ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মূল : মাইকেল লীগকেই;###;সূত্র : এপি

গুগলের সঙ্গে ফেসবুকের ব্যবধান কমছে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

গুগলের সঙ্গে ফেসবুকের ব্যবধান কমছে

ফেসবুক এখন কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে পদার্পণ করতে উদ্যত হয়েছে। ফলে তার প্রসারও ঘটছে অবিশ্বাস্য গতিতে। এটি এখন ইন্টারনেটের সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানি গুগলকে চ্যালেঞ্জ করার মতো অধিকতর ভাল অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। অতি সম্প্রতি প্রকাশিত ফেসবুকের চতুর্থ প্রান্তিক রিপোর্টে কোম্পানির এই বিস্ময়কর অগ্রযাত্রার সর্বশেষ চিত্রটা ফুটে উঠেছে। রিপোর্টে এই প্রথমবারের মতো দেখানো হয়েছে যে ফেসবুকের ত্রৈমাসিক আয় ৫শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। নিষ্প্রভ হয়ে পড়া ইন্টারনেট তারকা ইয়াহু সায়া বছরে যা আয় করে এটা তার চেয়েও বেশি। ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কের এই কোম্পানি তার নিজের সার্ভিস ছাড়াও ভার্চুয়্যাল রিয়েলিটি কৃত্রিম বুদ্ধি, বিশ্বের প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়া এবং মোবাইল এ্যান্ড নেটওয়ার্ক সার্ভিসের পিছনে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করা সত্ত্বেও কোম্পানির আয় দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে ১৫৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই সফল্যের ফলে ফেসবুকের শোয়ারের দাম ১১.৩৭ ডলার অর্থাৎ ১২ শতাংশ বেড়ে ১০৫.৮২ ডলারে পৌঁছেছে। রাজস্ব আয়ের দিক দিয়ে গুগল ফেসবুকের চেয়ে এখনও তিন গুণ বড়। তবে ফেসবুক তার নেশাকর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এ্যাপে মোবাইল বিজ্ঞাপন বিক্রি আরও বাড়িয়ে দিয়ে উভয়ের মধ্যে এই ব্যবধান কমিয়ে আনছে। তাছাড়া তার হালফ্যাশনের ইনস্টাগ্রাম সার্ভিস ও দ্রুত প্রসারমান ভিডিও লাইব্রেরি থেকে রাজস্ব আহরণ সবে শুরু করেছে। এবারের বসন্তে যাত্রা শুরু হয়েছে ওকুলাস রিফট্ হেডসেটের। এটি হল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিরও অংশ যা ২০১৪ সালে ২০০ কোটি ডলারে কিনে নিয়েছিল এই হেড সেট আরেক আকর্ষণীয় বাজার খুলে দিতে পারে গুগল এখন আরও সংখ্যক ভার্চুয়াল রিয়েলিটি স্পেশালিস্ট সংগ্রহ। এই বিশেষ ক্ষেত্রে গুগল যে ফেসবুকের সঙ্গে পাল্লা দেয়ার চেষ্টা করছে এটা তারই লক্ষণ। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং হলো ফেসবুকের ভিত্তি। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে এই সার্ভিস আরও ৪ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক সংগ্রহ করেছে। এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৯ কোটি। বলাই বাহুল্য ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ কোম্পানির অগ্রগতি ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে যথেষ্ট উৎফুল্ল। গুগল এখন সম্প্রতি গঠিত এলফাবেট ইনকর্পোরেটেডের অংশ। গুগলেরও প্রসার ও সমৃদ্ধি ঘটে চলেছে। এই সার্চ ইঞ্জিন, এর ইউটিউব ভিডিও সাইট এবং এর মোবাইল ফোনের অনড্রয়েড সফ্টওয়্যার ব্যবহারকারীর সংখ্যা একশ’ কোটিরও বেশি। তাই ফেসবুক অচিরেই যে কোন সময় গুগলকে টপকে যেতে পারে তেমন সম্ভাবনা নেই। বিশ্বের প্রধানতম ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন দ্বারা চালিত গুগল এখনও ব্যাপক পরিসরে। বেশিরভাগ ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বিক্রি করে থাকে। এই বিক্রির পরিমাণ আরও কতখানি বেশি হবে তা জানা যাবে এলাফাবেটের চতুর্থ প্রান্তিকের আয় প্রকাশ পাবার পর। এলফাবেট আশা করছে এ্যাডের কমিশন বাদ দেয়ার পর এই আয় দাঁড়াবে প্রায় ১৭০০ কোটি ডলার। একই প্রান্তিকে ফেসবুকের যা আয় হয়েছিল এটা তার প্রায় তিন গুণ। তবে এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে ফেসবুকের বয়স হয়েছে এখন ১২ বছর এবং প্রতিষ্ঠানটি তার শেষ প্রান্তিকে আয় করেছে ৫৮০ কোট ডলার। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে অস্তিত্বের ঐ একই পর্যায়ে গুগলের নিট আয় ছিল ৫৫০ কোটি ডলার। তার চেয়েও বড় কথা তুলনামূলক পর্যায়ে গুগলের আয় যত দ্রুত অর্জিত হচ্ছিল ফেসবুকের আয় তার চেয়েও দ্রুত অর্জিত হচ্ছে। বিগত প্রান্তিকে ফেসবুকের আয় এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ৫২ শতাংশ বেড়েছে। ১২ বছর বয়সে পদার্পণ করার পর গুগলের ত্রৈমাসিক নিট আয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেড়েছিল। ফেসবুকের অগ্রগতির আরও একটি লক্ষণ আছে। ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বাজারে ফেসবুকের ভাগ ২০১৪ সালের ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে গত বছর সারা বিশ্বে হয়েছে ১০ শতাংশ। অন্যদিকে গুগলের ভাগ ২০১৪ সালের ৩২ শতাংশ থেকে কমে ৩০ শতাংশ হয়েছে। এইভাবে ফেসবুক নানা ধরনের ব্যবসায়কে নাড়া দিয়েছে এবং মানুষের যোগাযোগের উপায় সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। ফেসবুক যে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে গুগল তা নাকচ করতে চায় না। ২০০৪ সালে প্রথম আত্ম প্রকাশ করার পর গুগল আকার আয়তনে ইয়াহুর চেয়েও ছোট ছিল। কিন্তু ইয়াহুকে টপকে যেতে গুগলের বেশি সময় লাগেনি। অংশত এর কারণ হলো ইয়াহু সকল ক্ষেত্রের ওপর নজর দিয়েছিল অথচ সার্চ এ্যাডভারটাইজিংয়ের মতো লাভজনক ব্যবসা উপেক্ষা করেছিল। পক্ষান্তরে গুগল তার সার্চ ব্যবসা রক্ষার ব্যাপারে সতর্ক এবং ইউটিউব, এনড্রয়েড এবং জি মেইল ও ক্রোম ব্রাউজারের মতো অন্যান্য জনপ্রিয় পণ্যের বিকাশ ঘটিয়ে চলেছে। বিনিয়োগকারীরা দুই কোম্পানির ওপরই বাজি ধরছে। ফেসবুকের শেয়ারের দাম গত বছর বাড়তে বাড়তে ৩৪ শতাংশে উঠে। অন্যদিকে এলাফাবেটের (গুল) শেয়ার দর বেড়ে ৪৭ শতাংশে দাঁড়ায়। কেউ কেউ ভাবছে বাজার নিয়ে এই দুই কোম্পানির লড়াইয়ে ফেসবুক যদি জিতে তাহলে কি গুগল হেরে যাবে? এই প্রশ্নের সুন্দর উত্তর দিয়েছেন এক মেয়ার বিশ্লেষক। তিনি বলেন, আপাতত দুই উভয় কোম্পানিরই ভয়ে হতে পারে। কারণ এরা হচ্ছে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের জগতে দুই বড় দানব।
×