বদলে সিলেটের ২০টি আদালতে ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিংয়ের উদ্বোধনকালে বুধবার দুপুরে এমন মন্তব্য করেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজকে কোন কোন বিচারকের কাছে, যারা অবসরে গেছেন, তাদের কাছে ৬/৭ বছরের পুরনো রায় পড়ে আছে। আমি যখন এ কথাগুলো (দ্রুত রায় দেয়া/অবসরের পর রায় না লেখা) বলি আমাদের সমাজের যারা ভাল কথা বলেন, যারা বিভিন্ন টকশোতে কথা বলেনÑ এ কথাগুলো তাদের কাছে ইয়ে হয় না। উল্টো তারা প্রধান বিচারপতিকে কী রকম যেন হেয় করা যায় এটা চিন্তা করেন।’ তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের দেশে মিডিয়া যথেষ্ট স্বাধীনতা লাভ করেছে। আজকে মিডিয়াতে অনেক কিছু দেখি। টকশোতে রাত হলে আলোচনা হয়। কিছু কিছু মিডিয়াতে, প্রিন্ট মিডিয়াতে বিচার বিভাগ নিয়ে আলোচনা হয়। আমি এ অনুষ্ঠানে সবাইকে বলতে চাই, আমাদের মিডিয়া বা লিবার্টি আছে। কিন্তু এটা সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ মতে। তবে এখানে আইনের বাধা নিষেধ সাপেক্ষে। বেশি লিবার্টি কিন্তু জনগণের মঙ্গল নিয়ে আসে না। এটার সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত।’ প্রধান বিচারপতি বিদেশীদের বিনিয়োগে আগ্রহী করতে দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিচার বিভাগেরও উন্নয়ন করতে হবে। অন্যথায়, বিদেশীরা এদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না। এজন্য বিচার ব্যবস্থায় ডিজিটালাইজেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশে প্রথমবারের মতো সিলেট জজ কোর্টের ৪০টি আদালতের মধ্যে ২০টিতে ডিজিটাল সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। যার ফলে বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের কষ্ট অনেকাংশে লাঘব হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি আরও বলেন, আমাদের সংবাদ মাধ্যম অত্যন্ত স্বাধীন। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার টকশো ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিচার বিভাগ নিয়েও আলোচনা হয়। তবে বিচার বিভাগ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সমালোচনায় এই স্বাধীনতার সীমালঙ্ঘন করা ঠিক হবে না। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা আরও বলেন, সংবিধানের আর্টিকেল অনুচ্ছেদ আমাদের আনলিমিটেড লিবার্টি দেয়নি। লিবার্টি ও আইনের একটা সংযোগ রয়েছে। এমন স্বাধীনতা প্রয়োগ করা যাবে না, যা অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে। তিনি ১৮৯২, ১৮৩৬ সালসহ পুরনো বিভিন্ন আইন বাদ দেয়া ও যুগোপযোগী আইন সংযোজনের জন্য উপস্থিত আইনমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্কুল-কলেজের এমপিও ভুক্তি ও বাতিল, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফিশারিজ, বালু ও জল মহাল ইজারাসহ বেশ কিছু বিষয়ে কোন আইন নেই। কেবল সার্কুলারের মাধ্যমে এগুলো হয়ে থাকে। যে কারণে লিটিগেশনের কারণে আপীল বিভাগে প্রায় ৬০ ভাগ মামলা হয়ে থাকে। তাই এখন সময় এসেছে এ বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। নতুন যুগোপযোগী আইন করতে হবে। এতে বিচার বিভাগের উপর চাপ অনেকাংশে হ্রাস পাবে। বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে। দেশের এখনও ৩০ লাখ মামলাজট রয়েছে জানিয়ে প্রধান বিচাপতি বলেন, আমাদের মামলাজট কবে শেষ হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে, যেভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ ও বিচারপ্রক্রিয়া আধুনিকায়ন হচ্ছে, এতে আস্তে আস্তে এর সংখ্যা কমে আসবে। আইনজীবী, সুশীল সমাজ ও রাজনীতিবিদদের সহযোগিতা ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না। আমেরিকার গণতন্ত্রের উদাহরণ দিয়ে এসকে সিনহা আরও বলেন, যার কাছে ডলার আছে, তার কাছে গণতন্ত্র। আমাদের দেশেও গণতন্ত্র কিছু সুবিধাভোগী মহলের কাছে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবী মহলকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিচার বিভাগে ডিজিটালইজেশন প্রক্রিয়ায় ইউএনডিপি’র সহযোগিতার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। সিলেট জেলা ও দায়রা জজ মনির আহমদ পাটওয়ারির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এমপি, সুপ্রীমকোর্টের এ্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারক বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক এমপি, ইউএনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধি রোবার্ট ওয়াটকিনস। আরও বক্তব্য রাখেন সিলেটের পিপি মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, পিপি খাদেমুল মিল্লাত মোঃ জালাল, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সমিউল আলম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. একে আবদুল মোমেন, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেবুন্নেছা হক প্রমুখ।
×