ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘আয়না বিবির পালা’ নারী জাগরণের কথা বলে

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫

‘আয়না বিবির পালা’ নারী জাগরণের কথা বলে

সাজু আহমেদ ॥ যুগের কালক্রমে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এখনও বদলায়নি। তবে সময়ের যাত্রাপথে শৃঙ্খল ভাঙা এমন অনেক নারী সমাজের নানা অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। তেমনি এক নারী আয়না বিবি। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সম্পদ ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে নাট্যধারা প্রযোজিত নাটক ‘আয়না বিবির পালা’র অন্যতম চরিত্র আয়না বিবি। যাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে নাটকে গল্প। লোকসাহিত্য সংকলন ময়মনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে দেশের নাট্যমঞ্চে যে কয়টি নাটক নির্মিত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম‘আয়না বিবির পালা’। নারী জাগরণের অন্যতম প্রযোজনা হিসেবে প্রথম মঞ্চায়নের পর থেকেই নাটকটি দর্শকমহলে ব্যাপক সাড়া পায়। এর নাট্যরূপ, নির্দেশনা দিয়েছেন রবিউল আলম। আয়না বিবি দূর যুগের লৌকিক গল্প বা কথন থেকে গ্রামীণ প্রেম বিশ্বাসের পটভূমিকায় মৌখিকভাবে রচিত। আয়না বিবি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার এক নিষ্ঠুর বলি। উজ্জ্বল সওদাগর এবং আয়না বিবির প্রেমের কাহিনী নাটকটির মূল উপজীব্য বিষয়। নাটকের গল্পে দেখা যায় সওদাগরের পুত্র উজ্জ্বল হালচাষ করে। কিন্তু তার শরীরের সওদাগরের রক্ত। একদিন সে সিদ্ধান্ত নেয় বাণিজ্যে যাবে। তার বাবা বাণিজ্যে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। সে কারণেই তার মা তাকে বাণিজ্যে যেতে দিতে চায় না। তবে কোন বাধাকে আমলে না নিয়ে উজ্জ্বল বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পথে সে ডাকাতের আক্রমণে পড়ে এবং একটি অপরিচিত গ্রামে আশ্রয় নেয়। সেই গ্রামে তার সঙ্গে দেখা হয়ে যায় আয়না বিবি নামে এক নারীর। সৌন্দর্য্য আর কথার মাধুর্যে আয়না বিবির প্রেমে পড়ে উজ্জ্বল। মায়ের নিষেধ সত্ত্বেও বিয়ে করে আয়নাকে। কিন্তু জাদুর প্রভাবে উজ্জ্বলের সঙ্গে আয়নার বিচ্ছেদ ঘটে। আয়নার শোকে পাগল হয়ে ফকির বেশে ঘুরে বেড়াতে থাকে উজ্জ্বল। এক সময় নিয়তি তাকে আয়নার কাছে নিয়ে যায়। ততদিনে আয়না আবার অন্য কারো ঘরণী। তা সত্ত্বেও আয়নাকে সে আবার পেতে চায়। কিন্ত রাজি হয় না আয়না। কারণ স্বামীর ছলনায় যে ছেড়েছিল একদা নিজের ঘর, সমাজ। পথহারা আয়না অনেক দিন পর পথ চিনে স্বামীর ঘরে ফিরে এসে দেখে তার স্বামী উজ্জ্বল পুনর্বার বিয়ে করেছে। নাটকে বর্ণিত সময়ে একাধিক পতœী গ্রহণ অনৈতিক বা অন্যায় না হলেও প্রশ্ন জাগে যে আয়নার জন্য উজ্জ্বল ফকিরী নিলো, জর্জরিত হলো, সেই আয়নাকে সমাজের কথায় পরিত্যাগ করার আগে কেন উজ্জ্বল বিদ্রোহী হয়ে ওঠেনি বা পারেনি দাঁড়াতে সমাজের বিপরীতে। কারণ কি সে নিজেও পুরুষ সমাজের অংশ বলে এবং সেও পুরুষতান্ত্রিকতার বাইরে নয় বলে। স্নেহময়ী শাশুড়ি আয়নাকে কোলে তুলে নিতে চায়, আঁচলে বেঁধে রাখতে চায় পরম মমতায়। শাশুড়ির স্নেহ-আদরে আয়না যেমন বিগলিত তেমনি উজ্জ্বলের দ্বিতীয় দার গ্রহণের ঘটনায় অত্যন্ত ক্লিষ্ট। আগেরবার আয়নাকে স্বামীর ছলনায় ঘর ছাড়তে হয়েছিল, এবার স্বেচ্ছায় ছাড়ল স্বামীগৃহ। এমনই কাহিনীর উপরে নির্মিত ‘আয়না বিবির পালা’। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন শামীমা আক্তার মুক্তা, লিটু সাখাওয়াত, সাগর আহমেদ রুবেল, শামসুন্নাহার বিউটি, সব্যসাচী চঞ্চল, লিওন ইমাম, হাফসা আক্তার, রহিসুল ইসলাম তমাল, দুখু সুমন, পলাশ মাহমুদ, ববি প্রমুখ। এছাড়া নাটকটির সঙ্গীত পরিচালনায় সব্যসাচী চঞ্চল, পোশাক পরিকল্পনায় শামীমা আক্তার মুক্তা, আলোক পরিকল্পনায় শাহাবুদ্দিন ও তানজিল আহমেদ। গল্প ও নির্মাণ বৈশিষ্টে নাটকটি নিয়মিত মঞ্চায়ন দাবি রাখে। দলসুত্রে জানা গেছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বুধবার নাটকটির বিশেষ প্রদর্শনী হবে।
×