বিভাষ বাড়ৈ ॥ জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই পাস হতে যাচ্ছে প্রতীক্ষিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ আইন। বিশেষায়িত এই ইউনিভার্সিটি হবে দেশে এ ধরনের প্রথম উচ্চ শিক্ষাঙ্গন। আইসিটি শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষের মাধ্যমে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করাই এ ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য। যেখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদান এবং তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিষয়ের ওপর গবেষণা হবে। এছাড়া প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত সকল টেকনোলজি নিয়েও হবে পাঠদান ও গবেষণা। এদিকে বিশেষায়িত এই ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস স্থাপনের জমি বরাদ্দ নিয়ে কিছুটা জটিলতায় পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ নতুন এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, কাজ সুন্দরভাবে এগোচ্ছে। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই পাস করা হবে প্রতীক্ষিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ আইন। আমরা আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যেই ইউনিভার্সিটি আমরা করতে পারব। ক্যাম্পাসের জমির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, দু-একদিনের মধ্যেই আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে হাইটেক পার্কের জমিতে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হলেও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ জমি দিতে পারছে না বলে জানানোর পর কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এরপর এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সমঝোতার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে আজ দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বসবে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা। এ সভাতেই গাজীপুরে হাইটেক পার্কেও জমিতে অথবা অন্য কোথাও জমি বরাদ্দের বিষয়ে চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে হাইটেক পার্কের জমিতে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন। হাইটেক পার্কের জমিতে ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি স্থাপনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও সেখানকার কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়েছে। তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের জন্য অধিকৃত সাড়ে চারশ’ একর জমির মধ্যে আড়াইশ’ একর জমিতে পার্ক স্থাপন করে বাকি জমি ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিকে দেয়ার কথা ছিল। ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নের পাশাপাশি হাইটেক পার্কে যেন কাজের সুবিধা পায় সেজন্য সেখানে স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছিল সরকার। কিন্তু নিজেদের জন্য আরও ৯১ একর জমি চেয়েছে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সেখানকার জমিতে ইউনিভার্সিটি স্থাপনেও আপত্তি জানায় তারা।
এর আগে গত বছরের ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি আইনের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এর আগে মন্ত্রিসভা ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিছু অনুশাসন ও পর্যবেক্ষণসহ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি খসড়া আইনে নীতিগত অনুমোদন দেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, আইসিটি শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষের মাধ্যমে উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করাই এই ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য।
বিশেষায়িত এ ইউনির্ভার্সিটির শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে জানা গেছে, ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিতে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় পাঠদান এবং তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক বিষয়ের ওপর গবেষণার সুযোগ থাকবে। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত ডিজিটাল টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, এ্যাডভান্সড টেকনোলজি নিয়ে পাঠদান ও গবেষণার সুযোগও পাবেন ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বৃত্তি ও ভাতাপ্রাপ্ত হবেন। এই ইউনিভার্সিটি হবে সম্পূর্ণ আবাসিক।
দেশী-বিদেশী শিক্ষক-গবেষকদের আকৃষ্ট করতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, শিক্ষক ও গবেষকদের জন্য এই ইউনিভার্সিটির একটি স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো থাকবে বলেও বলা হচ্ছে। ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষকের সর্বনিম্ন পদ হবে পিএইচডি অথবা সমমান ডিগ্রীধারীর সহকারী অধ্যাপক। একটি সার্চ কমিটি অভিজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তিনজন শিক্ষাবিদ নিয়ে উপাচার্য প্যানেল তৈরি করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠাবে। রাষ্ট্রপতি তাদের মধ্য থেকে একজনকে উপাচার্য নিয়োগ দেবেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: