ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পটিয়ায় বোরো চাষ বন্ধ ॥ পরিবেশ অধিদফতরের বিরুদ্ধে অভিযাগ

বিষাক্ত বর্জ্যে কয়েক শ’ কৃষকের কান্না

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

বিষাক্ত বর্জ্যে কয়েক শ’ কৃষকের কান্না

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, ২৩ জানুয়ারি ॥ শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য খালে পড়ে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নে সার্জেন্ট মহি আলম খালের পানি দুর্গন্ধময় ও দূষিত হয়ে উঠেছে। বিষাক্ত পানির কারণে চলতি মৌসুমে তিন শ’ একরের চেয়ে বেশি ধানী জমিতে এবার বোরো চাষাবাদ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকেয়া পারভীনকে লিখিতভাবে জানানোর পরও তিনি কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি। ফলে খালের পানি দূষিত ও দুর্গন্ধময় হয়ে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে পরিবেশ অধিদফতর ও উপজেলা প্রশাসন চুপ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী শিল্প মালিকরা পরিবেশ অধিদফতরের ঘুষখোর কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করেই শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য খালে ছেড়ে দিয়েছে। জোয়ার-ভাটার এই খালের পানি কয়েকটি শাখা খাল পেরিয়ে তা কর্ণফুলী নদীতে পড়ছে। বর্তমানে সার্জেন্ট মহি আলম খালের পানি বিষাক্ত নীলবর্ণ ধারণ করছে ও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। খালের আশপাশের বাড়িঘর, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও বহু মসজিদের মুসল্লিরা নামাজ পর্যন্ত আদায় করতে পারছেন না। কৃষকদের অভিযোগ ও সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কৃষকের কথা বিবেচনা করে উপজেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন খান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আরাকান মহাসড়কের পাশে জঙ্গলখাইন এলাকায় শহীদ সার্জেন্ট মহি আলম নামে খালটি খনন করেন। এই খালের পানি দিয়ে উপজেলার উজিরপুর, নাইখাইন, গৈড়লা, এয়াকুবদ-ী, তিয়ারকুল, উজিরপুর (পৌরসভার অংশ), ঊনাইনপুরা ও পৌরসভার আল্লাই এলাকার কয়েক শ’ কৃষক ধানী জমিতে প্রতি মৌসুমে চাষাবাদ করে থাকেন। কৃষকদের অভিযোগ, মহাসড়কের পাশে পটিয়া শাহগদী মার্কেট এলাকায় শাহ আমানত নিটিং এ্যান্ড ডাইং ও জঙ্গলখাইন কৃষি উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখে গড়ে ওঠা ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টসের বিষাক্ত বর্জ্য খালে ছেড়ে দেয়ার কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ও চাষাবাদ বন্ধ হয়ে পড়েছে। কৃষকরা গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ফরিদকে দিয়েছেন। জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন ফরিদ বলেন, শহীদ সার্জেন্ট মহি আলম খালটি পটিয়া ইন্দ্রপুল ও কয়েকটি শাখা খাল পেরিয়ে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। জোয়ার-ভাটার এই খালে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্য প্রবাহিত হওয়ায় এবার বোরো মৌসুমে এলাকার কয়েক শ’ কৃষক চাষাবাদ করতে পারছেন না। বিষয়টি তিনি গত উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন। ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টসের পটিয়ার ম্যানেজার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, তাদের কারখানায় কেমিক্যালজাতীয় কিছু ব্যবহার হয় না। এখানে শুধু মিষ্টি ও বিস্কুট বানানো হয়। তবে ল্যাট্রিনের কিছু পানি খালে পড়ে থাকে। তিনি দাবি করেন, অন্য কোন নিটিং ও ডাইংয়ের বিষাক্ত বর্জ্য খালে পড়ে পানি দূর্ষিত করে তুলেছে।
×