ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলে গেল শ্রমবাজার ১৫ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

খুলে গেল শ্রমবাজার ১৫ লাখ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বেসরকারী উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বিআরএ)’ কর্মী পাঠাতে পারবে। বৃহস্পতিবার ঢাকা সফররত মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাঁতোশ্রী রিচার্ড রায়ট আনক জাইম এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি চুক্তিতে সই করেন। প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের যারা ফেয়ার (স্বচ্ছ) রিক্রুটিং এজেন্সি, তারাই লোক পাঠাবে। আর এদের সহায়তা দেবে বিআরএ। আর যে সব কর্মী পাঠানো হবে, তাদেরও ক্লিন ইমেজের হতে হবে। কোন ক্রিমিনাল রেকর্ডধারীকে মালয়েশিয়ায় প্রশ্র্রয় দেয়া হবে না। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই লোক পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করা হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিচার্ড রায়ট বলেন, সবেমাত্র চুক্তি সই হলো। এরপর কাজ করতে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছুুরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। কর্মীর ন্যূনতম মজুরির বিষয়ে তিনি বলেন, এর আগে জিটুজি চুক্তিতে কর্মীর ন্যূনতম মজুরি ছিল ৮শ’ থেকে ৯শ’ রিঙ্গিত। নতুন চুক্তিতেও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী বেতন নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে কোন বৈষম্য করা হবে না। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, আজ থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলো। বহু দেন দরবারের পর অবশেষে কাক্সিক্ষত ফল আসল। জিটুজিতে (সরকার থেকে সরকার) ৫ বছরে যেখানে ৫ লাখ কর্মী যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে জিটুজি প্লাসে ৩ বছরে যাবে ১৫ লাখ বাংলাদেশী। পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে বিশ্বমানের তথ্যপ্রযুক্তি। মালয়েশিয়ায় বড় পরিসরে কর্মী পাঠাতে ‘জিটুজি প্লাস’ সমঝোতা স্মারকে বলা হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী দেশটিতে কনস্ট্রাকশন, সার্ভিস, প্লান্টেশন, এগ্রিকালচার এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে আগামী ৩ বছরে ১৫ লাখ কর্মী যাবে। রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এবং মালয়েশিয়ার পক্ষে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী দঁাঁতোশ্রী রিচার্ড রায়ট আনক জাইম চুক্তিতে সই করেন। এ সময় ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তির শর্ত তুলে ধরে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ‘নিয়োগকর্তা ও কর্মীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিপত্র মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন সত্যায়ন করবে। এ ক্ষেত্রে কর্মী প্রতিস্থাপনের সুযোগ থাকবে না। কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়ার কোন দুর্বলতা ও অভিযোগ থাকলে দু’দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব বেগম শামসুন নাহার, কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলামসহ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা এবং মালয়েশিয়ার পক্ষে সে দেশের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল (পলিসি এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল) মোহাম্মদ সাহার দারুসমান, শ্রম বিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ জেফরি বিন জোয়াকিম, আন্ডার সেক্রেটারি (লেবার পলিসি ডিভিশন) বেটি হাসান, মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কর্মকর্তা রবার্ট দাপান, এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি (লেবার অব পলিসি ডিভিশন) সতিশ শ্রীনিভাসান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি (ফরেন ওয়ার্কার্স ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন) মোহাম্মদ জামরি বিন মাত জাইন এবং ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত নূর আশিকান বিনতি মোহাম্মদ তিয়াব চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। আগামী ৫ বছরের জন্য চুক্তিটি সই হয়েছে। পরবর্তীতে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানানো হয়, কর্মী যাবে ৩ বছরের চুক্তিতেÑযা হবে নবায়ন যোগ্য। এরপর আরও একবছর কাজ নবায়নের সুযোগ পাবে কর্মীরা। কর্মীর একমুখী বিমান ভাড়া ও থাকা-খাওয়ার খরচ নিয়োগ দাতা প্রতিষ্ঠান বহন করবে। আর ভিসা, মেডিক্যালসহ অন্য খরচ বহন করবেন কর্মী নিজে। মালয়েশিয়া সরকার তাদের প্রকৃত কোটার তথ্য অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিএমইটির ওয়েব পোর্টালে পাঠাবে। আর বাংলাদেশ সরকার যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা মালয়েশিয়া সরকারের অনলাইন সিস্টেমে পাঠাবে। ওই তালিকা থেকেই এজেন্সি নির্বাচন করা হবে। সরকার নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী সংগ্রহ, কর্মীদের বায়োমেট্রিক ইমেজ, মেডিকেল, নিরাপত্তা যাচাই, চুক্তি সম্পাদন, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রশিক্ষণ ও বহির্গমন কাজে সহায়তা করবে। নতুন পদ্ধতিতে কর্মীদের বেতন হবে কমপক্ষে ৯শ’ রিঙ্গিত এবং সাবা ও সারাওয়াক প্রদেশের জন্য ৮শ’ রিঙ্গিত, যা সরাসরি কর্মীর ব্যাংক এ্যাকাউন্টে জমা হবে। কর্মীর কাগজপত্র প্রসেস করবে মালয়েশিয়া। ডিমান্ড লেটার পাবেন বিআরএর সদস্যরা। এরপর তা জমা দিতে হবে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনে। সেখানকার কর্মকর্তারা কর্মীর ভবিষ্যত কর্মক্ষেত্র সরেজমিনে দেখবেন। সন্তুষ্ট হলে চাহিদাপত্রগুলো সত্যায়ন করবেন। পরে তা জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোয় (বিএমইটি) পাঠালে ছাড়পত্র ইস্যু করা হবে। এভাবেই স্বল্প সময়ে কয়েক ধাপ অনুসরণ করেই লোক পাঠানো হবে। নতুন করে নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। কারণ আগেই অনলাইনে নিবন্ধিত রয়েছে ১২ লাখেরও বেশি কর্মী। মালয়েশিয়া সরকারের চাহিদা পূরণ করতে বহির্গমন পূর্ববর্তী প্রশিক্ষণের মেয়াদ কমিয়ে আনা হতে পারে। দেশের ৭১টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে (টিটিসি) প্রস্তত থাকতে বলেছে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। মালয়েশিয়া সরকার চাইলে প্রতিটি টিটিসি থেকে আড়াই শ’ জন করে কর্মীদের ১০ দিনের প্রশিক্ষণ দিলে ১৫ দিনে ১৫ হাজার কর্মী স্বল্প প্রশিক্ষিত করা সম্ভব, আর যদি বিকেলে আরেকটা শিফট চালু করা যায় তবে মাসে ৬০ হাজার কর্মী প্রশিক্ষিত করা যাবে বলে জানিয়েছে বিএমইটি।
×