ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নদীশাসনে মাওয়ায় আজ জিও ব্যাগ ফেলা শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৫

নদীশাসনে মাওয়ায় আজ জিও ব্যাগ ফেলা শুরু

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ থেকে ॥ পদ্মা সেতুর উচ্চ পর্যায়ের এক্সপার্ট প্যানেল সোমবার বৈঠক করেছেন। ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বৈঠকে প্রকল্পটির সার্বিক বিষয় নিয়ে তারা গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। এই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, জাপান ও বাংলাদেশের ৯ বিশেষজ্ঞ অংশ নেন। মহান বিজয় দিবসে বুধবার বিশেষজ্ঞ দলটি মাওয়ায় সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন। আজ মঙ্গলবার মাওয়ায় নদীশাসনের জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হচ্ছে। বিগত বর্ষায় এই অংশে ব্যাপক ঘূর্ণি স্রোতে সাত নম্বর মূল পিলারের কাছে সুরঙ্গের তৈরি হয়েছিল। এই সুরঙ্গ রোধকল্পে এই জিও ব্যাক ফেলা হচ্ছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার দেশের সর্ববৃহত এই সেতুর মূল কাজের উদ্বোধনের পর কাজের গতি ক্রমেই বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা বলেছেন, মূল সেতু এবং নদীশাসন, এ্যাপ্রোচ রোড সব প্রকল্পেই কাজের সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে গতি বাড়ছে। পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম সোমবার সন্ধ্যায় এক্সপার্ট প্যানেলের বৈঠকের খবর নিশ্চিত করে বলেন, এটি রুটিন কাজ। সেতুটি কাজ চলছে পরিকল্পনা মাফিক। তাই তারা বৈঠক ছাড়াও সরেজমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন। বিদায়ী হেমন্তে সোমবার সূর্য বেশ খানিকটা সময় লুকিয়ে ছিল। তাই অপেক্ষাকৃত কুয়াচ্ছন্ন ভাব ছিল পদ্মা পাড়ে। এরই মধ্যে নানা বয়সী মানুষ ভিড় করে। পদ্মার সেতুর কাজের মহাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ ছাড়াও সেলফি তুলতে ভিড় পড়ে যায়। অনেকের পেস বুকে এখন পদ্মা সেতুর সেলফি সেখা যাবে। মাঝ পদ্মায় বড় বড় ক্রেন এবং নদীশাসনের ব্লক কিংবা পদ্মা সেতুর এ্যাপ্রোচ ঘিরে এই সেলফি তোলায় হিড়িক পড়ে যায়। আর প্রধানমন্ত্রীর ফলকের সেলফি নিয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরের মাওয়ায় আসছে নানা শ্রেণীর পর্যটক। এখানকার বেসরকারী পদ্মা সিসোর্ট এবং মাওয়া সিরোর্টে তাই পর্যটকদের ভিড় বেশ বেড়েছে। পর্যটকদের জায়গা দিয়ে কুলতে পারছে না। কুমারভোগ এলাকার বাসিন্দা পদ্মা পারের মোঃ কামরুজ্জামান জানান, ভোর হতেই যখন শিশির ভেজা পথ তখনই অনেক নারী-পুরুষকে দেখা যায় নদী পাড়ে হাঁটা হাঁটি করতে। তিন বলেন, দিন যত যাচ্ছে ততই পদ্মা সেতুর কাজের গতি যেমন বাড়ছে, মানুষের ভিড়ও বেড়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর মূল কাজের উদ্বোধনের পর এই ভিড় ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আর পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নে এই ব্যাপক অগ্রগতিতে দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ ছাড়াও পদ্মা পাড়ে মানুষ আনন্দে উদ্বেল। শিমুলিয়া ফেরি পার হয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা হওয়া মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের ভাগ্য বদলাচ্ছে, তাই খুশি তো লাগবেই। আমি কেন সব বাঙালীই খুশি। কারণ এমন একটা চ্যালেঞ্জ জয় করে ফেলে বাংলাদেশ তা কার না ভাল লাগবে। আর এই সেতু হলে পদ্মার ওপারের মানুষের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার দূরত্বের তফাত কমে যাবে। তাতে উৎপাদিত পণ্য বাজাত ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে। প্রথম শুরু হওয়া মূল পাইলিংয়ের কাজ এগিয়ে চলছে। জার্মানির তৈরি ২ হাজার ৪শ’ কিলোজুল ক্ষমতার হ্যামারের সোমবার পাইলের ড্রাইভিং চলছিল। যার শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল দূর থেকেই। পদ্মা সেতুতে কর্মরত এক প্রকৌশলী জানান, পদ্মা শুষ্ক মৌসুমে শান্ত থাকে এখনই কাজের পরিবেশ। তাই এই সময়েই দূত কাজগুলো এগিয়ে নিতে জোর দেয়া হচ্ছে। তাই দেশী-বিদেশী প্রকৌশলী ও শ্রমিক সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কাজ চলছে রাত-দিন। মূল সেতুর পাশাপাশি নদীশাসনে হুলস্থুল কাজ চলছে। দু’পাড়ে তিন সাইজের ব্লক তৈরি হচ্ছে। অত্যাধুনিক মেশিনে এই তৈরি হচ্ছে এই ব্লক। মাওয়ায় দুটি কাওড়াকান্দিতে একটি এবং মাঝিকান্দিতে (জাজিরা) চারটি মোট সাতটি মেশিনে প্রতি দিন ১৫ হাজার ব্লক তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্লক দিয়ে কিভাবে নদী বাঁধাই করা হবে তার নমুনাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। পদ্মার পাড়েই এই মডেল করা হয়েছে। একদিকে তৈরি হচ্ছে ব্লক। আরেক দিকে এই ব্লক ব্যবহারের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তাই আজ মঙ্গলবার থেকে মাওয়া প্রান্তে জিও ব্যাক ফেলা শুরু হবে। আর ১৯ জানুয়ারি থেকে সিসি ব্লক দিয়ে নদী তীর বাঁধাইয়ের কাজ শুরু হবে।
×