ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৩য় দফায় ছিটমহলের কেউ ভারতে যায়নি

এ্যাটি জন্মিছি এ্যাটি মরমো ॥ হামরা ভরতত যাবার নই

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৮ নভেম্বর ২০১৫

এ্যাটি জন্মিছি এ্যাটি মরমো ॥ হামরা ভরতত যাবার নই

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ ভারতের নাগরিকত্ব নেয়া (ট্রাভেল পাসধারী) ৭৫ নাগরিক এখন আর ভারতে যেতে চায় না। এ কারণে বৃহস্পতিবার ৩য় দফায় তাদের ভারতে যাওয়ার কথা থাকলেও কেউ যায়নি। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বাগভা-র বিজিবি ক্যাম্পের কাছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ৯৬২ এর ১এস এর পাশ দিয়ে তাদের ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। সে মোতাবেক ছিল প্রশাসনের সকল প্রস্তুতি। কিন্তু বিকেল ৫টা পর্যন্ত কেউ আসেনি চেকপোস্টে। এর আগে ২৪ নবেম্বর দ্বিতীয় দফায় ৩০টি পরিবারে ১৫৭ জন এবং ২২ নবেম্বর প্রথম দফায় ১৫টি পরিবারের ৭২ জনসহ মোট ২২৯ জন ভারতে যায়। এর মধ্যে দাসিয়ারছড়ার ২০৫ এবং ছোট গাড়লঝোড়ার ২৪ নাগরিক। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন মাহমুদ জানান, বৃহস্পতিবার সকল আয়োজন থাকলেও কেউ ভারতে যায়নি। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় অন্তর্ভুক্ত ১২টি বিলুপ্ত ছিটমহলের জনসংখ্যা এক হাজার ৬৩০টি পরিবারের ৮ হাজার ১৩২ জন। এর মধ্যে ৭৩ পরিবারের ১৪৭ জন মুসলমান এবং ১৫৮ জন হিন্দুসহ মোট ৩০৫ জন ভারতে যাওয়ার মতামত দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ১৯ পরিবারের ৭০ জন এখন আর ভারতে যেতে চাচ্ছে না মর্মে আবেদন করেছেন। এদের অধিকাংশই হিন্দু পরিবার। একজনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রাভেল পাসধারী বাঁধন ও হাজরা বেগম পূর্ব থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন। অপর তিন জন কোন প্রকার যোগাযোগ রাখছেন না। ফলে ধারণা করা হচ্ছে এরা কেউ আর ভারতে যাবে না। তবে এরা ইচ্ছে করলে রিজার্ভ ডেট ২৯ নবেম্বর ভারতে যেতে পারবে। বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা খান জানান, নাড়ির টানে এসব মানুষ বাংলাদেশে থেকে যেতে চায়। মূলত বুঝতে না পেরে তারা ভারতে যাওয়ার আবেদন করে। বিশেষ করে ছিটমহল বিনিময়বিরোধী সংগঠন ইউনাইটেট কাউন্সিলের সভাপতি মিজানুর রহমানের প্ররোচনায় তারা আবেদন করে। এখন তারা ভুল বুঝতে পেরেছে। এ কারণে এখন তারা ভারতে যেতে চায় না। এমনকি মিজানুরের স্ত্রী আরজিনা ও শিশুপুত্র হিমালয়ও ভারতে যায়নি। কৃষ্ণকান্ত বর্মণ (৬৫) বলেন, ‘হামাক গুলা ভুল বুঝিয়া ভারতে যাওয়ার নাম নেকাইছে। হামরাও লোভত পড়ছিলং। এ্যালা ভারত যাবার চাই না। এ মাটি ছাড়ি যাবার নই।’ শ্রীমতি দেবজানির (৭০) এক চোখ অন্ধ। অন্য চোখেও ভাল দেখে না। তার সাফ জবাব ‘এ্যাটি জন্মিছি এ্যাটি মরমো। হামরা ভারতত যাবার নই। ওমরা গুলা জোর করি ভারত যাবার জন্য নাম নেকাইছে। এ্যালা বুঝছি ক্ষতি হইছে।’
×